Ajker Patrika

বালু ভরাটের নামে কোটি টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বালু ভরাটের নামে কোটি টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৩

ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের প্রধানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের রামগতিতে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টে বালু ভরাটের নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশান ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—কথিত আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আলমগীর, প্রজেক্ট ডাইরেক্টর শফিকুল ইসলাম এবং পরিচালক (প্রশাসন) ইমরান হোসাইন।

সিআইডি জানিয়েছে, বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে—এমন একটি তথ্য কথিত অনলাইন টিভিতে প্রচার করে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া চুক্তি করে আসছিল চক্রটি। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। 

ইমাম হোসেন জানান, রাজধানীর গুলশান এলাকায় অফিস ভাড়া নিয়ে কোটি টাকা খরচ করে আলিশান চাকচিক্য তৈরি করে চক্রটি। এই অফিসে বসে আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল নামের কথিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে উল্লেখ করে অনলাইনে প্রচার করে আসছিল। চক্রের মূল হোতা আলমগীর জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের তিন শ কোটি সিএফটি বালু সাপ্লাইয়ের কাজ পেয়েছে। এই তিন শ কোটি সিএফটি বালু সরবরাহের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাপ্লায়ারদের সঙ্গে চুক্তি করে আসছিল। 

প্রতারক আলমগীর আগ্রহী সাপ্লায়ারদের জানায়, প্রতি সিএফটি বালুতে ১০ টাকা লাভ হবে। এমন লোভ দেখিয়ে সাপ্লায়ারদের একেকজনকে ২ কোটি থেকে ২০ কোটি সিএফটি বালু ভরাটের কাজ সাব-কন্ট্রাক্টে দেওয়ার চুক্তি করে। আর এই চুক্তির কমিশন হিসেবে ৭ থেকে ৯০ লাখ পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে চক্রটি ৩৫-৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, প্রতারক আলমগীর নিজেকে বড় মাপের কন্ট্রাক্টর প্রমাণের জন্য গুলশানে অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে অফিসের ডেকোরেশন করে। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ১১০ প্রকারের খাবার পরিবেশন করে তার সাপ্লায়ারদের আপ্যায়ন করায়। বড় সাপ্লায়ারদের নিয়ে বিভিন্ন রিসোর্টে কয়েকবার পার্টির আয়োজন করে। এ ছাড়া প্রজেক্ট এলাকায় সাপ্লায়ারদের নিয়ে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজের বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টের শুভ উদ্বোধন লেখা ব্যানারে যমুনা সেতুর পাশে লালগালিচা বিছিয়ে কাজ উদ্বোধন করে। এ ধরনের কার্যকলাপ দেখে বিশেষ করে টাঙ্গাইল এলাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার অনেক সাপ্লায়ার কাজ পাওয়ার আশায় প্রতারক আলমগীরের অফিসে যোগাযোগ করে লাখ লাখ টাকা কমিশন দিয়ে কাজের চুক্তি করে। এভাবে অভিনব কৌশলে ৩৫-৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় আলমগীর। 

সাপ্লায়াররা বালি ফেলানোর জন্য আলমগীর ও চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁকে পায়নি। অফিস বন্ধ পেয়ে তারা বুঝতে পারে প্রতারিত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কয়েকজন বিষয়টি সিআইডিকে জানালে সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিষয়টি অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং কথিত আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আলমগীরসহ প্রজেক্ট ডাইরেক্টর শফিকুল ইসলাম এবং পরিচালক (প্রশাসন) ইমরান হোসাইনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাপ্লায়ারদের সঙ্গে স্ট্যাম্প, অনেক চুক্তিপত্রের কপি ও দশ কোটি টাকা কাবিনে নিকাহনামার ফটোকপি পাওয়া যায়। 

সিআইডির ঢাকা রেঞ্জের প্রধান জানান, ব্যাংকের লেনদেনের সূত্র ধরে ইস্টার্ন ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তা সালমা সুলতানা সুইটি ওরফে কনার সঙ্গে পরিচয় হয় আলমগীরের। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে সে। ব্যাংক কর্মকর্তা কনা গ্রান্টার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকার এলসি ভাঙিয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দেবে বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করে। এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আলমগীর তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে ব্যাংকার সালমা সুলতানা সুইটি ওরফে কনাকে দশ কোটি টাকার কাবিন দিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করে। বিবাহের পর গুলশানের একটি বাসায় দুই লাখ টাকা মাসিক ভাড়া করে ২য় স্ত্রীকে নিয়ে থাকা শুরু করে বহুমুখী প্রতারক আলমগীর। বালু ভরাটের নামে সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী নগদ ও কোটি টাকার গয়না দেয়। কিন্তু এলসি না হওয়ায় আলমগীর ও তার ব্যাংকার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয় এবং একপর্যায়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে আলমগীরকে ডিভোর্স দিয়ে দেনমোহরের ১০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন কনা। 

ইমাম হোসেন আরও জানান, গ্রেপ্তারের পর সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে আলমগীরের বহুমাত্রিক প্রতারণার ইতিহাস জানা গেছে। নয়াপল্টনে বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামে ট্রাভেল এজেন্সি খুলে সৌদি আরবের ১৫০টি জাল ভিসা নিয়ে প্রতারণা করে সে। এই প্রতারণায় সে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সালাউদ্দিনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার ও প্রতারণার অভিযোগে ডজন খানেক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আলমগীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত