Ajker Patrika

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শরিয়াহ ব্যাংক

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নড়বড়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। একসময় ভুয়া ঋণের আড়ালে অর্থ লুটপাটের কারণে গ্রাহকের আস্থা হারালেও এখন সেই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। তারল্য-সংকট ধীরে ধীরে কমছে, বাড়ছে গ্রাহকের আস্থা। ফলে দেশের ভেতরে যেমন এসব ব্যাংকের আমানত দ্রুত স্ফীত হচ্ছে, তেমনি প্রবাসীরাও তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স পাঠাতে আবারও এগিয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যে। সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনও তার প্রমাণ দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মাত্র এক মাসে এসব ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, আর রেমিট্যান্সপ্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে ৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাস শেষে শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ব্যাংকের আমানত ছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা; যা জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।

অপর দিকে শুধু আমানত নয়, প্রবাসী আয়ের দিক থেকেও ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় বেশি স্থিতিশীল। চলতি বছরের মে মাসে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১ কোটি ডলার, জুন মাসে এই প্রবাহ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ডলারে। সার্বিক হিসাবে এই প্রবাহ কিছুটা কম মনে হলেও পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সামগ্রিক চিত্রে এই যৎসামান্য অর্জনই প্রবাসীদের দিচ্ছে দারুণ ইতিবাচক বার্তা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকিং দেশের দ্রুত বর্ধনশীল খাত। বিগত সরকারের সময় এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামী ব্যাংককে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। ফলে গ্রাহকের আস্থা নড়বড়ে হয়, অনেক আমানত সরে যায়। কিন্তু সরকারের পালাবদলের পর পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আবারও আমানত বাড়ছে। আস্থার এই ধারা অব্যাহত থাকলে শরিয়াহ ব্যাংকিং ফের শক্ত অবস্থানে ফিরে আসবে।’

ব্যাংকগুলোর ভেতরেও চলছে ভরসা ফেরানোর চেষ্টা। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘গ্রাহকেরা এখন জানেন ইসলামী ব্যাংকে অনিয়ম বন্ধ হয়েছে। সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে আমানত বাড়ছে, খেলাপি ঋণ আদায়ও বেড়েছে। এস আলমের জামানত রাখা জমি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা গ্রাহকের মনে বাড়তি নিশ্চয়তা দিয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে ১০টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক এখন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এর মধ্যে বিগত সরকারের সময়ে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ছাড়া বাকি আটটিতেই বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান দাবি করেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরছে। শরিয়াহ ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ছে, তারল্যও বেড়েছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্সপ্রবাহ শক্ত হচ্ছে। এ প্রচেষ্টায় পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে পুরো খাত আরও স্থিতিশীল হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিক্ষোভ থেকে সহিংসতায় উত্তাল ভাঙ্গা, মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা

দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসার সব খাবার খেয়ে গেলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

উত্তাল ভাঙ্গা: থানাসহ চারটি সরকারি দপ্তরে হামলা-ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত অনেকে

সন্তানের গলা কেটে লাশ বাবার হাতে তুলে দিলেন মা

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ দাবিতে জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত