Ajker Patrika

সাবরিনার জেকেজি, সাহেদের রিজেন্টের পর এবার টিকেএস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সাবরিনার জেকেজি, সাহেদের রিজেন্টের পর এবার টিকেএস

ভুয়া সরকারি প্রজ্ঞাপন ও করোনা পরীক্ষার অনুমতিপত্র তৈরি করে বিস্তর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল তারা। ভুয়া করোনা পরীক্ষার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবরিনা চৌধুরী ও মোহাম্মদ সাহেদের ঘটনা এখন সবারই জানা। এই দুজন যথাক্রমে জেকেজি হেলথকেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালে ভুয়া করোনা পরীক্ষা করে আসছিলেন। এই নিয়ে তুমুল হইচইও হয়েছে সে সময়। এখন এই একই তালিকায় ঢুকে পড়ল টিকেএস হেলথ কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা করোনা পরীক্ষার অনুমতিপত্র দিয়ে ঢাকা ও ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্নজনকে নিয়োগও দিয়েছে। 

মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের সিল-স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রজ্ঞাপন ও করোনা পরীক্ষার অনুমতিপত্র তৈরি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ বুধবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মূল হোতা ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আলামিন, চেয়ারম্যান আবুল হাসান তুষার ও বিপণন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহিন মিয়া। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোভিড পরীক্ষার লোকবল ও করোনা পরীক্ষার বুথ এজেন্ট নিয়োগের নামে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সাবরিনা চৌধুরী জেকেজি ও মোহাম্মদ সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের মতোই টিকেএস নামের এই প্রতিষ্ঠান করোনা পরীক্ষার নামে নানা অপকর্ম করে আসছিল। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ট্যাক্স সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের জাল নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়। 

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুল্লাহ আল আমিন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক এবং আবুল হোসেন তুষার একটি ব্যাংকের গণসংযোগ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় তাঁরা এই প্রতারণার যুক্ত হন। 

পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, অভিযুক্তরা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির আল-রাজি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় গত ১১ জুলাই টিকেএস হেলথ কেয়ার সার্ভিস নামে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এর পর তাঁরা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে তাঁরা বাংলাদেশের আট বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২টি উপজেলা ও ৪,৫৬২টি ইউনিয়নে বিনা মূল্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করার অনুমোদন চান। তাঁদের ৫১২৬ জন সম্মুখ যোদ্ধা রয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্ব না থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা অনুমোদন পাবেন না এটা বুঝতে পারে চক্রটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রশাসন শাখা-১ অধিশাখার ১৯ জুলাই তারিখের স্মারক সম্পূর্ণ জাল করে। এর পর তাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর-সিল জালিয়াতি করে নিজেরাই নিজেদের বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ ও ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি নিয়ে নেয়। ভুয়া অনুমতিপত্রের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি ঢাকা ও ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্নজনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। 

মাত্র আড়াই হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দেশে ১০০টি কোভিড টেস্টের ক্যাম্পাস বুথ স্থাপন করা হয় উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি কোম্পানির প্রোফাইল বানাতে খরচ করে এক হাজার টাকা, বিভিন্ন লোগো সংবলিত আবেদনপত্র প্রিন্টের খরচ এক হাজার টাকাসহ মোট আড়াই হাজার টাকা তাদের খরচ হয় বাংলাদেশে ১০০টি ক্যাম্পাস স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্পাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা কমপক্ষে ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছিল। 

ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা ভুয়া কাগজপত্রে কোভিড পরীক্ষার সব প্রস্তুতি শেষ করেছিল। বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বুথের শাখাও বিক্রি করেছে। নকল রি-এজেন্ট এনেছিল। এসবের মাধ্যমে তাঁরা ভুয়া করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেব—এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল। তবে ভুয়া করোনা পরীক্ষা শুরুর আগেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাঁদের আজ বুধবার বিকেলেই আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত