Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কে বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কাটছাঁট করল আইএমএফ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের শুল্কে বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কাটছাঁট করল আইএমএফ

যুক্তরাষ্ট্রের শতবর্ষের রেকর্ড উচ্চতার শুল্কের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বেশির ভাগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বর্ধিত বাণিজ্য উত্তেজনা বিশ্ব প্রবৃদ্ধিকে আরও ধীর করবে।

আজ মঙ্গলবার সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতির ভিত্তিতে তৈরি করা এই পূর্বাভাসে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালের জন্য ০ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এ ছাড়া, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য জানুয়ারিতে দেওয়া ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে যথাক্রমে ৩ শতাংশ ও ২ দশমিক ৮ শতাংশ করেছে আইএমএফ।

বিশ্বজুড়ে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতিও প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতিতে কমবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী গড় মুদ্রাস্ফীতি হবে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, আর ২০২৬ সালে তা নামবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের অলিভিয়ে গোঁরাসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এমন এক নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে ৮০ বছর ধরে চলে আসা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে।’

পিয়ের অলিভিয়ে গোঁরাসা বলেন, এই শুল্ক ও বাণিজ্য উত্তেজনা কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ, চীন ও অন্যান্য অঞ্চলকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়লে আর্থিক বাজার অস্থির হবে, যা বিনিয়োগ ও পণ্যের উৎস নির্বাচন নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।

বিশ্ব বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও বড়োসড়োভাবে কমানো হয়েছে। ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের তুলনায় অর্ধেক।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উচ্চ শুল্কের ফলে এই দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, যার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক বাণিজ্যে।

তবে এখন পর্যন্ত ডলারের বাজারে বড় ধস দেখা যায়নি। পিয়ের অলিভিয়ে গোঁরাসা বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখছি না। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে আমরা এখনো উদ্বিগ্ন নই।’

তবে তিনি স্বীকার করেন, যদি এই বাণিজ্য উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা চলতে থাকে, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়বে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০০০-১৯ সময়কালের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ গড় থেকে অনেকটাই কম।

বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থায় স্থিরতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে আইএমএফ বলেছে, নির্ভরযোগ্য ও পরিষ্কার বাণিজ্য কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইএমএফ বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ করেছে, যা ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধির অর্ধেক। এটি বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান খণ্ডনকেই প্রতিফলিত করে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তীব্রভাবে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অনেক কমে যাবে বলে জানান গুরিনচাস। তিনি যোগ করেন, এটি বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধিকে টেনে নামাচ্ছে।

বাণিজ্য অব্যাহত থাকলেও এর খরচ বেশি হবে এবং এটি কম কার্যকর হবে। বিনিয়োগ এবং পণ্য ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি রয়টার্সকে বলেন, যেকোনো রূপে বাণিজ্য ব্যবস্থার পূর্বাভাসযোগ্যতা ও স্পষ্টতা পুনরুদ্ধার করা একেবারে জরুরি।

মার্কিন প্রবৃদ্ধি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি

নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং বাণিজ্য উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে আইএমএফ ২০২৫ সালে মার্কিন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০ দশমিক ৯ শতাংশ কমিয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ করেছে, যা ২০২৪ সালের ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে পুরো ১ শতাংশ কম এবং ২০২৬ সালে ০ দশমিক ৪ শতাংশ কমিয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ করেছে।

গোঁরাসা সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফ যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখছে না, তবে অর্থনৈতিক নিম্নগামিতার সম্ভাবনা প্রায় ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। আইএমএফ শুল্ক এবং পরিষেবা খাতের অন্তর্নিহিত শক্তির কারণে ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মুদ্রাস্ফীতি ৩ শতাংশে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিচ্ছে, যা জানুয়ারিতে তাদের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি।

এর অর্থ হলো, ফেডারেল রিজার্ভকে মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা ধরে রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। গোঁরাসা বলেন, অনেক আমেরিকান এখনো কোভিড মহামারির সময় হওয়া মুদ্রাস্ফীতির উল্লম্ফনে আতঙ্কিত।

হোয়াইট হাউস কর্তৃক ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে অপসারণের যেকোনো পদক্ষেপের প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে গোঁরাসা বলেন, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বাধীন থাকতে পারা খুবই জরুরি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাওয়েলের ওপর তাঁর আক্রমণ তীব্র করার সঙ্গে সঙ্গে সোমবার মার্কিন শেয়ারবাজারে তীব্র পতন ঘটে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তবে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারের শুরু ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

ট্রাম্পের শুল্কে মার্কিন প্রতিবেশী কানাডা এবং মেক্সিকোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমেছে। আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, কানাডার অর্থনীতি ২০২৫ সালে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যেখানে জানুয়ারিতে উভয় বছরের জন্য ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

তারা পূর্বাভাস দিয়েছে, মেক্সিকো শুল্ক দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে, যা জানুয়ারির পূর্বাভাস থেকে তীব্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস, ২০২৬ সালে ১ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে পুনরুদ্ধারের আগে।

ইউরোপ ও এশিয়ায় কম প্রবৃদ্ধি

আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, ইউরোপ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ১ দশমিক ২ শতাংশ ধীর হবে। উভয় পূর্বাভাসই জানুয়ারি থেকে প্রায় ০ দশমিক ২ শতাংশ কম। তবে স্পেন ব্যতিক্রম। ২০২৫ সালে দেশটির ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা আগের চেয়ে ০ দশমিক ২ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী।

প্রতিবাদী শক্তির মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান মজুরি এবং জার্মানির ‘ঋণ ব্রেকে’ বড় ধরনের পরিবর্তনের পর প্রত্যাশিত আর্থিক শিথিলতার কারণে শক্তিশালী ভোগ। আইএমএফ ২০২৫ সালে জার্মানির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০ দশমিক ৩ শতাংশ কমিয়ে শূন্য শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ০ দশমিক ২ শতাংশ কমিয়ে ০ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে।

ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ১ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাবে, যা জানুয়ারির পূর্বাভাসের চেয়ে ০ দশমিক ৫ শতাংশ কম। আর ২০২৬ সালে ১ দশমিক ৪ শতাংশের সামান্য বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বেশি গিল্ট রিটার্ন এবং দুর্বল বেসরকারি ভোগ মূল্যায়ন করে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ২০২৫ সালে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জানুয়ারির পূর্বাভাসের তুলনায় ০ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানে আগে ০ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলা হয়েছিল।

চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের জন্য ৪ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে, যা জানুয়ারির পূর্বাভাস থেকে যথাক্রমে ০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ০ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

গোঁরাসা বলেন, রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল চীনের ওপর শুল্কের প্রভাব ২০২৫ সালে প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ, তবে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থার কারণে তা পুষিয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬
২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে না কোনো শাখা, অবকাঠামো বা এটিএম বুথ; গ্রাহকেরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় পাবেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা।

নতুন যুগের আবেদনকারীরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদনের শেষ সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এই ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে।

মূলধনে বড় শর্ত

২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং প্রচলিত ব্যাংকের মতোই সিআরআর (নগদ জমা অনুপাত) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত) বজায় রাখতে হবে।

এই ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা পর্যায়ের লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ থাকবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও আনতে হবে, যার পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।

অ্যাপেই পুরো ব্যাংকিং

প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হবে সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর। কোনো শাখা বা এটিএম থাকবে না; বরং গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব সেবা নিতে পারবেন। প্লাস্টিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে। গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব সেবা পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর আওতায়; যা ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

যোগ্যতার কঠোর মানদণ্ড

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য এই ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে ব্যাংকিং পেশায় অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।

ক্যাশলেস সমাজের পথে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।’ তিনি জানান, এসব ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

যাচাইয়ের পর অনুমোদন

প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণরা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নতুন বছরের প্রথমে শুরু হতে পারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম।

চ্যালেঞ্জ এখন দক্ষতার

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল তথা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্ত রাখা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।

এ বছর প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১০টি দেশ থেকে ৪৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

এরা মূলত ফ্যাব্রিক মিল (ডেনিম ও নন-ডেনিম), গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক, সুতা উৎপাদক, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ ও ট্রিমস, কেমিক্যালস, মেশিনারি বা প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ার। ফাইল ছবি
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ার। ফাইল ছবি

সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আজ মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৮০ তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১ হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক এবং অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি। মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশীপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে; কিন্তু ব্যাংকটি ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়।

বিএসইসি এও জানায়, এর আগে ৯৬৫ তম কমিশন সভায় ওই বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই অপরাধে এবার ব্যাংকের তৎকালীন এমডি শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মার্কিন তুলায় শুল্কছাড়ে স্পষ্টতা চায় বিজিএমইএ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে বিজিএমইএ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে বিজিএমইএ। ছবি: আজকের পত্রিকা

পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরে বিজিএমইএ। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে মার্কিন তুলার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ঘোষিত শুল্ক সুবিধা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা। মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইকমের লি ইন, কারগিলের ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসির ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রির ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েন বোসম্যানসহ আরও অনেকে।

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নতুন শুল্কছাড় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য এক বড় সুযোগ। কিন্তু এই সুবিধা কার্যকরভাবে পেতে কারখানাগুলোকে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, বর্তমানে আমদানি করা তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তবে এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ। মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধার বিষয়ে গবেষণা করে সুতা উৎপাদনকারীদের তথ্য সরবরাহ করা হলে তাঁরা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত