Ajker Patrika

অনাবাসিক ছাত্রের সিট জবরদখল, নামিয়ে দেওয়ায় হলে তালা দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

রাবি প্রতিনিধি
অনাবাসিক ছাত্রের সিট জবরদখল, নামিয়ে দেওয়ায় হলে তালা দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল থেকে শফিউল্ল্যাহ নামে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। তাঁর সিটে রাকিবুল নামে আবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে হল গেটে তালা লাগিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা। 

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে।
    
অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম শামীম ওসমান, তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর বেড নামিয়ে দেওয়া অনাবাসিক শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ ফলিত গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। 

হল সূত্রে জানা যায়, ৪৩০নং কক্ষটি দুই সিটের, তবে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে আরও একটি বেড দেওয়া হয়েছে। এই কক্ষে রায়হান, মহসিন, রাকিবুল এবং শফিউল্ল্যাহ থাকেন। তাঁদের মধ্যে শফিউল্ল্যাহ আবাসিক নন। সম্প্রতি রাকিবুলকে ২৪৪ নম্বর কক্ষে আবাসিকতা দেওয়া হয়। তবে ওই কক্ষে সিট ফাঁকা না থাকায় হল প্রশাসন তাঁকে ৪৩০ নম্বর কক্ষে সিঙ্গেল সিটে তুলে দেয়। গত ১৪ জুন ছাত্রলীগ কর্মী শফিউল্ল্যাহ রাকিবুলকে সিঙ্গেল সিট থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজেই সেই সিটে ওঠেন। বিষয়টি রাকিবুল হল প্রাধ্যক্ষকে জানান। হল প্রশাসন শফিউল্ল্যাহকে এ বিষয়ে কথা বলতে ডেকে পাঠায়। কিন্তু তাঁকে কক্ষে না পেয়ে তাঁর বেড নিয়ে চলে যায়। পরে সেখানে রাকিবুলকে তোলা হয়। 

এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ নেতা শামীম ওসমান হল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। এতে হলের পাঁচ শতাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী জিম্মি হয়ে পড়েন। এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থাকায় তিনি  তালা ভেঙে বের হলে ফের তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্রাধ্যক্ষ এসে তালা খুলে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় হলের তিনজন আবাসিক শিক্ষক ও একজন সহকারী প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক চলাকালে অভিযুক্ত শামীম ওসমান বলেন, তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শাকিলের নির্দেশে তালা লাগিয়েছিলেন। তবে শাকিল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি কাউকে তালা দিতে বলিনি। বরং হল প্রশাসন আমার বেড নিয়ে গিয়েছিল।’

আলোচনায় শামীম ওসমানকে নিজের অপরাধ স্বীকার করে মুচলেকা দিতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং তাৎক্ষণিক বৈঠক থেকে বের হয়ে যান। প্রাধ্যক্ষ শামীম ওসমানের বিছানাপত্র বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে হল কর্মচারীরা তাঁর ২২০নং কক্ষে গিয়ে শামীম ওসমানের বেড মনে করে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাকিলের বেড নিয়ে আসে। এতে শাকিল ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেন। পরে শাকিলের বেড আবার তাঁর কক্ষে তুলে দেওয়া হয় এবং শামীম ওসমানের বিছানাপত্র বের করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম বলেন, ‘যে হলে তালা লাগিয়েছে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে হল শাখা ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে হল প্রশাসন চাইলে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলে জবাব পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘হল গেটে তালা লাগানোর অধিকার কারও নেই। এটা অন্যায় কাজ। যেই ছেলে এ কাজ করেছে সে নিজেও হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। আমরা হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ও  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত