Ajker Patrika

সার জমি নদী গিলছে পোটন

রাশেদ নিজাম, নরসিংদী থেকে ফিরে
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ০৯
সার জমি নদী গিলছে পোটন

শিক্ষায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও দখলদারিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সরকারি সার, নদীর তীর, অন্যের জমিসহ অনেক কিছুই তিনি দখল করেছেন। এলাকার সবাই জানলেও ভয়ে মুখ খোলেন না কেউ। তবে ৫৮২ কোটি টাকার সরকারি সার আত্মসাৎ করার খবর প্রকাশের পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। দখলবাজ এই ব্যক্তি হলেন নরসিংদী-২ আসনের সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান (পোটন)।

ভুক্তভোগী ছাড়াও পোটনের একসময়ের কাছের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদীর পলাশে পোটন অন্তত চারটি বিশাল আকারের জমি দখল করেছেন। সবচেয়ে ছোট জমিটির আয়তন প্রায় ৫০ বিঘা। শীতলক্ষ্যার তীর দখল করে লাগিয়েছেন সাইনবোর্ড। নামমাত্র মূল্যে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০ পরিবারের জমি।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, পোটন আগে জাতীয় পার্টি করতেন। পরে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হন।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালের সার কেলেঙ্কারির সময়ও পোটন অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়েছিলেন। পরে পালিয়ে গিয়েছিলেন ভারতে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কামরুল আশরাফ খান পোটনের নম্বরে ফোন করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠালেও উত্তর মেলেনি। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

কামরুল আশরাফ খান (পোটন)উত্থান যেভাবে: বাবা আশরাফ উদ্দিন খান (তারা মিয়া) ছিলেন পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। বড় ভাই আনোয়ারুল আশরাফ খান (দিলীপ) বর্তমানে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের এমপি।

দীর্ঘদিন তাঁদের সার ব্যবসায়
জড়িত থাকা একজন জানান, পোটনের মেজ ভাই ইফতেখার উদ্দিন খান (লিটন) ওমানে প্রবাসজীবন কাটিয়ে ১৯৯৩ সালে দেশে আসেন। পলাশের বড় সার ব্যবসায়ী বেনু মিয়ার প্রতিষ্ঠান ইউরেকায় কাজ নেন লিটন। পরে খান ট্রেডার্স নামে নিজেই ব্যবসা খোলেন। সঙ্গে রাখেন পোটনকে। কারণ, আশরাফ উদ্দিন খান মারা যাওয়ার পর দুই দফা ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন পোটন। লিটনের টাকা আর পোটনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে দ্রুত তাঁরা নিয়ন্ত্রণ নেন সার ব্যবসার।

স্থানীয় দুজন প্রবীণ রাজনীতিক জানান, ১৯৯১ সাল থেকে পোটন ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের পুরোনো আসবাব নিলামে কিনে পরে রং লাগিয়ে বেচতেন। তাতেও চাতুরীর আশ্রয় নেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছিলেন, পরিবারসহ বিদেশ চলে যাবেন, তাই কম দামে বাসার আসবাব বেচে দেবেন। ১৯৯৬ সালে দেশব্যাপী সারের সংকটকালে নরসিংদীতে খান ট্রেডার্সের গুদামে ছিল প্রায় ২০ হাজার টন ইউরিয়া। ১৮৬ টাকা ২৫ পয়সার বস্তা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সারের ডিলারদের ধরপাকড় শুরু হলে লিটন ও পোটন ভারতে পালিয়ে যান। মাসতিনেক পর বিএনপির তখনকার মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়াকে ম্যানেজ করে তাঁরা দেশে ফেরেন। কিছুদিন পরই ঢাকামুখী হয়ে যান পোটন। টয়েনবি সার্কুলার রোডে অফিস নিয়ে পোটন ট্রেডার্স নামে শুরু করেন সার পরিবহন ব্যবসা।

এমপি হয়ে দখল করেন ৪০০ বিঘা জমিএমপি হয়েই দখলবাজি: ঘোড়াশাল পৌরসভার রাস্তা ধরে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষে পাইকসা এলাকায় ওমেরা গ্যাস, প্রাণ, জনতা জুট মিলসসহ বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যদিও এলাকাটির নাম হয়ে গেছে এমপি লাইন। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রাণের পার্কিং। এর সামনে বড় সাইনবোর্ড লেখা, ‘এই সম্পত্তির মালিক আলহাজ্ব কামরুল ইসলাম খান (পোটন) এমপি’। স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রাচীরঘেরা জায়গাটির পরিমাণ ৫০ বিঘার বেশি।

পাশেই একটি জমিতে বালু তোলার কাজ করছিলেন মঞ্জুর মোরশেদ লিটন (৫৫)। তিনি জানান, এমপি থাকাকালে পোটন প্রথমে কিছু জমি কেনেন। তারপর শুরু করেন দখল। মঞ্জুর মোরশেদ লিটনের বাবা হেলাল উদ্দিন ও চাচা কুদ্দুস আলীর সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি ছিল, যার দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। প্রথমে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় পোটন জমি দখল করে নেন। লিটন বলেন, ‘হ্যারা প্রশাসন আর ক্যাডার দিয়া আমাদের জায়গাডা দহল কইরা নিছে। হেগো যেই শক্তি, আমরা অনেক দৌড়াদৌড়ি করছিলাম; কিন্তু কোনো সাহায্য পাই নাই। বাধ্য হইয়া জায়গা ছাইড়া দিতে অইছে।’

আরেক ভুক্তভোগী হেমায়েত (৪০) জানান, তাঁদের পরিবারের ৩৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে গেছেন পোটন। তাঁদের চার ভাইয়ের নামে ছিল ৮ শতাংশ জমি। ২৪ লাখ টাকায় কেনার কথা বলে রেজিস্ট্রি করার পর দেওয়া হয় মাত্র ৮০ হাজার টাকা। তা প্রত্যাখ্যান করায় পরে কোনো টাকা ছাড়াই জমি দখল করে নেন পোটনের লোকজন।

জোর করে মানুষের ও নদীর জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। নদীর জায়গা দখলের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করবে।

টয়েনবি সার্কুলার রোডে অফিস নিয়ে ‘পোটন ট্রেডার্স’ নামে সার পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন কামরুল আশরাফ খান (পোটন)দেশছাড়া হিন্দু পরিবার: ঘোড়াশালের ধলাদিয়া দিগদা এলাকায় প্রায় ১৩০ বিঘা জমি পোটনের দখলে। এমপি থাকাকালে পোটন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০টি পরিবারের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে জোর করে ওই জমি কিনে নেন। পরিবারগুলো ভয়ে ভারতে চলে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘এমপি সাবের পক্ষ থেকে প্রথমে কইছে ১ লাখ করে টেহা দিব প্রতি ডিসিমিলের লাইগা। কাগজ কইরা নেওনের পরে দিছে ৩০ হাজার কইরা।’

হিন্দুধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির দিগদায় জমি ছিল। কিন্তু পোটনের কাছে অসহায় হয়ে পরে পাশের এলাকায় গিয়ে বাড়ি করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুরা এলাকায় এমপিগো লোকজন। আমরা হিন্দু মানুষ, প্রতিবাদ করার সাহস নাই। যেই কয় টেহা দিছে, হেইডা দিয়ে এহানে ঘর উঠাইয়া থাকতাছি।’

নরসিংদী-২ আসনের এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের দাবি, সহোদরের জবরদখলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। গত ১০ এপ্রিল তিনি বলেন, জমি দখলের বিষয়ে তিনি কিছু শোনেননি। তাঁর কাছে কেউ অভিযোগও দেয়নি।

সার আত্মসাতের তদন্ত: ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আমদানি করা ইউরিয়া সার খালাস করার পর সরকারি গুদামে পৌঁছানোর কাজ পেয়েছিল পোটনের মালিকানাধীন পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। পোটন ৫৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ হাজার টন সার আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল ইস্যু করেন। এর ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ-সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে দুদক গত ৪ এপ্রিল বিসিআইসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। তাতে দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনসহ সার পরিবহনের চুক্তির নথিপত্র চাওয়া হয় ১২ এপ্রিলের মধ্যে। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, এখনো চিঠির জবাব আসেনি।

কঠোর অবস্থানে থাকার দাবি শিল্পসচিবের: বিসিআইসি সূত্রে জানা যায়, পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি চেয়ে গত ২০ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিসিআইসি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে যাবতীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে বিসিআইসিকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সার পৌঁছে দেওয়ার জন্য পোটন ট্রেডার্সকে আমরা সময় দিয়েছিলাম, তারা পারেনি। এখন আমরা কঠোর অবস্থানে। বিসিআইসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক জরিমানা ও মামলা করা হয়েছে।’

বিএডিসির জেনারেল ম্যানেজার (সার ব্যবস্থাপনা) আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা নভেম্বরে পোটন ট্রেডার্সকে কালোতালিকাভুক্ত করি এবং তাদের এবার কাজ দেওয়া হয়নি। তারা বারবার সার বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শুনেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত