Ajker Patrika

বন্ধুর জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতে ফাঁদ, ফাঁসলেন নিজেরাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
বন্ধুর জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতে ফাঁদ, ফাঁসলেন নিজেরাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হেরোইন আর জাল টাকা রেখে অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাও হয়েছেন মাদক মামলার আসামি। মো. শফি ওরফে শফি ডাকাত ও তাঁর সহযোগী মো. গোকুল খান গাজু নামে দুজনকে মাদক এবং জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় আসামি করা হয়েছে। এরপর থেকেই পলাতক রয়েছেন শফি ও গাজু। মো. শফি রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের সাইধাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিম বাজার থেকে ৯৬ গ্রাম হেরোইন ও ১৮ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের জুমারপাড়ার মো. সারোয়ার মোল্লা রুমন ও একই গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম। 

জানা গেছে, শফি ও গাজু পরিকল্পিতভাবে মো. সারোয়ার মোল্লা রুমনকে ফাঁসাতে হেরোইন ও জাল টাকা তাঁর মোটরসাইকেলে রাখেন। পরে সোর্স পরিচয় দিয়ে শফি ডিবি পুলিশে ফোন দিয়ে জানান, রুমন নামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলের সিটের নিচে রেখে হেরোইন পাচার করছে। সেখানে জাল টাকাও আছে। পরে শফির দেওয়া তথ্যে মোটরসাইকেলের সিটের নিচ থেকে হেরোইন ও জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আসগর আলী। 

আসগর আলী আরও জানান, ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া টাকাগুলো রুমন নিজের জানালেও হেরোইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। তাঁর মোটরসাইকেলটি গাজু নামে কেউ নিয়ে গেছিল বলেও জানান। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্ত ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যপ্রমাণে সোর্স পরিচয়ে মাদকের তথ্য দেওয়া ব্যক্তিই শফি বলে জানা যায়। তদন্তে গোকুল খাঁন নামে আরেকজনকে এ ঘটনায় জড়িত বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাঁদের দুজনকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। পলাতক শফি ও গাজুকে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোটরসাইকেল থেকে হেরোইন ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি রুমন মাদকাসক্ত। কয়েক মাস আগে আমনুরার দেশি মদের ভাটিতে পরিচয় হয় মো. শফির সঙ্গে। ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। রুমন শফিকে ধর্মের বাবা ডাকতেন। মাদকের টাকা জোগাড়ে রুমনকে জমি বিক্রিতে উৎসাহ দেয় শফি। 

অনুসন্ধান আরও বলছে, বাধাইড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মুকুল হোসেনের কাছে দেড় বিঘা জমি বিক্রির জন্য কয়েক দফায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় রুমন। আর জমি বিক্রির মাধ্যম ছিলেন মো. শফি। দেড় বিঘা জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২ লাখ টাকা। ২২ ফেব্রুয়ারি তানোর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদিত হয়। বাকি ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন শফি। ওই টাকা আত্মসাতের উদ্দ্যেশ্যে পরিকল্পিতভাবে রুমনের মোটরসাইকেলে মাদক ও জাল টাকা রেখে পুলিশকে খবর দেন তিনি। তাঁর সহযোগিতায় ছিলেন গোকুল খাঁন গাজু। 

এদিকে জমির ক্রেতা ইউপি সদস্য মুকুল হোসেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী রুমনকে ভরপুর মদ খাইয়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। দেড় বিঘা জমির কথা বলে সোয়া ৩ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেন ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন। 

গ্রেপ্তার সারোয়ার মোল্লা রুমনের ফুফা অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর মো. নিজাম উদ্দীন জানান, ইউপি সদস্য মুকুল পরিকল্পিতভাবে রুমনকে মদ খাইয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের জমি লিখে নিয়েছে। তবে মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজা টাকা দিয়েছে বলে শুনছি। টাকা ও জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে সারোয়ার মোল্লা রুমনকে ফাঁসিয়েছেন ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন, মো. শফি ও গোকুল খাঁন। রুমনে সঙ্গে থাকায় শরিফুল ইসলামও গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

কারাবন্দী শরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোসা. জরিনা বেগম বলেন, বেলা ১১টার দিকে আমার স্বামী বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় শফি ডাকাত আমার স্বামীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে আমনুরা বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পাই রুমনের সঙ্গে আমার স্বামীকে ডিবি পুলিশ হেরোইনসহ আটক করেছে। আমার স্বামী কোনো দিন হেরোইনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

শরিফুল ইসলামের ছেলে মো. হৃদয় ইসলাম বলেন, বাবা কাপড়ের ব্যবসার সুবাদে ঢাকার গাজীপুরে থাকেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে এসেছেন। এসেই এমন ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন। ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন আমাদের পাশের এলাকার রুমন নামে একজনের কাছে জমি কিনেছেন। জমি বিক্রির টাকা নিয়ে ঝামেলার কারণে তাঁর কাছে মাদক ও জাল টাকা রেখে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিয়েছেন। রুমনের সঙ্গে থাকায় আমার বাবাকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। 

জানতে চাইলে বাধাইড় ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মুকুল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘আমি টাকা দিয়ে জমি কিনে এখনো জমি বুঝে পাইনি। আমার বিরুদ্ধে মদপান করিয়ে অতিরিক্ত জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন।’ 

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী মোটরসাইকেলযোগে মাদকদ্রব্য হেরোইনের চালান ও জাল টাকাসহ তানোর থানা এলাকা থেকে সদর মডেল থানাধীন আমনুরার দিকে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে নুরতাজ হোটেলের সামনে পাকা রাস্তার ওপর উপস্থিত হলে চালকের আসনে বসে থাকা গোকুল খাঁন গাজু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। 

যাত্রীর আসনে বসে থাকা সারোয়ার মোল্লা রুমন ও শরিফুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ সময় সাক্ষীসহ অন্যান্য লোকের উপস্থিতিতে আসামিদের দেহ তল্লাশি করা হয়। তাদের তথ্যমতে মোটরসাইকেলটির সিটের নিচে অভিনব কায়দায় ১টি টিস্যু ব্যাগের ভেতর পলিথিনে প্যাকেট করা অবস্থায় ৯৬ গ্রাম হেরোইন এবং সাদা কাগজ দিয়ে মোড়ানো ১টি বান্ডিলে ৩৭টি বাংলাদেশি ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে। 

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধৃত আসামিদের জব্দকৃত মাদকদ্রব্য হেরোইন ও জাল টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জব্দকৃত মাদকদ্রব্য হেরোইন ও জাল টাকার প্রকৃত মালিক পলাতক আসামি মো. শফি ওরফে শফি ডাকাত বলে জানায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত