Ajker Patrika

জেলের ছদ্মবেশে মাদক কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জেলের ছদ্মবেশে মাদক কারবার

কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে গভীর সমুদ্রে জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার আড়ালে ক্রিস্টালমেথ আইস ও ইয়াবা সংগ্রহ করত একটি চক্র। বিভিন্ন কৌশলে এসব মাদক তারা রাজধানী ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় মাদকের চালান নিয়ে আসার সময় এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম, মকসুদ মিয়া (২৯), রিয়াজ উদ্দিন (২৩), শাহিন আলম (২৮), সামছুল আলম (৩৫)। এর মধ্যে জসিম এই চক্রের মূল হোতা। তাদের সবার বাড়ি কক্সবাজারের সোনাদিয়ায়। 

র‍্যাব বলছে, মাদক কারবারি চক্রের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। অভিযানে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও এই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২ কেজি আইস, এক লাখ পিস ইয়াবা, ৪ হাজার ৬ শ পিস চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন, দুটি বিদেশি পিস্তল, নয় রাউন্ড গুলি, দুটি টর্চলাইট, মিয়ানমারের সিমকার্ড, এক লাখ ৬৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা ও এক লাখ মিয়ানমারের মুদ্রা ও পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

কমান্ডার মঈন জানান, বৈধ ব্যবসা ও মাছ ধরার আড়ালে সাগরপথে একটি চক্র মিয়ানমার থেকে আইস ও ইয়াবা বাংলাদেশে নিয়ে আসছে—এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১৫ এর একটি দল। এ সময় চক্রের মূল হোতা ও সমন্বয়কারী জসিমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনর‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগরপথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা ২০-২৫ দিন জেলে ছদ্মবেশে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে। মাদক গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে। পরে সেগুলো সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখে। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি সোনাদিয়া থেকে দুটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিয়ে আসে। হাতিয়ায় থাকা চক্রের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মাদকের চালান সংরক্ষণ করা হয়। এরপর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে মেঘনা নদী হয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়াসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া চক্রটি বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করত। 

খন্দকার মঈন জানান, মাদকের চালান মুন্সিগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র আইস ও ইয়াবার চালান গ্রহণ করে। এরপর সড়কপথে বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। নৌপথে মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য চক্রটি দুটি বোট ব্যবহার করে থাকে। সামনের বোটটিকে নজরদারি করতে ব্যবহার করত এবং পরের বোটটিতে মাদক বহন করা হতো। মোবাইল অথবা টর্চলাইট সিগন্যালের মাধ্যমে উভয় বোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত। পথিমধ্যে নজরদারিতে নিয়োজিত বোট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহজনক কিছু আঁচ করতে পারলে পেছনের মাদকবাহী বোটকে সংকেত দিত। 

গ্রেপ্তারের পর চক্রের সদস্যদের বরাত দিয়ে খন্দকার মঈন জানান, চক্রের নেতৃত্ব দিত জসিম উদ্দিন। তাঁর নেতৃত্বে মাদক চক্রের ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে। এই চক্রটি মূলত সোনাদিয়াকেন্দ্রীক একটি মাদক চোরাকারবারি চক্র। তারা নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে মাদক নিয়ে আসত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে তারা নৌপথকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করত। 

আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া জসিম ৫-৭ বছর যাবৎ মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। লবণ ব্যবসার আড়ালে আইসের কারবারে জড়িত ছিল জসিম। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর থেকে তারা মিয়ানমার থেকে ক্রিস্টাল আইস নিয়ে আসা শুরু করে। এ ছাড়া এই চক্রটি রাজধানী থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেতনানাশক মাদক সিডাক্সিন ইনজেকশন সংগ্রহ করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। 

খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া শাহীন আলম জসিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে সাগর ও নৌপথে মাদক পরিবহনের মূল দায়িত্ব পালন করত। তাঁর বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মানবপাচার ও মারামারির দুটি মামলা রয়েছে। শামছুল আলমের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও মারামারির তিনটি মামলা রয়েছে। মকসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতির ছয়টি মামলা রয়েছে। শাহীন, সামসু ও মকসুদ মাদক বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। রিয়াজ উদ্দিন মাদক পরিবহনে নজরদারির জন্য বোটে অবস্থান করত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত