Ajker Patrika

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক পরিচয়ে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। প্রতারকেরা হাজিদের ফোন দিয়ে বলত, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে আপনি ৭৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছেন। এর পর মোবাইলে কল করে ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে অর্থ হাতিয়ে নিত। 

আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর সদরের চর কমলাপুর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তাররা হলেন—চক্রের মূল হোতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে শুভ (২৯) ও তাঁর সহযোগী শরিফুল ইসলাম (২৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন, সিমকার্ড জব্দ করা হয়। 

সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজ পালন করতে গিয়েছিলেন তাঁদের মোবাইল নম্বরসহ তালিকা সরকারি একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতারক চক্রটি ওয়েবসাইটের তালিকার তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে হজের খরচ থেকে উদ্ধৃত টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে তাঁদের ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট (মাস্টার/ভিসা) কার্ড নম্বর এবং সিভিসি/সিভিভি নম্বর সুকৌশলে সংগ্রহ করে চক্রটি।’ 

‘পরে চক্রটি এসব কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে অবৈধ ট্রানজেকশন করতে চাইলে রিয়েল টাইমে ব্যাংকের সার্ভার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওটিপি গ্রাহকের মোবাইলে চলে আসে। এ পর্যায়ে চক্রটি গ্রাহকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানায়, ব্যাংক থেকে আপনার কাছে আপনার আবেদন করা সিরিয়াল নম্বর পাঠানো হয়েছে। ওই নম্বরটি আমাদেরকে জানান। আসলে ওই নম্বরটিই ট্রানজেকশনের স্বয়ংক্রিয় ওটিপি, যা ব্যবহার করে প্রতারকেরা ওই গ্রাহকের ডেবিট, ক্রেডিট (মাস্টারকার্ড/ভিসা) কার্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে লেনদেনটি সম্পন্ন করে থাকে।’ 

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে একটি অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ছায়া তদন্তে নেমে চক্রটির সদস্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চক্রের মূল হোতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে শুভ তাঁর অন্য সহযোগীদের যোগসাজশে এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করে এসেছেন এমন হাজিদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া আগেও চক্রটি গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিল। 

তাঁরা মূলত সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সরকারি সেবা গ্রহীতাদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারণার জাল বিস্তার করে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, উপবৃত্তি, সরকারি বিভিন্ন কল্যাণ ভাতা থেকে অনুদানসহ সরকার ঘোষিত সুবিধাপ্রাপ্তদের টার্গেট করেই বছরের পর বছর একের পর এক প্রতারণা করেছে।

এর মধ্যে শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে এবং ৩ মাস আগেই সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণ অনুদানের সুবিধাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ করার মামলায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শরীফুল গ্রেপ্তার হয়। এক মাস আগে জামিনে বের হয়ে আবার সে প্রতারণা শুরু করে। তবে এক দশকের বেশি সময় ধরে অপরাধ করেও গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে পেরেছিল চক্রের মূল হোতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে শুভ।

গ্রেপ্তারদের পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত