Ajker Patrika

দুপুরে আসামি আনা হবে বলে সরানো হলো আদালতের নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার থেকে
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৪১
দুপুরে আসামি আনা হবে বলে সরানো হলো আদালতের নিরাপত্তা

কক্সবাজার আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের এক ঘণ্টা পর পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সকালের পরবর্তীতে দুপুরের পর যেকোন সময় আসামিদের আদালতে আনা হবে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। 

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, সিনহা হত্যা মামলা'র আসামিদের দুপুরের পর যেকোন সময় আদালতে আনা হবে। তাই আপাতত পুলিশি কড়া নিরাপত্তার চাদর আদালত চত্বর থেকে সরানো হলো। 

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার এই মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে আজ সোমবার। হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় এই রায়ের দিন ধার্য রেখেছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবির জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। আর আসামি পক্ষে আইনজীবীরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত এটা প্রমাণ না হওয়ায় খালাস পাবেন আসামিরা। 

সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাআদালত পাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টার দিকে প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য জজ কোর্ট এলাকার চারদিকে প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিকেড) দিয়ে রাখেন। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা পুলিশ আদালতে প্রবেশের একটি ফটক পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। পরে ঠিক নয়টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্ব সদস্যরা আদালত ছাড়েন। 

গত বছর ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এ হত্যা মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সর্বশেষ দুই পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক। 

সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
আলোচিত এই মামলায় বাদী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। এর মধ্যে প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত সাক্ষ্য দেন। দ্বিতীয় দফায় চার দিনে সাক্ষ্য নেওয়া হয় চারজনের, তৃতীয় দফায় তিন দিনে আটজনের, চতুর্থ দফায় দুই দিনে ছয়জনের, পঞ্চম দফায় তিন দিনে ১৫ জনের, ষষ্ঠ দফার তিন দিনে ২৪ জনের, সপ্তম দফার তিন দিনে পাঁচজনের এবং অষ্টম দফায় তিন দিনে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামের সাক্ষ্য দিয়ে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়। এরপর আদালত নবম দফায় ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ১৫ জন আসামির ৩৪২ ধারায় লিখিত ও মৌখিক সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ আদালত ৯ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি চার দিনের উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

মামলার আসামি যারা
বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা, সাক্ষীরা আদালতে যা বললেন
এ মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলামসহ ৬৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী  ও তদন্ত কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে আদালতকে জানান। এ মামলার বাইরেও সাক্ষীরা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের দায়িত্ব পালনকালে টেকনাফে নানা নির্যাতনের বর্ণনা দেন আদালতে। সেদিনের নির্মম ঘটনা সাক্ষীরা সবিস্তারে আদালতে তুলে ধরেন।

এ যাবৎকালের বড় মামলা
কক্সবাজারের আদালতে দেশজুড়ে আলোচিত মামলার বিচার হয়নি। আইনজীবীরা বলছেন, ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের এত বড় মামলার ইতিহাস নেই। খুব দ্রুতই এ মামলা রায়ের পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, আদালতে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য এভিডেন্স তথ্য-প্রমাণে প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পেরেছে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেজর সিনহাকে হত্যা করেছেন। তাই আদালতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শাপলাপুর পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের পর র‍্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

মেজর সিনহা মামলা সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত