Ajker Patrika

‘ডন’ হতে গিয়ে হত্যা করে কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও মিরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৮
‘ডন’ হতে গিয়ে হত্যা করে কারাগারে

মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হৃদয়ের বয়স মাত্র ১৭ বছর। এই বয়সে আর দশজন কিশোর স্বপ্ন দেখে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পুলিশের কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু হৃদয়ের স্বপ্ন ছিল অপরাধ জগতের বাদশা (ডন) হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে শাহাদত হোসেন হাসিব নামে আরেক কিশোরকে খুন করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে হৃদয়। এরই মধ্যে এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে।

১২ ডিসেম্বর রাতে হাসিবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল পাঁচজন। সরাসরি হত্যায় অংশ নেয় হৃদয়সহ তিনজন। ঘটনার পর ঢাকা ও ঝালকাঠিতে অভিযান চালিয়ে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো মোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল (৩০), হুমায়ুন কবির (৬৫), মো. সাদ্দাম (১৬), মো. আল-আমিন আহমদ (১৮) ও মোহাম্মদ হৃদয় (১৭)। এদের মধ্যে হৃদয় ও সাদ্দাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ জেড এম তৈমুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঢাকা থেকে পালিয়ে যায় হৃদয়। কয়েকটি জেলা ঘোরার পর ঝালকাঠি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে শাহ আলী থানা-পুলিশ। দশম শ্রেণি পড়ুয়া হৃদয় পুলিশকে জানিয়েছে, সে নেশায় আসক্ত। তার বাবা মিরপুরে ডিম বিক্রি করেন। বাবার সামান্য আয়ে সংসার চলে না। নেশার টাকা জোগাড় করতে আরও চার-পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে হৃদয় প্রায়ই শাহ আলী এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে চুরি-ছিনতাই করত। হৃদয় আরও জানিয়েছে, নেশা করার পর তার মাথা ঠিকভাবে কাজ করে না। যে যা বলে, টাকার জন্য সে তা-ই করতে রাজি হয়ে যায়।

হাসিব হত্যার পেছনের কারণ সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা তৈমুর বলেন, হাসিবের বাবার সঙ্গে জমি নিয়ে এক প্রবাসীর বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে হৃদয় ও সাদ্দামের মতো কিশোরেরা জড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কিংবা নেশার টাকা সংগ্রহের মতো ঠুনকো বিষয় নিয়ে মারামারি থেকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। রাজধানীর অলিগলিতে এমন অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বিভিন্ন এলাকায় এসব কিশোর একত্র হয়ে গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং। শুরুতে এদের কর্মকাণ্ড সাধারণ মারামারিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও আজকাল দেশীয় অস্ত্র থেকে শুরু করে বিদেশি পিস্তলও চলে আসছে কিশোর অপরাধীদের হাতে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা উদ্যোগ নিয়েও এসব গ্যাং নির্মূল করতে পারছে না। সম্প্রতি অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই ও মারামারির ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে ‘ভাইব্বা ল কিং’ গ্রুপের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যেরই বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। কিছুদিন আগে রাজধানীর লালবাগ, তেজগাঁও এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং আকাশ গ্রুপ ও সামী গ্রুপের ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

কিশোরদের এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া তাদের বয়সের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের মতোই হয়ে যাচ্ছে। আর হিরোইজম এমন একটি বিষয়, যা প্রত্যেক কিশোর কিংবা কিশোরীর ভেতরে দেখা যায়। সে অনেক বড় ডাক্তার, পুলিশ বা নায়ক হতে চাইবে। আবার কেউ ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক নেতা হতে চায়। আবার নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক হিরোইজমগুলো হলো, সে অনেক বড় অপরাধী হতে চাইবে, ডন হতে চাইবে, ভিলেন হতে চাইবে। এই চাওয়াগুলো যতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ততই সমাজের জন্য মঙ্গল। এসব থেকে দূরে রাখার জন্য কিশোর-কিশোরীদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে এই চর্চার ঘাটতি আছে। তাই সমাজে কিশোর অপরাধ বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত