Ajker Patrika

বাজেট টানছে জলবায়ু খাত

মো. মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
বাজেট টানছে জলবায়ু খাত

জলবায়ু অর্থনীতি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রশ্নে বাজেটে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) জলবায়ু, পরিবেশ ও দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২২৮টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এসব প্রকল্পে ব্যবহৃত অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বরাদ্দ শুধু প্রকৃতি রক্ষার খাতেই সীমিত নয়, এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে টেকসই অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রশ্ন। জলবায়ু অর্থনীতির সঙ্গে রপ্তানি সুযোগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত হয়ে গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি), সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন কাঠামো (জিসিআরডি) এবং ডেলটা অ্যাপ্রাইজাল ফ্রেমওয়ার্কের (ডিএএফ) অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন আজকের পত্রিকাকে জানান, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এ প্রকল্পগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ তিনটি লাভ পাবে—এসডিজি অর্জনে অগ্রগতি, জলবায়ু ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ এবং বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি সুবিধা। তিনি মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন আজকে আর শুধু একটি নীতিগত বিষয় নয়, এটা এখন অর্থনীতির অপরিহার্য অংশ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন অবশ্য আরও সতর্ক। তিনি বলেন, প্রকল্প নেওয়ার আগে ভালোভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। কনসেপ্ট পেপার ভালো না হলে অনেক অর্থ নষ্ট হবে। অর্থায়নের নিশ্চয়তা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার সক্ষমতা আগেই যাচাই করা জরুরি।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

এডিপিতে প্রস্তাবিত ২২৮টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব ইকুইপমেন্ট ফর দ্য এয়ার পলিউশন মনিটরিং’। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৪টি মনিটরিং স্টেশন বসানো হবে, যা নগরের বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপে গুরুত্বপূর্ণ হবে। প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে জাপানের জাইকা।

এ ছাড়া রয়েছে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়ানোর ‘বি-স্ট্রং’ প্রকল্প, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে সেচব্যবস্থার উন্নয়ন, ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি’ প্রজেক্টসহ পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও আইসিটি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যার প্রায় ১.২ শতাংশ—২১ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে পরিবেশ ও জলবায়ুসংশ্লিষ্ট এই ২২৮টি প্রকল্পে।

২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত জলবায়ু ৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই খাতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই বরাদ্দকে বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী হিসেবে দেখছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, লবণাক্ততা ও বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের পদক্ষেপ খুবই প্রয়োজনীয় ও তাৎক্ষণিক।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের পরিচালক (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও নেগোসিয়েশন) ড. মোহাম্মদ নাজমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত