Ajker Patrika

পাহাড়-টিলার বোবা কান্না

মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) 
পাহাড়-টিলার বোবা কান্না

সিলেটের পাহাড়ি উপজেলা হিসেবে পরিচিত জৈন্তাপুর। এই উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি পাহাড় ও টিলা ছিল। এসব পাহাড় ও টিলার ওপর নজর পড়ে ভূমিখেকোদের। তাঁরা মাটি কেটে বিক্রি করার পাশাপাশি আবাসস্থল গড়ে তুলতে এসব পাহাড়-টিলা নির্বিচারে হত্যা করছেন। প্রায় অর্ধেক টিলা-পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। পাহাড়-টিলার বোবা কান্না প্রকৃতিকে বিষণ্ন করলেও ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সমানতালে চলে পাহাড় কাটা। বেশির ভাগ সময় নিঝুম রাতে ও ভোরবেলায় জঙ্গলে ঘেরা পাহাড় ও টিলা কাটা হয়। কয়েক বছরে জৈন্তাপুর উপজেলার প্রায় অর্ধেক পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও পাহাড়খেকোদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না কেউ।

সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে সমতল করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুকচিরে সমতল করা জায়গায়স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর নির্মাণ করছেন। সে সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করা হচ্ছে। প্রকৃতির বুকে মানুষের এমন থাবায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

পাহাড়-টিলা কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক খননযন্ত্র ও ফেলুডার মেশিন। এগুলো দিয়ে দ্রুত মাটি কেটে ফেলা হয়। পরে মাটিগুলো ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তিন-চার বছর আগে পাহাড় কাটা শুরু হয়। দুটি ইউনিয়নের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ পাহাড়ই কাটা হয়েছে।বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসা পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে চোখের সামনে। পাহাড়ের মাটি দিয়ে বিভিন্ন খাল-বিল ভরাট করার ফলে অল্প বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে পুরো উপজেলা। ফসলের জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপা মনি দেবী বলেন, ‘পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।খবর পেয়েছি, একটি চক্র গভীর রাতে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমি অভিযানে যাওয়ার খবর পেয়ে বালুবোঝাই তিনটি ট্রাক ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা। কাউকে না পাওয়ায় জরিমানা করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি পরিবেশের কাজ, তারপরও আমি সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। যাঁরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাঁদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত