Ajker Patrika

করোনায় ব্যাংকে লাভ ছাঁটাই উভয়েই রেকর্ড

করোনায় ব্যাংকে লাভ ছাঁটাই উভয়েই রেকর্ড

করোনাকালে দেশের ব্যাংকগুলো রেকর্ড মুনাফা করেছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের লাভ এই সময়কালে তার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। কারও কারও লাভের পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়েছে। অথচ এই সময়কালে ব্যাংকগুলো রেকর্ডসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই, বরখাস্ত অথবা পদত্যাগে বাধ্য করেছে। দেশের প্রথম সারির ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক গত ১৯ মাসে ৩ হাজার ৩১৩ জন কর্মীকে ছাঁটাই বা নানা অজুহাতে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার এক নির্দেশনায় তাঁদের সবার চাকরিতে পুনর্বহালের কথা বলেছে।

এই নির্দেশনায় অনেকটাই বিপাকে পড়েছে ব্যাংকগুলো। চাকরিচ্যুত ব্যাংকার-দের আবার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনার ব্যাপারে এসব ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে চাননি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত মে মাস পর্যন্ত করোনায় সারা দেশে ব্যাংকের ১৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় দেড় শ। আর গত মে মাস পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৩৯৯ জন। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, ব্যাংকাররা করোনার সময় কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৃহস্পতিবারের নির্দেশনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তাঁদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় তাঁরা এখন বেশ চাপে আছেন। কারণ, ওই নির্দেশনা তাঁদের মানতে হবে। বোর্ড মিটিং হলে বিষয়গুলো আলোচনা করে বোর্ড যেভাবে বলবে, সেভাবে তাঁরা কাজ করবেন বলে জানান। 

বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এমরানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু ব্যাংক তাদের খরচ কমানোর জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। করোনার সময় এমনিতেই মানুষ কষ্টের মধ্যে ছিল। পরিবার নিয়ে অনেক দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। জীবন ও জীবিকার ঝুঁকি নিয়েছে একসঙ্গে। এর মধ্যে যদি চাকরিও চলে যায়, তাহলে তো কিছুই থাকল না। আমরাও কষ্ট করেছি। তবে কাউকে চাকরিচ্যুত করিনি। সবাই মিলে কষ্ট করে চলেছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে দেশের ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৩ হাজার ৩১৩ জন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আবার কাউকে ছাঁটাই, অপসারণ ও বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ছয়টি বেসরকারি ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তথ্য জেনেছে। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৭০ জন ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয়েছে। আর ২০১ কর্মকর্তাকে অপসারণ, ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

এ সময়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের ২০১, সিটি ব্যাংকের ১ হাজার ৯৮, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২৭৯, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৫, ব্র্যাক ব্যাংকের ১ হাজার ২১১ ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৪৬ কর্মকর্তা ‘স্বেচ্ছায়’ চাকরি ছেড়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই সময়ে ডাচ্-বাংলার ১৪১ ও ব্র্যাক ব্যাংকের ৪৩ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে। একসঙ্গে এত কর্মকর্তার ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগকে বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বাভাবিক বলছে।

জানা যায়, কাগজকলমে স্বেচ্ছায় বলা হলেও বাস্তবে চাপের মুখে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ব্যাংকাররা। ছাঁটাই বা চাকরিচ্যুতির শিকার কর্মকর্তারা বকেয়া বুঝে পাওয়ার আতঙ্কে এবং আরও হয়রানির ভয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করেননি বা মামলায় যাননি। মূলত ছাঁটাই হওয়া ব্যাংকারদের অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শর্ত দেওয়ার পর তা বাস্তবায়নের অজুহাতে ছাঁটাই করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর মুনাফার তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়, করোনার মধ্যেও ব্যাংকগুলো রেকর্ড মুনাফা করেছে। কোনো কোনো ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি মুনাফা করেছে। কমবেশি প্রায় সব ব্যাংকই যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কর্মীদের কারণেই করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে। এ সময়ে অনেক ব্যাংকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। করোনায় মারাও গেছেন কেউ কেউ। অথচ ব্যাংকগুলো অমানবিকভাবে কর্মী ছাঁটাই করেছে।

এ ব্যাপারে এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নুরুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা নিয়ে যত ভয় ছিল, সেটা হয়নি। সব ব্যাংকই ভালো মুনাফা করেছে। কারণ হলো সরকারের প্রণোদনার টাকা, নিজেদের তহবিল মিলিয়ে তাদের কাছে তারল্য ছিল। সেটা তারা বিভিন্ন জায়গায় খাটিয়েছে। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে। ফলে এ সময়ে তারা পুঁজিবাজার থেকে যে আয় করেছে, এ খাত থেকে আগে কখনোই তাদের এত আয় আসেনি। এ সময়ে কর্মীরাও কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে ব্যাংক ভালো আছে। তাই করোনাকালে ব্যবসার পাশাপাশি কর্মীদের দিকেও নজর থাকতে হবে ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোভিডকালে শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ প্রদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত অথবা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।

২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছেন কিংবা চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের (আবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধি অনুযায়ী চাকরিতে বহালের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কিংবা যাঁরা চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের তথ্য ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্ধুর সঙ্গে স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক, ধর্ষণের অভিযোগ স্বামীর

তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুইছানা হত্যা: প্রধান আসামি মোবারেক গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে ব্যাগের মধ্যে গুলির ম্যাগাজিন, যে ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

এনবিআর আন্দোলনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

শাটডাউন কর্মসূচি করুক, বৈঠক হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত