Ajker Patrika

৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও পরামর্শ

ফারজানা রহমান তন্বী
৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও পরামর্শ

আপনি যদি বিসিএসের প্রথম ধাপ, অর্থাৎ প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে স্বপ্ন পূরণে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। এবার দ্বিতীয় ধাপ, অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পালা। বিসিএস লিখিত পরীক্ষাই নির্ধারণ করবে শেষ হাসি কে হাসবেন। তাই প্রতিটি বিষয়ে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষা কোন কোন বিষয়ের ওপর প্রশ্ন আসে, কত নম্বর থাকে—এসব মোটামুটি সবারই জানা। পরীক্ষা যেহেতু দরজায় কড়া নাড়ছে, কিছু কৌশলের কথা বলছি, যেগুলো নিজেও অনুসরণ করেছিলাম।

  • পরীক্ষার আগের এই সময়টাতে যা যা পড়েছেন, গুছিয়ে নিন। আমি নোট করে পড়তাম। তবে যদি আপনি নোট না করেন, নতুন করে চাপ নেওয়ার দরকার নেই।
  • বেশির ভাগ উত্তর এক বই থেকে পড়লে ভালো হয়। যদি আলাদা বই বা শিট থেকে উত্তর পড়ে থাকেন, তাহলে সেই বই বা শিটের ওপর ছোট কাগজে সূচিপত্রের মতো করে লিখে রাখতে পারেন। যেন আপনি বুঝতে পারেন এখান থেকে কী কী পড়েছেন। এতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে পাবেন।
  • সাম্প্রতিক কোনো বিষয় যদি নোট করতে চান, কিন্তু সময় স্বল্পতা থাকে, বিষয়টি পড়ে নোট করার বদলে নিজের মতো করে মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখতে পারেন।
  • চেষ্টা করবেন সব প্রশ্নের উত্তর করার। যদি টপিকটি একদমই অচেনা হয়, তাহলে সামান্য প্রাসঙ্গিকতা রেখে হলেও উত্তর করবেন।
  • পরীক্ষার মোট নির্ধারিত সময় থেকে ১০ মিনিট বাদ দিয়ে হিসাব করুন। অবশিষ্ট সময়কে মোট নম্বর দিয়ে ভাগ করুন। যেমন ২০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় ৪ ঘণ্টা বা ২৪০ মিনিট। ১০ মিনিট বাদ দিলে ২৩০ মিনিট থাকে। তাহলে প্রতি নম্বরের জন্য পাচ্ছেন ১.১৫ মিনিট। সুতরাং ৪ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরের জন্য পাবেন সাড়ে ৪ মিনিট। এর বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না।
  • প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখুন। যে প্রশ্নটির উত্তর ভালো পারেন, সেটি ভালো করে লিখুন। তবে অন্য প্রশ্নের উত্তরের জন্য বরাদ্দ সময় ব্যয় করে নয়।
  • বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রশ্নের শুরুতে খ্যাতিমান লেখকদের সম্পর্কে খানিকটা লিখতে পারেন। যেমন কোনো উপাধি বা ছদ্মনাম যদি জানা থাকে। আবার নামের পাশে জন্ম-মৃত্যু সালও লেখা যায়। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো রচনা থেকে প্রশ্ন এলে শুরু করতে পারেন এভাবে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) রচিত—এক অমর সৃষ্টি।
  • যেকোনো প্রশ্নের শুরু এবং শেষটা গোছানো রাখার চেষ্টা করবেন।
  • ইংরেজিতে পার্ট-এ-তে এক নম্বরে ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটির মান ৩। সুতরাং মোট ৩০ নম্বর। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অবশ্যই এক লাইনে শেষ করবেন না। দুই-তিন লাইনে লেখার চেষ্টা করবেন।
  • অনুবাদের ক্ষেত্রে লেখার মান বজায় রাখার চেষ্টা করুন। অনুবাদের ভাষা হবে সহজ ও প্রাঞ্জল, কিন্তু নান্দনিক। যেহেতু অনুবাদের ওপর বেশ ভালো নম্বর নির্ধারিত, তাই এর চর্চা নিয়মিত লিখে করতে পারেন।
  • নতুন প্রশ্নের উত্তর নতুন পাতা থেকে লেখার চেষ্টা করুন।
  • খুব বেশি ডেটা, চার্ট মুখস্থ করবেন না। তবে কিছু বিষয় যেগুলো সম্প্রতি চর্চিত, সেগুলো সম্পর্কিত কিছু ডেটা মুখস্থ করতে পারেন।
  • খাতা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে প্রতিবারই এমন কোনো না কোনো প্রশ্ন আসে, যেখানে বাংলাদেশের মানচিত্র প্রাসঙ্গিক। সে ক্ষেত্রে মানচিত্র দেওয়া যেতে পারে। তাই দ্রুততম সময়ে মানচিত্র আঁকার অভ্যাস থাকা ভালো।
  • আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতেও মোটামুটি কিছু টপিক আন্দাজ করা যায়, যেগুলো থেকে প্রশ্ন আসে। এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক মানচিত্র দেওয়া যেতে পারে।
  • অনেক সময় লেখার মাঝে দুই-একটি ডেটা দিয়ে থাকে। সেগুলো লেখার ভেতর না দিয়ে আলাদা প্যারা করে দেবেন। যেন পরীক্ষকের চোখে পড়ে।
  • পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকলে এর রেফারেন্স দিয়ে বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বাংলা ও ইংরেজি রচনায় অতিরিক্ত তথ্য সংযোজন করতে পারেন।
  • আমি যতটা সম্ভব ভিজ্যুয়াল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। যেন কোনো কিছু পরীক্ষককে খুঁজে বের করতে না হয়, এমনিতেই চোখে পড়ে।
  • এত লম্বা সময় লেখার অভ্যাস না থাকলে মডেল টেস্ট দিতে পারেন। এসে লেখার অভ্যাস হবে, গতি বাড়বে। আবার কত সময়ে আপনি কতটুকু লিখতে পারেন ধারণা পাবেন।
  • ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করুন। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের শরীর ও মনেরও যত্ন নিন। পর্যাপ্ত ঘুম, সময়মতো খাওয়া এবং কিছুটা বিনোদন আপনাকে আরও সতেজ রাখবে। পরিবার, বন্ধু, শিক্ষকদের সাহায্য, পরামর্শ এবং উৎসাহ আপনাকে এগিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করবে।

বিসিএসের পথ দীর্ঘ হলেও আপনি একা নন। আপনার মতো আরও অনেক প্রার্থী লক্ষ্য অর্জনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, একে অপরের কাছ থেকে শিখুন এবং উৎসাহিত করুন। বিশ্বাস করুন, প্রচেষ্টা চালিয়ে যান, আপনার লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে। সবার জন্য শুভকামনা।

লেখক: ফারজানা রহমান তন্বী, প্রশাসন ক্যাডার (সুপারিশপ্রাপ্ত) ৪১তম বিসিএস

গ্রন্থনা: এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত