Ajker Patrika

খুন করে জন্মদিনের উৎসব

পরাগ মাঝি, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ২০: ৪৯
খুন করে জন্মদিনের উৎসব

রাষ্ট্রশক্তির গহিনে চলে অন্তর্ঘাতের খেলা। সেই খেলায় ভর দিয়ে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। এই চক্রের পাঁকে পড়ে কেউ খুনি, কেউ ডাকাত, কেউ ধর্ষক ও লুটেরা হয়। মানবতার সেখানে কোনো ঠাঁই নেই, পাগলামিই হয়ে ওঠে মুখ্য। দুনিয়াজুড়ে বেড়ে ওঠা এমন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আজকের পত্রিকার এই সিরিজ প্রতিবেদন। তবে বলে রাখা ভালো, এটা কোনো মৌলিক রচনা নয়, সংকলনমাত্র। প্রকাশিত হয় প্রতি শুক্রবার দুপুরে, আজ তার দ্বিতীয় কিস্তি।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরের নাম করা আইনজীবী মেলভিন বেল্লির বসার ঘরে রাখা ফোনটি বেজেই চলেছে। এক-দুবার নয়, অনেকবার। কিন্তু আইনজীবী বাড়িতে নেই। তিনি ছিলেন ইউরোপ সফরে।

এতবার ফোন বাজার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন ধরলেন এক গৃহকর্মী। ফোনের ওপারে থাকা লোকটি বললেন, ‘জানো, আজ আমার জন্মদিন।’ গৃহকর্মী শুনে বললেন, ‘হ্যাপি বার্থ ডে।’ এবার লোকটি বললেন, ‘জানো আজ আমি কী করে জন্মদিন পালন করব?’ গৃহকর্মী আনন্দিত হয়ে বললেন, ‘বড় পার্টি?’ ফোনের লোকটি বললেন, ‘ওসব কিছুই না, আজ আমি একজনকে খুন করব, জন্মদিনের খুন।’ গৃহকর্মী আর কী বলবেন, ভাবতে পারছিলেন না। শুধু জানতে চাইলেন, ‘কে তুমি?’ লোকটি বললেন, ‘জোডিয়াক।’ এরপর ফোন রেখে দিলেন।

এ ঘটনা ছিল ১৯৬৯ সালের ২০ ডিসেম্বরের সন্ধ্যার। আর ফোন করা সেই লোকটি হলেন, বলে কয়ে খুন করে বেড়ানো পৃথিবীর দুর্ধর্ষতম সিরিয়াল কিলার জোডিয়াক। গত শতকের ’৬০ ও ’৭০-এর দশকে নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এই খুনি।

শুধু আইনজীবী বেল্লির বাসাই নয়, তখনকার দিনের প্রভাবশালী সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলসহ সব পত্রিকায় তিনি খুন করার বার্তা দিয়ে একের পর এক চিঠি লিখতেন। আবার নিজের নাম-পরিচয় এবং ধরা পড়ার সূত্র উল্লেখ করে চিঠি লিখতেন পুলিশের কাছেও। তবে এসব সূত্র লিখতেন ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সাংকেতিক ভাষায়, যার কোড আজ অবধি কেউ ভাঙতে পারেনি। তাই খুনিও অধরাই থেকে গেছেন।

জোডিয়াক কিলার তাঁর চিঠিতে নিজ হাতে ৩৭ জনকে খুন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। যদিও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাতটি নৃশংস খুনের ব্যাপারে একমত হয়েছিল। আর এই বিষয়ে তদন্ত সংস্থাগুলোর লুকোছাপা করারও প্রবণতা ছিল। কারণ, হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা যত বাড়ছিল, জোডিয়াক কিলারকে ধরার জন্য তাদের ওপর চাপও তত বাড়ছিল।

বেল্লির বাসায় ‘বার্থডে কল’ করা সেদিনের সেই জোডিয়াক তত দিনে বেশ কয়েকটি খুন করে ফেলেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আবিষ্কার করেছিল, বেল্লির বাসায় ফোন করার ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মদিনের দিনটিতেই প্রথম স্বীকৃত হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছিলেন জোডিয়াক। সেদিন রাতে তাঁর শিকার ছিলেন দুই কিশোর-কিশোরী। এর মধ্যে ছেলেটির বয়স ছিল ১৭ বছর আর ১৬-তে পা রেখেছিল মেয়েটি। তবে এই বয়সেই তারা একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। দুই-তিন সপ্তাহ আগেই একটি চার্চে পরিচয় হয়েছিল তাদের। সেই থেকে শুরু।

1ঘটনার দিন প্রথমবারের মতো ডেটিংয়ে বেরিয়েছিলেন ডেভিড আর বেটি। মায়ের র‍্যাম্বলার মডেলের স্টেশন ওয়াগন গাড়িটি সঙ্গে নিয়েছিলেন ডেভিড। গাড়ি যেহেতু আছে, প্রেমিকাকে নিয়ে শহরে আর থাকে কে? ডেভিডও তাই বেটিকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যালেজো শহরের বাইরে লেক হারম্যান রোডের লাভারস লেনে গিয়েছিল চুটিয়ে প্রেম করতে। প্রথম দিন বলেই হয়তো তাদের উত্তেজনা ছিল অনেক বেশি। কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না একে অপরকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছিল লাভারস লেনে।

রাত ১১টা পেরিয়ে গেলেও ওই এলাকাটিতে তাদের দেখতে পেয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ততক্ষণে নিরিবিলি হয়ে এসেছিল চারপাশ। তারপরই ঘটে সেই ঘটনাটি। গাড়ির ভেতরে ডেভিড আর বেটি যখন প্রেমে মত্ত তখনই তাদের দিকে এগিয়ে আসেন গাট্টাগোট্টা শরীরের এক ব্যক্তি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই জানালা দিয়ে খুব কাছ থেকে ডেভিডের মাথায় একটি গুলি ঢুকিয়ে দেন লোকটি। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেটি অবশ্য গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পেছন থেকে পরপর পাঁচটি গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করেন সেই আততায়ী।

পুলিশের তৈরি জোডিয়াক কিলারের স্কেচ। ছবি: দ্য ক্রনিকলমর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডটি যে জোডিয়াক করেছিলেন, সেই খবর জানা ছিল না কারও। হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত করেও খুনিকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে এই ঘটনার সাত মাস পর ১৯৬৯ সালের ১ আগস্ট একটি রহস্যময় চিঠি পায় সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল। এই চিঠিতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় আগের একটি খুনের দায় স্বীকার করেন খুনি নিজেই। চিঠিতে তিনি সাত মাস আগে সংঘটিত ডেভিড ও বেটির হত্যাকাণ্ডেরও সুনিপুণ বিবরণ দেন।

যে খুনের বর্ণনা দিয়ে জোডিয়াক প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমকে চিঠি লিখেছিলেন, সেটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ৪ জুলাই। সেদিনও তাঁর শিকার ছিলেন এক প্রেমিক যুগল। তবে তাঁদের সম্পর্কটি ছিল পরকীয়ার। ২২ বছরের বিবাহিত ডারলিন আর তাঁর প্রেমিক ছিলেন ১৯ বছরের মাইকেল ম্যাগিউ। সাত মাস আগে যেখানে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল, তার মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরেই ভ্যালেজোর ব্লু রক স্প্রিং পার্কে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। এই জুটিও গাড়ির ভেতরেই অবস্থান করছিলেন এবং যথারীতি রাত গভীর হয়ে আসছিল। এমনই একসময় তাঁদের গাড়িটির পেছনে এসে দাঁড়ায় আরেকটি গাড়ি। হেডলাইট জ্বালানো অবস্থায়ই ওই গাড়ি থেকে একটি ফ্ল্যাশ লাইট নিয়ে বেরিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। প্রেমিক যুগল ভেবেছিলেন, হয়তো কোনো পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসছেন তাঁদের দিকে। তাই পকেট থেকে আইডি কার্ড বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু লোকটি কাছে এসেই সোজা গুলি করে বসেন ম্যাগিউকে। পাশে বসা ডারলিনকেও পরপর কয়েকটি গুলি করেন তিনি। পরে নিজের গাড়িতে গিয়ে ম্যাগিউয়ের গোঙানোর আওয়াজ শুনে আবারও তাঁদের দিকে ফিরে আসেন লোকটি এবং দুজনকে আরও কয়েকটি গুলি করে চলে যান। এই ঘটনায় ডারলিন মারা গেলেও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন ম্যাগিউ। তাঁর কাছ থেকেই খুনির বাহ্যিক শরীর নিয়ে কিছু প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিল পুলিশ। খুনির কল পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছিল পুলিশ সদস্যরা। ম্যাগিউয়ে বর্ণনা অনুযায়ী, খুনি ছিলেন ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা। আর ভারী স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাঁর বয়স ৩০-এর মতো হবে।

আইনজীবী মেলভিন বেল্লি। ছবি: দ্য ক্রনিকলজোডিয়াকের অপরাধকে শুধু তাঁর নৃশংসতা দিয়েই চিহ্নিত করা হয় না। এসব খুনের বিষয়ে গণমাধ্যম আর পুলিশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের ঘটনাগুলোও ব্যাপকভাবে আলোচিত। ১৯৬৯ সালের ১ আগস্ট সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল, ভ্যালেজো টাইমস-হেরাল্ড এবং সান ফ্রান্সিসকো অ্যাক্সামিনার পত্রিকাকে পাঠানো তাঁর চিঠিগুলো ছিল প্রায় অভিন্ন। চিঠিগুলোতে হত্যার দায় স্বীকারের পাশাপাশি সাংকেতিক অক্ষর ব্যবহার করে তিনি যে নোট পাঠিয়েছিলেন, তার পাঠোদ্ধারের দাবি করেছিলেন এক অধ্যাপক দম্পতি। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাংকেতিক ভাষায় খুনি লিখেছিলেন, ‘আমি মানুষকে হত্যা করতে পছন্দ করি। কারণ, এটি অনেক মজার খেলা। এটি বনে শিকারের চেয়েও বেশি মজার। কারণ, মানুষ সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী।’

চিঠির শেষে বন্দুকের নিশানার একটি চিহ্নও এঁকে দিয়েছিলেন খুনি। এই চিহ্নটিকে জোডিয়াকের সাংকেতিক স্বাক্ষর হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশের নথি অনুযায়ী, জোডিয়াক তাঁর তৃতীয় হত্যাকাণ্ডটি ঘটান ১৯৬৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ব্যারিয়েসা লেকের পাড়ে শান্তিপূর্ণ বিকেল উপভোগ করতে গিয়েছিলেন তরুণ দম্পতি ব্রায়ান হার্টনেল এবং সেসেলিয়া শেপার্ড। কিন্তু জনবিরল সেই স্থানটিতে তাঁদের সামনে কালো হুডিযুক্ত পোশাক পরা এক লোক হাজির হন। হাতে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে তিনি দুজনকে বেঁধে ফেলেছিলেন। পরে ওই দম্পতিকে নির্মমভাবে একের পর এক ছুরিকাঘাত শুরু করেন ব্যক্তিটি। সেই যাত্রায়ও বেঁচে যান শুধু পুরুষটি, প্রাণ হারান তাঁর সঙ্গী সেসেলিয়া। ঘটনার পর তাঁদের গাড়িতে একটি বার্তা লিখে রেখে যান হত্যাকারী। সেই বার্তার নিচেই বন্দুকের নিশানার মতো সেই জোডিয়াক স্বাক্ষরও করেন।

বেটি লো জেনসেন ও ডেভিড ফ্যারাডে। ছবি: দ্য ক্রনিকলএই ঘটনার ১৪ দিনের মাথায় জোডিয়াক আরও একজনকে খুন করেন। তাঁর এবারের শিকার ছিলেন সান ফ্রান্সিসকোর ট্যাক্সিচালক পল স্টাইন। বলা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের সময়ই জোডিয়াককে ধরার খুব কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল পুলিশ। সেদিন শহরের প্রেসিডিয়ো হাইটের ম্যাপল স্ট্রিটে যাত্রীবেশে থাকা জোডিয়াক ট্যাক্সিচালক পল স্টাইনকে গুলি করে মানিব্যাগ, চাবি এবং শার্টের একটি অংশ ছিঁড়ে নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলসংলগ্ন একটি বাড়ি থেকে সেদিন তিন কিশোর এই খুনের বিষয়টি পুলিশকে ফোন করে জানায়। তবে তাদের দেওয়া তথ্য নথিভুক্ত করতে গিয়ে একটি ছোট্ট ভুল করে বসেন ফোন অপারেটর পুলিশ। অপরাধীর বাহ্যিক বর্ণনার তথ্যে তিনি শ্বেতাঙ্গর স্থানে কৃষ্ণাঙ্গ লিখে ফেলেন। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে খুনির বিষয়ে যখন তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছিল, ধারণা করা হয় তখন তাঁর সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন সন্দেহভাজন। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তাঁর প্রতি কোনো মনোযোগই দেননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিন দিন পর ১৪ অক্টোবর জোডিয়াকের আরও একটি চিঠি পাওয়া যায়। এই চিঠিতে তিনি জানান, ট্যাক্সিচালককে নিজের হাতেই খুন করেছেন। প্রমাণ হিসেবে রক্তমাখা শার্টের ছেঁড়া অংশও পাঠান তিনি।

দ্য ক্রনিক্রলের কাছে জোডিয়াক কিলারের পাঠানো নোট। ছবি: দ্য ক্রনিকলঘটনার এই পর্যায়ে এসে নিজের শ্রেষ্ঠত্বও দাবি করেন জোডিয়াক। পত্রিকায় পাঠানো চিঠির মাধ্যমে শহরের সব মানুষকে জোডিয়াক শব্দের আদ্যক্ষর ‘জেড’ চিহ্নিত বোতাম ব্যবহারের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি এটাও জানিয়ে দেন, এবার তাঁর শিকার হবে স্কুলের শিশুরা। বোমা মেরে স্কুল বাস উড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি। এই হুমকিগুলো শহরজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ব্যাপক অনুসন্ধানের পরও জোডিয়াক অধরাই থেকে যান। পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী তাঁর অনুসন্ধান করতে গিয়ে অসংখ্য সূত্রকে অনুসরণ করেছে। শত শত সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু কাউকেই নিশ্চিতভাবে জোডিয়াক হিসেবে সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন খুনের সূত্র দিয়ে তাঁর সর্বশেষ চিঠিটি পাওয়া গিয়েছিল ১৯৭৪ সালে।

জোডিয়াককে খুঁজতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য সন্দেহভাজন আবির্ভূত হয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাকে সন্দেহ করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন আর্থার লেই অ্যালেন নামে সাবেক এক স্কুলশিক্ষক। সহিংসতার অতীত রেকর্ড থাকা ছাড়াও ক্রিপ্টোগ্রাফি তথা সাংকেতিক অক্ষর ও শব্দের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। জোডিয়াক ব্র্যান্ডের একটি হাতঘড়িও ছিল তাঁর এবং একসময় তিনি নৌবাহিনীতেও ছিলেন, যেমনটি জোডিয়াক নিজেই দাবি করেছিলেন এক চিঠিতে। আরও একটি বিষয় হলো বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের কাছাকাছি অবস্থানেই বসবাস করতেন আর্থার লেই। তাঁর ওপর ব্যাপক নজরদারি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরও কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে অভিযুক্তও করা সম্ভব হয়নি।

জোডিয়াক কিলারের মামলাটি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর মধ্যে একটি। ধরা পড়া এড়াতে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা এবং নিরাপত্তাব্যবস্থাকে তাঁর চ্যালেঞ্জ জানানোর বিষয়টি আজও মানুষকে ভাবনার মধ্যে রেখেছে। জোডিয়াককে নিয়ে অসংখ্য বই, সিনেমা ও তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। এসব তত্ত্বে সম্ভাব্য সমাধানেরও অনেক সূত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তদন্তকারীদের নিশ্চিত করতে পারেনি। জোডিয়াক শেষ পর্যন্ত অধরাই থেকে গেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত