Ajker Patrika

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন /যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ এখন আর নিরাপদ নয়

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র এখন আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ জায়গা নয়—এমনটাই বলছেন ফরাসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কারমিগনাকের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাফায়েল গ্যালার্দো। তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন কর ও ব্যয়সংক্রান্ত বিলের কারণেই এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

গ্যালার্দো ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিলের ৮৯৯ নম্বর ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই ধারা অনুযায়ী, যেসব দেশের করনীতিকে যুক্তরাষ্ট্র ‘বৈষম্যমূলক’ মনে করবে, সেসব দেশের ব্যক্তি ও কোম্পানির ওপর কর বাড়ানো হবে। তাই অনেকেই একে ‘প্রতিশোধমূলক কর’ বলেও অভিহিত করছেন।

গতকাল (৬ জুন) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কারমিগনাকের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাফায়েল গ্যালার্দো বলেন, ‘আমেরিকা এখন বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন করনীতি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।’

ফরাসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কারমিগনাক ২০২৪ সালে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে কাজ করেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক মিটিংয়ে ট্রাম্পের এই বিলকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি থেকে ‘বৈশ্বিক আর্থিক নৈরাজ্য’ সৃষ্টির সূত্রপাত বলে উল্লেখ করে। কারমিগনাক জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে ডলারের মান কমতে শুরু করেছে এবং মার্কিন শেয়ারবাজারে ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের গ্রাহকদের জন্য দিয়েছে বিশেষ পরামর্শ, যেখানে মার্কিন বাজার থেকে বিনিয়োগ কমিয়ে ইউরোপীয় বাজার, বিশেষ করে জার্মানিতে সম্পদ সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিটের বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, ট্রাম্পের নতুন কর আইন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের ওপর আস্থা কমিয়ে দেবে। ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের খারাপ আর্থিক অবস্থার কারণে এই আস্থা এমনিতেই নড়বড়ে। জার্মান বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান অ্যালিয়ান্স এসইয়ের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা লুডোভিক সুব্রান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন করনীতির কারণে ডলারের দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে এবং শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশ পতন হতে পারে।

গ্যালার্দোর মতে, বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত এবং তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ও আইনের শাসনের বিষয়ে উদ্বেগ, যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মিত্রদেরও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, ‘কেন ঝুঁকি কমানো হবে? কারণ যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি একটি অবিশ্বস্ত ও অনিশ্চিত সামরিক মিত্র হয়ে উঠেছে। তাই নিজেদের সরবরাহব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে হবে এবং নতুন বাজার খুঁজতে হবে।’

কারমিগনাক এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে ইউরোপের দিকে নজর দিচ্ছে। বিশেষ করে জার্মানি, যেখানে সাম্প্রতিক কিছু সংস্কার বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস সামরিক শক্তি বাড়ানো, টেকসই অবকাঠামোতে খরচ করা এবং করপোরেট কর কমানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

গ্যালার্দো বলেন, ‘ট্রাম্প এমন কিছু করতে পেরেছেন, যা এর আগে আর কেউ পারেনি, আর তা হলো জার্মানদের খরচ করতে শুরু করানো। একসময় এই জার্মানরা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করত। এখন তারা নিজেদের দেশেই টেকসই অবকাঠামোর জন্য ব্যয় করছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে, বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের হুটহাট সিদ্ধান্ত তাদের জন্য নিরাপদ নয়। এ ছাড়া, করের বোঝা তো আছেই।’

কারমিগনাক গত বছর বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের উত্থানের পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু এ বছর এই প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকে।

তবে ইউরোপীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইতিবাচক পরামর্শ দিয়েছে। এ বছর ইউরোপীয় শেয়ারবাজারকে বিশ্বজুড়ে বিজয়ী হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মে মাসের শেষ নাগাদ, বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক সূচকের মধ্যে আটটিই ছিল ইউরোপীয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত