Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: গ্রেপ্তার-আতঙ্কে সন্ধ্যায় জনশূন্য জেলা শহর

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৫৫
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: গ্রেপ্তার-আতঙ্কে সন্ধ্যায় জনশূন্য জেলা শহর

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে দুজন নিহত, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আজ বুধবার পর্যন্ত ১৩টি মামলায় প্রায় ১১ হাজার অভিযুক্ত হলেও ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক থাকলেও মামলা ও অভিযুক্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় লোকজনের মধ্যে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে জেলা শহর। 

তবে পুলিশের দাবি, অকারণে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। 

পুলিশ বলছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় তিনটি পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে। এতে সদর থানায় মামলার সংখ্যা হলো ১১টি এবং বোদা থানায় মামলা হয়েছে দুটি। 

 ১৩টি মামলায় সব মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুজব ছড়ানোর মামলায় গত সোমবার পর্যন্ত পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি, তেঁতুলিয়া উপজেলার সাত মেড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে রাব্বি ইমনকে এবং গতকাল রাতে দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রহিমুল ইসলাম বুলবুল ও ঘটনার উসকানিদাতা হিসেবে আজ তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাছির উদ্দীনকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গঠিত যৌথ বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তার করে। 

এর আগে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় পঞ্চগড় শহরের দক্ষিণ রাজনগর মহল্লার নুর আজাদের ছেলে ইসমাইল হোসেন ঝানু ও তুলারডাঙ্গা এলাকার মো. আফছারের ছেলে মো. রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

ফাইল ছবিএদিকে যৌথ বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে শহরে মানুষের মধ্যে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যা হতেই শহর জনশূন্য হয়ে পড়ছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এবং আজ সন্ধ্যা থেকে শহরের তুলারডাঙ্গা, তেলিপাড়া, কামাতপাড়া, ইসলামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, এসব এলাকার রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে।

প্রায় জনশূন্য কামাতপাড়া মহল্লার পান দোকানদার মতিয়ার রহমান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শবে বরাত এবং গ্রেপ্তার-আতঙ্কসহ লোকজন বাড়ি থেকে কম বের হয়েছে। বের হলেও দু-একটি খরচ নিয়ে দ্রুত বাড়িতে চলে গেছে। এ জন্য অন্যদিন লোক সমাগম বেশি থাকলেও আজ রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়েছে। যা দু-একজন আছে, তারা মসজিদে ইবাদত করছেন।’ 

শহরতলির বলেয়াপাড়া এলাকার একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ রোববার রাতে প্রথমে আমার এক মামাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তাঁকে আবার পুলিশই বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। এ ঘটনা এলাকার অনেকেই জানেন।’ 

শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার বাসিন্দা স্টুডেন্ট টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আমিনার রহমান (৫০) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে কর্মচারীরা ভয়ে কোনো কাজই শেষ করতে পারছে না। প্রথম দুই দিন গন্ডগোলের কারণে সবার মতো আমারও দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আর শনিবার থেকে পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে সবাই সন্ধ্যা হতেই বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করে। বাজারের লোক কম দেখে আমিও কাজ শেষ না হলেও বাড়ি ফিরতে বাধা দেই না। কারণ, কোনো কিছু হলে তো তাদের পরিবারের কাছে, আমাকেই জবাব দিতে হবে।’ 

পঞ্চগড় সিনেমা হল রোডের গালা মাল দোকানি শহরের কামাতপাড়া মহল্লার আব্দুল খালেক (৫৫) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন আমার দোকান রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকে, কাস্টমারও থাকে। গত বৃহস্পতিবার থেকে নানা গন্ডগোলে এমনিতেই বিভিন্ন সময়ে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। দোকানের কমবয়সী তাঁর কর্মচারীটাও ভয়ে বাড়ি চলে যায়। রোববার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বাজারে লোকজনের আনাগোনা কমে গেছে। বিক্রিও কমে গেছে। অনেক কাস্টমারই বলছেন, ভাই মামলা নাকি অনেকগুলো হয়েছে, পুলিশও যাকে পাচ্ছে তাকেই নাকি ধরছে। এ জন্য বিপদের আশঙ্কায় সন্ধ্যার আগেই কাজ সেরে বাড়ি চলে যাই।’ এমন আতঙ্কের কথা তাঁর অধিকাংশ গ্রাহকই বলছেন বলে জানান আব্দুল খালেক।  

পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি ও শহরের সেন্ট্রাল প্লাজার স্বত্বাধিকারী মেহেদি হাসান খান বাবলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনায় শহরের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও লোকজনের মাঝে নানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ পুলিশের গ্রেপ্তার ও কেউ আবার সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন।’

বাবলা আরও বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চগড়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারওই কাম্য ছিল না। এ ক্ষেত্রে সবার আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল।’  

 এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র দেখে ও সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত ও পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করছে যৌথ বাহিনী। মামলা ও আসামির সংখ্যা বেশি থাকার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের মধ্যে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে, যৌথ বাহিনী কাউকে অযথা হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ আজ (বুধবার) বিকেল পর্যন্ত আসেনি। অভিযোগ পেলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত