Ajker Patrika

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির রুদ্ধশ্বাস কাহিনি

আপডেট : ২২ জুন ২০২১, ১২: ৩৪
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির রুদ্ধশ্বাস কাহিনি

ঢাকা: ২০১৬ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। কীভাবে হয়েছিল এই চুরি? গতকাল বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিহাসে নজিরবিহীন এই রিজার্ভ চুরির নেপথ্যে ছিল উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা।

চুরির বিষয়টি টের পাওয়া যায় একটি ত্রুটিপূর্ণ প্রিন্টার থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের কাছে প্রিন্টারের এই ত্রুটি ছিল একটি নিত্যদিনের সমস্যা। সাধারণ যান্ত্রিক ত্রুটি ভেবে এটি নিয়ে মাথা ঘামানোর বিশেষ প্রয়োজন মনে করেনি কেউ। এটা যে একসময় অনেক বড় মাথা ব্যথার কারণ হবে, তা কারও ভাবনাতেই ছিল না।

এটা কারও মাথায় আসেনি যে অন্য দশটা সাধারণ প্রিন্টার আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রিন্টারের এমন প্রিন্ট বের না হওয়ার ঘটনা এক নয়। রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবনের দশম তলায় একটি সুরক্ষিত কক্ষে ছিল এই প্রিন্টারের অবস্থান। ত্রুটিপূর্ণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হতো এটিকে। ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা লেনদেনের নথি প্রিন্ট করা হতো এই প্রিন্টার দিয়ে।

রিজার্ভ চুরির পর এই প্রিন্টার সম্পর্কে কর্তব্যরত ডিউটি ম্যানেজার জুবায়ের বিন হুদা পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যখন দেখা গেল প্রিন্টারটি কাজ করছে না, তখন এটিকে অন্যান্য দিনের মতো একটি সাধারণ ঘটনা হিসেবেই মনে করা হয়েছিল। জুবায়ের বলেছিলেন, ‘এ ধরনের সমস্যা আগেও দেখা গিয়েছিল।’

বাংলাদেশ ব্যাংক যে অনেক বড় একটি সমস্যার মুখে পড়েছে এ ঘটনাই ছিল তার প্রথম ইঙ্গিত। হ্যাকাররা ততক্ষণে ব্যাংকের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমে ঢুকে পড়েছিল। আর এ সময়ই তারা এ যাবৎকালের দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনাটি ঘটাতে শুরু করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল ১০০ কোটি ডলার চুরি করা, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা হাতিয়ে নিতে হ্যাকার দলটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রস্তুত রেখেছিল অসংখ্য ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, দাতব্য সংস্থা এবং ক্যাসিনো। কিন্তু কারা ছিল এই হ্যাকার, কোথা থেকেই বা এসেছিল?

ঘটনাটি যাঁরা অনুসন্ধান করেছিলেন তাঁদের মতে–ঘটনার সব ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট একটি দিকে যাচ্ছিল। আর তা হলো–উত্তর কোরিয়া!

ঘটনা পরম্পরায় উত্তর কোরিয়াই হতে যাচ্ছিল এই সাইবার অপরাধের প্রধান সন্দেহভাজন। পৃথিবীর অন্যতম গরিব দেশ এটি এবং প্রযুক্তি, অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোতে এই দেশ বাকি দুনিয়া থেকে প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মতে, দুর্ধর্ষ এই চুরিটি করতে উত্তর কোরিয়া সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা সেই হ্যাকার দল ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তাদের সহযোগীরা কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিল। সাইবার নিরাপত্তার জগতে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ‘ল্যাজারাস’ গ্রুপ নামে পরিচিত। এই ল্যাজারাস হলো বাইবেলে বর্ণিত একটি চরিত্র, যিনি মৃত্যুর পর ফিরে এসেছিলেন।

কারা এই ল্যাজারাস: ল্যাজারাস হ্যাকারদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তবে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত এই গ্রুপের প্রধান সন্দেহভাজনের একটি ছবি প্রকাশ করতে সক্ষম হয় এফবিআই। তাঁর নাম পার্ক জিন–হিয়োক। এ ছাড়া পার্ক জিন–হেক, পার্ক কোয়াং–জিন নামগুলোও তিনি ব্যবহার করেছেন। কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবেই তিনি পরিচিত। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো একটি থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। পরে চীনের বন্দরনগরী দালিয়ানে চোসান এক্সপো নামে একটি উত্তর কোরিয়ান কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। এই কোম্পানি মূলত অনলাইন গেম ও জুয়া খেলার প্রোগ্রাম তৈরি করে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করে।

দালিয়ানে থাকা অবস্থায় পার্ক জিন–হিয়োক একটি ইমেইল ঠিকানা ও একটি সিভি তৈরি করেছিলেন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তিনি তাঁর নিজস্ব যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। সাইবার ফুটপ্রিন্ট এটাই নির্দেশ করছে যে, ২০০২ সালের শুরু থেকে ২০১৩ কিংবা ২০১৪ সাল পর্যন্ত দালিয়ানেই অবস্থান করছিলেন পার্ক।

এফবিআইয়ের তদন্তকারীরা পার্ক জিন–হিয়োকের একটি ছবি প্রকাশ করতে সক্ষম হন। এই ছবি ২০১১ সালে চোসান এক্সপোর ম্যানেজার বাইরের এক ক্লায়েন্টের সাথে পার্কের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় ব্যবহার করেছিলেন। ছবিতে পার্কের চেহারায় সাদামাটা এক উত্তর কোরিয়ান যুবকের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যার বয়স ৩০ বছরের কম কিংবা বেশিও হতে পারে। তাঁর গায়ে একটি কালো শার্ট, তার ওপর একটি চকলেট–বাদমি রঙের স্যুট। প্রথম দেখায় যার চেহারায় কোনো বিশেষত্ব ধরা পড়বে না। এফবিআই বলছে, ছবিটি সেই সময়ের, যখন দিনের বেলায় প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করতেন পার্ক, আর রাতের বেলায় হ্যাকার।

২০১৮ সালের জুনে মার্কিন কর্তৃপক্ষ পার্কের বিরুদ্ধে কম্পিউটার জালিয়াতির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র ও যোগাযোগ বিচ্যুতি ঘটানোর অভিযোগ আনে। এই কাজগুলো ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত করেছিলেন তিনি। বিচারের আওতায় আনা গেলে এর জন্য পার্কের সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারত।

বিবিসি বলছে, রাতারাতি হ্যাকারে পরিণত হয়নি পার্ক। তিনি হলেন উত্তর কোরিয়ার এমন হাজারো যুবকের একজন, যাদেরকে শৈশব থেকেই সাইবার যোদ্ধা হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গণিতে মেধাবী এ ধরনের শিশুদের ১২ বছর বয়সেই তাদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে উত্তর কোরিয়ার রাজধানীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের প্রশিক্ষণ।

ঘটনার এ পর্যায়ে আসা যাক বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই প্রিন্টারে যেখান থেকে রিজার্ভ চুরির প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। প্রিন্টারটি সমস্যা দূর করার পরই ব্যাংক কর্মীদের জন্য এমন কিছু অপেক্ষা করছিল, যা কি–না খুবই দুশ্চিন্তাজনক। প্রিন্টারের ভেতর থেকে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের একটি বার্তা বেরিয়ে এসেছিল। এই ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেখানে মার্কিন ডলারে বাংলাদেশের রিজার্ভ জমা হয়।

হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে অর্থ ছাড়ের নির্দেশ দেয়, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার। এই বিষয়ে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে জানতে চায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হ্যাকাররা যে সময়টি বেছে নিয়েছিল তার জন্য বেকায়দায় পড়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

খুব সতর্কতার সঙ্গে হ্যাকিংয়ের সময়টি বেছে নিয়েছিল ল্যাজারাস গ্রুপ। তারা হ্যাকিং শুরু করেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায়। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। নিউ ইয়র্কের সময় অনুযায়ী সেই সময়টি ছিল বৃহস্পতিবার সকাল, পুরোদমে ব্যাংকের কাজ চলছিল সেখানে। পরদিন শুক্রবার এবং শনিবারও বন্ধ থাকায় টানা দুই দিনের ছুটিতে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ছুটি শেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন বিষয়টি অনুধাবন করতে শুরু করে ততক্ষণে নিউ ইয়র্কে শুরু হয়ে যায় সাপ্তাহিক ছুটি। এই সময়টিই বেছে নিয়েছিল হ্যাকাররা। পুরো ব্যাপারটি সামনে আসার আগেই অন্তত তিন দিনের সময় পেয়ে গিয়েছিল হ্যাকাররা। তারা আরও একটি কৌশল অবলম্বন করেছিল। এ ক্ষেত্রে নিউ ইয়র্ক থেকে ডলার ছাড় হয়ে গেলে সেগুলো কোথাও না কোথাও নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল তাদের। তাই তারা এই অর্থ ফিলিপাইনের ম্যানিলায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চন্দ্র বর্ষের প্রথম দিন হওয়ায় ফিলিপাইনসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ছুটি চলছিল তখন। ফলে সব মিলিয়ে পাঁচ দিনের সময় পেয়েছিল হ্যাকার দল। এ থেকেই বোঝা যায়, দিন ক্ষণ মিলিয়ে চুরির ঘটনাটি ঘটাতে বেশ সময় নিয়ে পরিকল্পনা করেছিল হ্যাকাররা।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে একটি সিভি ডাউনলোড করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে পড়েছিল হ্যাকাররা। সিভিটি ছিল রাসেল আহলাম নামে এক ব্যক্তির, যিনি একজন চাকরি প্রত্যাশী ছিলেন। আসলে এই নামে কেউ ছিল না। হ্যাকাররাই এই সিভিটি তৈরি করেছিল ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে তাদের ভাইরাস ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। ব্যাংকের কোন একটি কম্পিউটার থেকে সিভিটি ডাউনলোড করার পরই সেই কম্পিউটার হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পরে এই কম্পিউটার থেকে তারা অন্যান্য কম্পিউটারে প্রবেশ করতে শুরু করে।

হ্যাকাররা অর্থ স্থানান্তরের জন্য ম্যানিলার জুপিটার স্ট্রিটে থাকা ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের একটি শাখাকে বেছে নিয়েছিল। ২০১৫ সালের মে মাসে এই শাখায় তারা চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। এই অ্যাকাউন্টগুলোকে সন্দেহের বাইরে রাখতে তারা আরও কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টেই ৫০০ ডলার করে জমা রেখেছিল হ্যাকাররা।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিন্টারে যখন ত্রুটি চিহ্নিত হয় ততক্ষণে অন্তত ৩৫টি গন্তব্যে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড়ের নির্দেশ দিয়ে দেয় হ্যাকাররা। প্রিন্টারটি তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারত। তাই এটিরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল তারা।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, হলিউড সিনেমায় যেমনটি ঘটে–ঠিক তেমনিভাবে ছোট্ট একটি ভুল করে বসেছিল হ্যাকাররা। ফিলিপাইনে আরও অসংখ্য ব্যাংক রেখে জুপিটার ব্যাংক বাছাই করাই ছিল তাদের সেই ভুল। কারণ জুপিটার নামে ইরানের একটি জাহাজ রয়েছে। ফলে মার্কিন স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার সিস্টেম জুপিটার শব্দটি শনাক্ত করে সন্দেহজনক বিবেচনায় আটকে দেয় হ্যাকারদের বেশির ভাগ অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশ। তবে, আটকে দেওয়ার আগেই পাঁচটি লেনদেনে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় দিয়ে দেয় নিউ ইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক। এর মধ্যে ২ কোটি ডলারের একটি লেনদেন ছিল শ্রীলঙ্কার দাতব্য প্রতিষ্ঠান শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে। কিন্তু ফাউন্ডেশন বানানে ভুল করায় সেই অর্থছাড়ও আটকে যায়।

শেষ পর্যন্ত ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তর করতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। যে পরিমাণ অর্থ চুরি হতে যাচ্ছিল, তার তুলনায় এই অর্থ কিছুই নয়। তবু বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি অনেক বড় অঙ্ক। বাংলাদেশ এখনো সেই অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত