Ajker Patrika

ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রতিবেশীকে হত্যার পর সিঙ্গাপুরে পলাতক আসামি

মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ০৭
ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রতিবেশীকে হত্যার পর সিঙ্গাপুরে পলাতক আসামি

ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য নূরুল আমিনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বরিশালের মুলাদীতে শ্বশুর বাড়িতে ডাকেন একই এলাকার প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম। এরপর নুরুল আমিনকে হত্যা করে হাত-পায়ে ইট দিয়ে বেঁধে মরদেহ ফেলে দেন আড়িয়াল খাঁ নদীতে। ঘটনার ৩ দিন পরে গোপনে সিঙ্গাপুর চলে যায় কামরুল।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত কামরুল ইসলামের শ্বশুর।

নিহত নূরুল আমিন নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরবক্তাবলী উপজেলার লক্ষ্মীনগর গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে। অন্যদিকে কামরুল ইসলাম একই গ্রামের হানিফ ফকিরের ছেলে। কামরুল ইসলামের শ্বশুর বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়। 

এর আগে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ কামরুল ইসলামের শ্বশুর মো. খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। আদালতে খোরশেদ আলম স্বীকার করেছেন, তাঁর জামাতা কামরুল ইসলাম খুন করে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। এই খুনের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তিনি জানেন না।

গত ১২ অক্টোবর রাতে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদীর উত্তর তীরবর্তী চর থেকে নূরুল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। মরদেহের হাত-পায়ে ইট বাঁধা পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে হত্যার সন্দেহ করা হয়। ঘটনার পরদিন নৌপুলিশ বাদী হয়ে মুলাদী থানায় মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে বরিশালে দাফন করা হয়। 

গত সোমবার (১৭ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার একটি সাধারণ ডায়েরির সূত্রধরে নূরুল আমিনের মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়। গত ১০ অক্টোবর বাসা থেকে বের হয়ে মুলাদীতে আসেন। পরবর্তীতে মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তাঁর বোন ফতুল্লা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। 

নিহত নূরুল আমিনের বড় ভাই আল আমিন জানান, নূরুল আমিন ও কামরুল ইসলাম এক সঙ্গে সিঙ্গাপুর ছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে সেখানে থাকতেন। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর লোক নেওয়ার ব্যবসাও (আদম ব্যবসা) করতেন তাঁরা। এক বছর আগে নূরুল আমিন সিঙ্গাপুর থেকে বাড়িতে আসেন। এলাকার বেশ কয়েকজনকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার জন্য নূরুল আমিনের মাধ্যমে ৬০ / ৬৫ লাখ টাকা নেন কামরুল ইসলাম। অনেক দিন ধরে কামরুল এলাকা থেকে সিঙ্গাপুর লোক নিতে পারছিলেন না। প্রবাসে লোক নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন নূরুল আমিন। আর লোক নেওয়া সম্ভব না হলে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান নূরুল আমিন। কিন্তু কামরুল ইসলাম আজকাল করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। 

আল আমিন আরও জানান, গত ৭ অক্টোবর গোপনে বাংলাদেশে আসেন কামরুল। এলাকার লোকজন টাকার জন্য চাপ দেবেন এই ভয়ে নিজ গ্রামে যাননি তিনি। মোবাইল ফোনে নূরুল আমিনকে তাঁর শ্বশুর বাড়ি মুলাদীতে আসতে বলেন। গত ১০ অক্টোবর সকালে নূরুল আমিন বাসা থেকে বের হন। ওই সময় নূরুল আমিন জানিয়েছিল, কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে বরিশালের মুলাদীতে যাচ্ছেন। ওই রাতেই নূরুল আমিনের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তাঁরা সাধারণ ডায়েরি করেন। 

নিহতের পরিবারের সদস্যদের ধারণা, আদম ব্যবসায়ী কামরুল নারায়ণগঞ্জের অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। সেই টাকার মাধ্যম ছিলেন নূরুল আমিন। মধ্যস্থতাকারীকে হত্যা করে কামরুল টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। এ জন্যই তিনি ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছেন এবং ১৩ অক্টোবর সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। 

নাজিরপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ প্রবীর মিত্র বলেন, ‘কামরুল ইসলামের পাসপোর্ট তদন্ত করা হয়েছে। তিনি ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছেন এবং ১৩ অক্টোবর সকালে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন তিনি তাঁর শ্বশুর বাড়ি মুলাদী উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে ছিলেন। এ ছাড়া কামরুল ইসলামের শ্বশুর খোরশেদ আলম গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বরিশাল আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তাঁর জামাতা নূরুল আমিনকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে খুন করেছে এবং সিঙ্গাপুর চলে গেছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ 

অপরদিকে, নিহতের মরদেহ ফেরত পেতে বরিশাল আদালতে আবেদন করেছেন তাঁর স্বজনেরা। আগামী ২৩ অক্টোবর এই বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করেছেন বিচারক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত