Ajker Patrika

ঘোষণা আজ

কৃষি ও পল্লিঋণে নতুন লক্ষ্য সাড়ে ৩৯ হাজার কোটি

  • করোনার পর কৃষিঋণ বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি।
  • ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ৩৫ হাজার কোটি।
  • ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় বাড়ছে ১,৫০০ কোটি।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে কৃষির গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর সেই লক্ষ্যপূরণে সরকারের দেওয়া কৃষি ও পল্লিঋণের পরিমাণ বাড়ছে।

করোনার পর থেকে ঋণের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে কৃষিঋণের লক্ষ্য ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি, সেখানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য তা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ ছয় বছরের মধ্যে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বাড়তে চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে এবার কৃষিঋণ বিতরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণের এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করবেন।

এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালে এই লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা; যা নতুন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কম। তবে গত বছর দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষিঋণের এই লক্ষ্যমাত্রায় ঠিক পৌঁছাতে পারেনি। তারা প্রায় ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কম।

এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা, ২০২২-২৩ সালে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি, ২০২১-২২ সালে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ছয় বছরে কৃষিঋণের লক্ষ্য ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

ব্যাংকগুলো যদি কৃষিঋণে আগ্রহ দেখায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে, বাজারে চালের সরবরাহ ঠিক থাকবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ড. জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি অর্থনীতিবিদ

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের কাছে এখন বেশি ঋণের প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যদি কৃষিঋণে আগ্রহ দেখায়, তাহলে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে, বাজারে চালের সরবরাহ ঠিক থাকবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই ঋণের লক্ষ্য আরও বাড়ানো উচিত, যাতে কৃষক এবং ব্যাংক উভয়ের লাভ হয়।’

তবে কৃষিঋণ বাড়ানোর পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুদের হার বাড়ানো এবং ব্যাংক খাতে নগদ সংকট অনেক ব্যাংককে ঋণ দেওয়ায় পিছিয়ে ফেলেছে। তদুপরি মাঠে তদারকি না থাকায় অনেক কৃষক ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আরেকটি সমস্যা হলো, বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রামীণ এলাকায় সরাসরি ঋণ দিতে না পারায় তারা এনজিওর মাধ্যমে ঋণ দেয়। সেখানে কৃষকেরা অনেক সময় বেশি সুদের বোঝা নেন। ফলে সরকারের সুবিধা সঠিকভাবে পৌঁছায় না। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়, যাঁরা কৃষকের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেন। এতে প্রকৃত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং খাদ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। যারা এই অনিয়মে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, কৃষিঋণ শুধু অর্থের বিষয় নয়, এটা দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সরকার কৃষিকে একটি কৌশলগত খাত হিসেবে ঘোষণা করেছে। কৃষকেরা যেন সহজে ঋণ পান, সেটি এখন প্রধান লক্ষ্য। নতুন অর্থবছরে ঋণের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে, যা সফল করতে মাঠপর্যায়ের নজরদারি বাড়ানো ও ব্যাংকের সক্রিয়তা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত