Ajker Patrika

শতবর্ষী খাসপুকুর ভরাট করে ঘরভাড়া

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
শতবর্ষী খাসপুকুর ভরাট করে ঘরভাড়া

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন বছিলা দক্ষিণপাড়ায় ভাঙ্গা মসজিদ ঘেঁষে ১০ বছর আগেও ছিল একটি সরকারি পুকুর। ঢাকা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন শত বছরের পুরোনো পুকুরটি স্থানীয় বাসিন্দাদের পানির প্রয়োজন মেটাত। সিএস, আরএস জরিপে তো ছিলই; স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন জরিপেও পুকুরটি শনাক্ত করা আছে। অথচ ২২ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির এখন আর অস্তিত্বই নেই। পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা-পাকা ঘর।

গত বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের জায়গায় দুটি একতলা পাকা ভবন ও কয়েকটি টিনের ঘর। ওই সব ঘরে যাঁরা থাকেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘরগুলোতে ২৫টি পরিবারের বসবাস। পাকা ভবনের একটি রুমে সপরিবার ভাড়া থাকেন সাহাবউদ্দিন।

তিনি জানান, মুকুল নামের একজনের কাছ থেকে এক বছর আগে তিনি মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় ঘরটি ভাড়া নেন। এভাবে প্রতি মাসে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া ওঠে।জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্থানীয় দখলদার গোলাম মাওলা মিঞা লাল পুকুরটি ভরাট করে কয়েকটি ঘর তোলেন। ২০২১ সালে মিঞা লাল মারা যান। এখন তাঁর ছেলেরা ভোগদখল করছেন। জায়গাটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কথা বলতে মিঞা লালের ছেলে মুকবুল হোসেন মুকুলকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ভাই হুমায়ুন বলেন, পুকুরের কিছু অংশ আগে তাঁর দখলে ছিল। এখন তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্যসচিব শরীফ জামিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বছিলায় বেদখল হওয়া পুকুরটি আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। এক যুগ আগেও জলাশয়টির পানি স্থানীয়রা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করত। দখলের পর এখন দেখে বোঝার উপায় নেই, ওখানে পুকুর ছিল। এভাবে ঢাকার পুকুরগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।’

অভিযোগ আছে, পুকুরটির অবৈধ দখলের বিষয়ে জেলা প্রশাসন অবগত থাকলেও অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নেয়নি। কেরানীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের নথি অনুসারে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুল হাসান সোহেল পুকুরটি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশপুর মৌজার আরএস ১ নং খতিয়ানভুক্ত ৫৭১ নং দাগের পুকুরশ্রেণির ২২ শতাংশ ভূমি সরেজমিনে তদন্ত করে বেদখলের তথ্য পাওয়া গেছে। কয়েক বছর আগে পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করার পর স্থায়ী স্থাপনা করা হয়েছে। তদন্তকালে দখলদারেরা পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন এমন কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করে এবং বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সালাউদ্দিন আইয়ুব বলেন, ‘সরকারি পুকুর দখলদারদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

জায়গাটি চিহ্নিত করে আমরা উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় যাব।’ তিনি জানান, পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পুকুর সংরক্ষণ ও উদ্ধার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৬৫টি পুকুর ও জলাধার সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক।তিনি বলেন, যেসব পুকুর ভরাট ও দখল করা হয়েছে, তা চিহ্নিত করে উদ্ধার করতে শিগগির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক শরীফ জামিল বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ভূমি অফিস থেকে জলাধার ও পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করে দখলদারদের বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরকে টেকাতে হলে বেদখল পুকুর পুনরুদ্ধার করার কোনো বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত