Ajker Patrika

বিজিএমইএ-ইউএসটিআর বৈঠক

আইএলওর গাইডলাইনে শ্রম আইন সংশোধন চায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি দল। ছবি: সংগৃহীত
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি দল। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর গাইডলাইন অনুসরণ করে বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এর সংশোধনী করার পরামর্শ দিয়েছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি দল। আজ সোমবার ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এক বৈঠকে এই পরামর্শ দেয় তারা।

এ সময় তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি বজায় রেখে বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কার করাকে অত্যন্ত প্রত্যাশিত বলে অবিহিত করেন। গুলশানে চিফ অব মিশন রেসিডেন্সে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ব্রেন্ডন লিঞ্চের নেতৃত্বাধীন দুই দিনের সফরে রোববার বাংলাদেশে আসে।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি রেজওয়ান সেলিম, পরিচালক ফয়সাল সামাদসহ আরও অনেকে। এ ছাড়া মার্কিন প্রতিনিধিদলের অপর দুই সদস্য ছাড়াও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং লেবার অ্যাটাশে লীনা খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শ্রম আইন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক হার কমানোর বিষয়টি এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ২০ শতাংশ ট্যারিফ সুবিধা অর্জন করেছি, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ওপর গড় এমএফএন (মোস্ট ফেভারড ন্যাশন) শুল্ক ১৬.৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক মিলিয়ে মোট শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৩৬.৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তিনি বেসরকারি খাতে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত, পোশাক শিল্পের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে রাখতে শুল্ক আরও কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধির সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’

এ জন্য বিজিএমইএ সভাপতি ‘স্ট্যাকিং মেথড’ ব্যবহার করে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে এই শুল্কের সমন্বয় করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই কৌশলটি কেবল শুল্কের বোঝা কমাবে না, বরং মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পোশাকে যদি ২০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, তবে সেই পণ্যের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক হারে অব্যাহতি পাওয়া যাবে।

বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এই সুযোগকে কাজে লাগাতে অত্যন্ত আগ্রহী। তবে এর জন্য কোনো প্রক্রিয়া বা ফর্মুলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারের মূল্যায়ন এবং ট্রেসেবিলিটি তা নিশ্চিত করা হবে, তা তারা জানতে চান। প্রত্যুত্তরে মার্কিন প্রতিনিধিদল জানান, ইউএস কাস্টমস বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে। আশা করা যায় যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি বজায় রেখে বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কার করার বিষয়ে প্রতিনিধি দলের পরামর্শের বিষয়ে, বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তার বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তার বোর্ড শ্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ৮১টি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করেছে।

তিনি বলেন, বিজিএমইএ বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এর সংশোধনী নিয়ে সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং শিল্প ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে দেশের বাস্তবতা, শিল্পের প্রেক্ষাপট, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং বাস্তবায়ন যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

দেশ ও শিল্পের ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো ক্রমান্বয়ে সাধিত হচ্ছে, সেগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার আরও কমানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে সভার সমাপ্তি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত