Ajker Patrika

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাক্ষী হওয়ায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল উত্ত্যক্তকারীরা

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ৫৯
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাক্ষী হওয়ায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল উত্ত্যক্তকারীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে উত্ত্যক্তের ঘটনায় ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অভিযোগে সাক্ষী হয়েছিলেন মো. হুসাইন মুন্না। এরপর অভিযুক্তদের হামলায় প্রাণ হারালেন এই যুবক। পুলিশ বলছে, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ায় মুন্নাকে অভিযুক্তরা মেরেছে।

আজ রোববার সকালে ঢাকার জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুন্নার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের। 

মুন্না চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের পল্লিচিকিৎসক খুরশিদ আলমের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, মো. আলামিন ও মাসুম মিয়াসহ কয়েকজন মুন্নাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেছিল। 

আলামিন ও মাসুম মিয়ার বাড়ি চাতলপাড় ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ইকরা দারুল কোরআন বালিকা মাদ্রাসার ছাত্রীদের স্থানীয় কয়েকজন যুবক উত্ত্যক্ত করতেন। প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও হুমকি-ধমকি দিতেন তারা। এক মাস আগে কয়েকজন ছাত্রী মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে রতনপুর গ্রামের পাঁচ-ছয়জন যুবক উত্ত্যক্ত করেন। এরপর অভিভাবক সুমন মিয়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে মুন্নাকে দ্বিতীয় সাক্ষী করা হয়। 

গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) মুন্নাকে একা পেয়ে স্থানীয় চকবাজারে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল হামলা করে। এ সময় মুন্নার মাথায় ও শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। প্রথমে তাঁর কিশোরগঞ্জ জেলার ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকার জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তিনি মারা যান।

অভিযোগের আরেক সাক্ষী মো. আরিফ বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় প্রায়ই বখাটেরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এর আগে দুই যুবক মাসুম মিয়া, আলামিন উত্ত্যক্ত করলে তাদের পরিবারের অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনে। পরে একই ঘটনা আবার ঘটলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের আমি ও মুন্না সাক্ষী হই। মুন্না সাক্ষী হওয়ায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে আহত করে তারা।’ 

উত্ত্যক্তের ঘটনায় থানায় অভিযোগকারী সুমন মিয়া বলেন, ‘অভিযুক্তরা সব সময় মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার সময় মেয়েদের খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে। তাই আমি লিখিত অভিযোগ দিই। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ 

মুন্নার শ্বশুর মোহাম্মদ মন্টু মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়েজামাই মুন্না উত্ত্যক্তের অভিযোগে সাক্ষী হওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে আহত করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান অভিযুক্ত আলামিনের বড় ভাই মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে গত বুধবার মুন্নার সঙ্গে একটু তর্কবিতর্ক হয়েছিল বলে শুনেছি।’

তবে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের অভিযোগ এনে সুমন মিয়া নামে এক অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করতে যাই। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাইনি। তাই মিথ্যা সাক্ষী হওয়ার কারণে মুন্নাকে মারধর করে এলাকার বখাটে যুবক আলামিন, মাসুমসহ কয়েকজন যুবক। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তিও হয়। শুনেছি, আজ সকালে মুন্না ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।’ 

একই কথা বলেন নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহাগ রানা। তিনি বলেন, ‘ইউএনও অফিসে একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানায় তদন্ত দেওয়া হয়। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে কোনো সত্যতা মেলেনি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইমরানুল হক বলেন, ‘উত্ত্যক্তের কোনো অভিযোগ আমার অফিসে দিয়েছিল কি না আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত