Ajker Patrika

টার্গেট বিমানবন্দর থেকে হলেও অস্ত্র ঠেকায় রাস্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
টার্গেট বিমানবন্দর থেকে হলেও অস্ত্র ঠেকায় রাস্তায়

বিমানবন্দর এলাকায় দুদিনের ব্যবধানে সর্বস্ব হারিয়েছেন দুই প্রবাসী। এর মধ্যে লন্ডন থেকে আসা এক প্রবাসীকে অজ্ঞান করে আর মিসর থেকে আসা প্রবাসীকে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুট করে নেন। সব মিলে তাদের খোয়া যায় ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়াও গত ৫ বছরে এভাবে সর্বস্ব হারিয়েছেন প্রায় অর্ধশত প্রবাসী। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে মাত্র সাতটি।

ডিবির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কায়সার রিজভী কোরায়েশী আজকের পত্রিকাকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র বিমানবন্দর এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। প্রবাসীসহ বিদেশি নাগরিকদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। চক্রটি সকালে বেশি সক্রিয় থাকে। বিমানবন্দরের ভেতরে আর বাহির সব তথ্য দেয় একটি গ্রুপ আর লুট করে আরেকটি গ্রুপ। যাত্রীর অবস্থা বুঝে অস্ত্রের মুখে বা অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। সাত থেকে আটজনের একটি দল। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করে। চক্রটির সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার দরজায় ছদ্মবেশে অবস্থান করে। আবার গাড়ি চালক সেজেও থাকে। তাদের প্রধান টার্গেট প্রবাসীরা। 

গত ১৬ অক্টোবর চক্রটির তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে কৌশলে ডাকাতি করার সব তথ্য। জানা যায়, টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে সাহায্য কারার কথা বলে সম্পর্ক করে। এরই মধ্যে যাত্রার পথ ও স্থায়ী ঠিকানা জেনে নেওয়াসহ কোন পথে যাবে, সেটাও জেনে নেয় কৌশলে। ক্ষণিকের সেই সম্পর্ক কাজে আসলে অজ্ঞান করে আর তাতে কাজ না হলে অস্ত্রের মুখে সব নিয়ে নেন। তবে চক্রটির টার্গেট খুব কমই ভেস্তে যায়।

লন্ডনপ্রবাসী ওমর শরিফের বোন জামাই ইসাহাক আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'আমার শ্যালক চলতি মাসের ৫ অক্টোবর ভোর ৫টায় শাহজালাল বিমানবন্দর এসে পৌঁছায়। পরে বিমানবন্দর থেকে আজমপুর দেশ ট্রাভেলসের কাউন্টারে গেলে, তাঁরা জানান বাস নেই। আপনি কল্যাণপুরে যান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস পাবেন। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ব্যক্তি জানতে চান কোথায় যাবেন। ভিকটিম (ওমর) নাটোর যাওয়ার কথা বললেই, তারা দুজন বলে আমরাও যাব। আপনি তো লন্ডন থেকে আসছেন, আমরা কাতার থেকে এসেছি, চলেন এক সঙ্গে বাড়ি যাই। পরে একটা সিএনজিতে করে তারা কল্যাণপুর দেশ ট্রাভেলসের কাউন্টারে আসে। তাঁরা বলে আপনি লাগেজ নিয়ে বাইরে দাঁড়ান আমরা টিকিট নিয়ে আসি। পরে তাদের নামে টিকিট আনে। পরে বিকেল ৫টায় সিরাজগঞ্জ ফুট ভিলেজ রেস্তোরাঁয় বাস থামালে ওমর খেতে যায়। তখন ওই দুজনের একজন তাঁর পাশে গিয়ে বসে বলে আমরাও খাওয়া দাওয়া করব। পরে আরেক জন বাইরে গিয়ে দুইটা ডাব এনে বলে আমি খাইছি আপনাদের দুজনের জন্য নিয়ে আসছি। ক্লান্ত হয়ে আসছেন খেলে ভালো লাগবে, খান। তখন ডাবের পানি আমার শ্যালক ডাবের পানি খায়। পরে বাসে ওঠার একটু পরেই অজ্ঞান হয়ে যায়।' 

বাসের সুপারভাইজার বলেন, 'নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে নেমে যায় তাঁরা। বাস থেকে নামার সময় বক্সে থাকা দুইটি লাগেজ নিয়ে যায়। আর তাদের (চক্রটির) সঙ্গে থাকা খালি লাগেজ রেখে যায়। রাত আটটা বাজে নাটোর পৌঁছায় বাস। পরে তাঁরা দেখে ওমর অজ্ঞান। তখন লোকজন ধরে তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে কাউন্টারে রাখে। পরে জ্ঞান ফিরলে বাসার ঠিকানা বললে কাউন্টারের লোকজনই বাসাই নিয়ে আসে।' 

প্রবাসী ওমর শরিফ বলেন, 'আমার জ্ঞান ফিরে আসলে দেখি আমার পকেটে থাকা এক লাখ টাকা স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট টেন মোবাইল ফোনটি নেই। এ ছাড়া আমার সঙ্গে থাকা ছোট একটি লাগেজও নাই। যার ভেতরে পাসপোর্ট, একটি আইপ্যাড ও নগদ দুই লাখ টাকা ছিল।' 

আরেক মিশর প্রবাসী লিটন সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'গত ৭ অক্টোবর সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে বিমান থেকে নামি। ভেতরের কাজ শেষ করে সবার পরে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আমার বড় ভাইয়ের জন্য বিমানবন্দরের গোল চত্বরে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় একজন এসে আমার কাছে জিজ্ঞেস করে তুমি কই যাবা। সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে আরও দুই-তিনজন চলে আসে। এরপরে নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করে বুঝতে পারে আমি বিদেশ থেকে এসেছি। এরপর চাকু বের করে হুমকি দেয় আর লেগেজ কেড়ে নেয়। পরে চক্রটি আবদুল্লাহপুরের দিকে যাওয়া বলাকা বাসে উঠিয়ে দেয় আমাকে।' 

লিটন সরকার বলেন, 'পাঁচ বছর পরে দেশে আসছি। এত দিন বিদেশ থাকছি একটা টাকাও হারাইনি। আর বাংলাদেশের মাটিতে পাড়া দিয়েই এই অবস্থা।'

এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, চক্রটি ঢাকার ভেতরে কিছুই করছে না। তারা টার্গেট করা ব্যক্তি ঢাকার আশপাশে পৌঁছায় গেলেই আক্রমণ করছে। এ ছাড়া ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখানোর ফলে তারাও মুখ খুলছে না প্রশাসনের কাছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিছুদিনের জন্য দেশে বেড়াতে আসা প্রবাসীরা মামলায় জড়াতে চান না। আর এই সুযোগটাই কাজ লাগাচ্ছে চক্রটি।

বিমানবন্দর এলাকায় ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই চক্রটি ডাকাতি কম করে। তারা বেশির ভাগ সময় অজ্ঞান পাটি হয়ে কাজ করে। তারা ঢাকার ভেতরে এসব কাজও কম করে। ঢাকা থেকে টার্গেট করা ব্যক্তির পিছু নিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব কেড়ে নেই। এ সময় তারা ভয়ভীতি দেখানোর জন্য প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন থাকে।

ডাকাতির ঘটনায় মামলা এত কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, প্রবাসীরা অল্প সময়ের জন্য দেশে আসেন। এ জন্য তারা মামলায় জড়াতে চাই না। জানান, বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক যাত্রীদের বের হওয়ার দরজায় চক্রটির তথ্য দাতা আছে। তারাই যাত্রীদের গতি বিধি সম্পর্কে জানাই দেয়। এতে চক্রটির কাজ করতে আরও সহজ হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত