Ajker Patrika

বড় হচ্ছে শশীর খামারের স্বপ্ন

গোলাম ওয়াদুদ
বড় হচ্ছে শশীর খামারের স্বপ্ন

‘পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি।’ কম কষ্টে কবি জীবনানন্দ দাশ এ পঙ্ক্তি লেখেননি। তবু সবাই এই চাকরির পেছনেই ছোটে। সবাই বলতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। কিন্তু চাকরি তো এক সোনার হরিণ, যার দেখা কেউ কেউ পায়, সবাই পায় না। বছরের পর বছর চেষ্টা করেও একটি চাকরি জোগাড় করতে পারেন না অনেকে। আসে হতাশা। অনেক সময় চাকরি না পাওয়ায় আত্মহত্যার খবরও শোনা যায়। তবু এই চাকরির পেছনেই ছোটে তরুণ–যুবারা। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম থাকেন, যারা নিজের মতো করে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন। এমনই একজন হলেন শশী। খামার তৈরির স্বপ্নকে শুধু বাস্তব নয়, সময়ের সঙ্গে বড়ও করছেন তিনি। 

কাগজে–কলমে নাম মোহাইমিনুল ইসলাম হলেও বন্ধু ও আপনজনেরা তাঁকে চেনে শশী নামে। এটাই তাঁর ডাকনাম। স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ থেকে। পড়ালেখা শেষ করে আর দশজনের মতো চাকরির পেছনে ছোটেননি শশী। নামের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে অনেকের মধ্যে না হারিয়ে অনন্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। নিজেকে তৈরি করেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। 

রাজধানীর শঙ্করে বেড়ে ওঠা শশী কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটি খামারের পরিকল্পনা করলেন। তাঁর এ পরিকল্পনা সফল হলো ২০১৯ সালে। তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি গরুর খামার করেন। প্রথমে তাঁরা কয়েকজন মিলে ৫০-৬০ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে খামারের আয় দিয়ে পাঁচজন যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে এই খামারকে আরও কর্মমুখী করার পরিকল্পনা রয়েছে। রয়েছে আসন্ন ঈদুল আজহা নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা। 

এই যে ব্যতিক্রমী একটি পথে এগিয়ে যাওয়া, তার জন্য কিন্তু সাহস লাগে। সেই সাহসটিই কিন্তু দেখিয়েছেন শশী। আর তাঁকে দেখে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বন্ধুরা। এ বিষয়ে তরুণ উদ্যোক্তা শশী বলেন, ছোট বেলা থেকে কৃষির বিষয়ে আমার আগ্রহ বেশি ছিল। ঢাকার আশপাশে কয়েকটি খামার দেখে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এই সখ থেকেই কয়েকজন বন্ধু মিলে এই খামার করি। 

নিজের খামারে সফল উদ্যোক্তা মোহাইমিনুল ইসলাম শশীএকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে চাকরির চিন্তা তাঁর মাথায় আসেনি। সাংবাদিকতাও তাঁকে টানেনি। তিনি হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা। ২০১৬ সালে স্নাতক সম্পন্ন করা শশী বলেন, পরিবার আমাকে ব্যবসা করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। ব্যবসার মূলধন আমার বাবার কাছ থেকে নিয়ে খামার শুরু করি। বাবা আমাকে সব দিক দিয়ে সহায়তা করেছেন। 

সামনেই কোরবানির ঈদ। আর ঈদকে সামনে রেখে শশীর খামারে ব্রাহমা, সিন্ধি, শাহীওয়াল, দেশাল, ফ্রিজিয়ান প্রভৃতি জাতের প্রায় এক শ–এর মতো গরু প্রস্তুত করেছেন। শশীর ভাষ্য, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত দানাদার খাবারের সঙ্গে নিজস্ব উৎস থেকে উৎপাদিত পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা ঘাস দিয়ে গরুগুলোর প্রতিদিনের খাবার তৈরি করা হয়। ছোট আকারে শুরু করলেও খামার দিন দিন বড় হচ্ছে। তাঁর খামারে ৭০ হাজার থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু আছে। 

শশীর এই গরুর খামার গাবতলির আমিন বাজার এলাকায়। নান্দনিক হাউজিংয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন খামারটি। নাম দিয়েছেন ‘আমাদের খামার’ (Our Ranch)। গত বছর কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে ভালো আয় করেছিলেন শশী। সরাসরি হাটে বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে বিক্রি করেছেন বেশ কিছু গরু। এবারও অনলাইনে বিক্রির সুযোগ রেখেছেন তিনি। বললেন, এবার ঢাকার মধ্যে গরু ডেলিভেরি দিতে কোনো চার্জ রাখা হবে না। ক্রেতাদের ঠিকানায় ঈদের ২ / ৩ দিন আগ থেকে ডেলিভেরি দেওয়া শুরু করা হবে। সঙ্গে থাকছে স্লটারিং সার্ভিস। সব ঠিক থাকলে সামনের দিনে এ খামারকে তিনি আরও অনেক দূর নিয়ে যাবেন বলে আশাবাদী।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত