Ajker Patrika

বউ আর মেম্বর মিলে আমারে মরা বানাইয়া রাখছে, বিধবাভাতা নেওয়া ১৩ নারীর স্বামীর দুঃখ

প্রতিনিধি, নেত্রকোনা 
বউ আর মেম্বর মিলে আমারে মরা বানাইয়া রাখছে, বিধবাভাতা নেওয়া ১৩ নারীর স্বামীর দুঃখ

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের জাওয়ানী গ্রাম ও ভুগী গ্রামের ১৩ জন নারী স্বামী জীবিত থাকতেই বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে তাঁরা নিয়মিত ভাতা তুলছেন। 

স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম খান এবং সমাজসেবা কার্যালয়ের যোগসাজশে এই অনিয়ম হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন মিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

অবৈধ ভাতাভোগীরা হলেন, জাওয়ানী গ্রামে নুরজাহানের স্বামী এখলাস উদ্দীন, কুলসুমার স্বামী হাছেন আলী, জবেদার স্বামী আলী নেওয়াজ, রুমেলার স্বামী জহর উদ্দীন, হালেমার স্বামী হাসিম উদ্দীন, আছিয়ার স্বামী আবদুর রহিম, রানু বেগমের স্বামী সিদ্দিক খান, মাহমুদার স্বামী মরম আলী, হাজেরা আক্তারের স্বামী ইসলাম উদ্দিন, জমিলার স্বামী বজলুর, ফিরোজার স্বামী নইছ উদ্দিন, ভুগী গ্রামের জুলেখার স্বামী নবী হোসেন ও নাছিমার স্বামী আবু হোসেন। 

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পূর্বধলায় ৪ হাজার ৫৪৩ জন ভাতাভোগী রয়েছেন। নারান্দিয়া ইউনিয়নে ৩৭৮ জন বিধবা ভাতা পান। এর মধ্যে ৫ নং ওয়ার্ডে ভাতা ভোগী বিধবা ৫০ জন। ওই ৫০ জনের মধ্যে ১৩ জন নারীর স্বামী জীবিত। 

অভিযোগকারী সুমন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমাদের এলাকায় জামাইয়ের সঙ্গে বসবাস করছে, এমনকি জামাই কর্মক্ষম থাকার পরেও স্থানীয় মেম্বার আবুল কালাম আবুল কালাম প্রকৃত বিধবাদের ভাতা না দিয়ে সধবা নারীদের বিধবা ভাতার কার্ড দিচ্ছেন। এমনকি আবুল কালাম তাঁর সৌদি প্রবাসী আপন ভাই মো. শহীদ খানকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি জানার পর আমি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। 

জবেদা নুরজাহান নাছিমা নামে ভাতাভোগী অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইউপি সদস্য আবুল কালাম ভুল বুঝিয়ে তাঁদের ছবি ও ভোটার আইডি নিয়ে গিয়েছিলেন দরিদ্র ভাতার কার্ড করে দিবেন বলে। এজন্য আবুল কালামকে কিছু টাকাও নিয়েছেন। 

ভাতাভোগী নারীদের বেশ কয়েকজনে স্বামীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তাঁরাও সত্যতা স্বীকার করেন। একজন বলেন, ‘বউ আর মেম্বর মিলে আমারে মরা বানাইয়া রাখছে। এই লজ্জা রাহনের জায়গা নাই।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই নামগুলো ফখর উদ্দিনের (সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকার) আমলে থেকে হয়ে আসছে। ২০১৪ সালেও হয়েছে। ২০১৮ সালে হয়েছে। আমি এটা করিনি। আমি করে থাকলে আমার স্বাক্ষর থাকতো। ইসলাম উদ্দিন যে কথা বলছে, তার কোনো কার্ডই নেই। এসব কিছু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমিও এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ 

নারান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রশিদ তালুকদার কয়েক মাস আগে মারা গেছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. খোকন মিয়া বলেন, এই বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। 

পূর্বধলা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. মহিবুল্লাহ হক বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমি এখানে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’ 

বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক মো. আলাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে কার্ডগুলো বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, গতকাল সোমবার বিষয়টি তদন্ত করতে সমাজসেবা ও ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত