Ajker Patrika

নাতনির কান্না সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে খুন বাবার

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ২৩: ২১
নাতনির কান্না সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে খুন বাবার

আড়াই বছর বয়সী জান্নাতুলকে কলা খাওয়াচ্ছিলেন মা সালমা আক্তার (২৭)। জান্নাতুল খেতে না চাওয়ায় জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন সালমা। এ কারণে ওই সময় কান্না করছিল জান্নাতুল। আর এদিকে পাশে কাজ করছিলেন জান্নাতুলের নানা আব্দুল হাকিম (৫৪)। নাতনির কান্না সহ্য করতে না পেরে তিনি সালমাকে প্রথমে ধমক দেন ও পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন।

গত বুধবার উত্তর গাওয়াইর এলাকার কাজী বাড়ি রোডের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আজ শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সালমার। 

এ ঘটনায় আজ শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইর এলাকা থেকে ঘাতক বাবা আব্দুল হাকিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

জানা গেছে, ঘটনার দিন সালমার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে দক্ষিণখানের একটি নিকটস্থল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর পান্থপথের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ইমারজেন্সি কেয়ার ইউনিটি (আইসিইউ) ফাঁকা না থাকায় সবকিছু গোপন করে উত্তরার শিন-শিন জাপান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার ভোর ৪টার দিকে সালমা মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর সবকিছুই গোপন করে নিহত সালমার মরদেহ গোসল করে দাফন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে। অপরদিকে ঘাতক বাবা আব্দুল হাকিমকে গ্রেপ্তার করে। 

আব্দুল হাকিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই সময় আমি ঘরের দেওয়ালে পেরেক গাড়ছিলাম। আর ঘরের মধ্যে আমার মেয়ে সালমা নাতনিকে কলা খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু নাতনি খেতে চাচ্ছিল না। কান্না করছিল। কিন্তু জোর করেই খাওয়ানোর চেষ্টা করছিল সালমা। নাতনির কান্না সহ্য করতে না পেরে আমি সালমাকে ধমক দেই। যার কারণে সালমা নাতনিকে আছাড় দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। তখন আর আমি সহ্য করতে পারি নাই। পরে হাতে থাকা হাতুড়ি নিয়ে আমি সালমাকে বলি বেশি ইয়া করিস না, করলে হাতুড়ি দিয়ে একটা দিব। এ কথা বলা মাত্রই সালমা মাথা ঘুরালে হাতে থাকা হাতুড়িতে লেগে যায়। একটু পরই আস্তে আস্তে হেলে পরে।’ 

আব্দুল হাকিম বলেন, ‘প্রথমে আমি এত কিছু বুঝি নাই। ভাবছিলাম মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছে। পরে তার মাথায় পানি ঢালি। পরে গামছা দিয়ে মাথা মুছানোর সময় রক্ত দেখি। তখন চিৎকার করলে আসে পাশের লোকজন এগিয়ে আসে। সেই সঙ্গে সালমার মা ও ভাইও এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ 

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোসাম্মত রেজিয়া খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দক্ষিণখানে বাবার হাতে মেয়ে খুন করে লাশ দাফনের প্রাক্কালে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘাতক বাবা আব্দুল হাকিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মো. মাসুম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। নিহতের মরদেহ সুরতাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ 

এসআই রেজিয়া বলেন, ‘কোন দুর্ঘটনা হলে মাথার পাশে কিংবা কপালে আঘাত পাওয়ার কথা। কিন্তু মাথার মাঝে আঘাত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পুলিশ বলছে, এটি একটি পুলিশ কেসের ঘটনা। কোনো পুলিশ কেসের রোগীকে চিকিৎসা করাতে গেলে অবশ্যই পুলিশকে জানাতে হবে। কিন্তু উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের শিন-শিন জাপান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘অতিরিক্ত টাকার লোভে’ সবকিছু গোপন করে চিকিৎসা করিয়েছে। মারা যাওয়ার পরও পুলিশকে অবগত না করে মরদেহ হস্তান্তর করেছে তারা।

এদিকে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো অপারেশন করে নাই। শুধু মাথায় সেলাই করেই আর আইসিইউতে রেখে অতিরিক্ত বিল আদায় করেছে। হাসপাতালের গাফিলতির কারণে এবং চিকিৎসায় অবহেলার জন্য সালমার মৃত্যু হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর, আবারও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড

২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নামের আগে গণহত্যাকারী, ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত