Ajker Patrika

পণ্য খালাসে নীতির সংস্কার

  • বিধিমালা সংস্কারে যৌথ উদ্যোগ
  • ৭৯ পণ্যে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা।
  • গ্রিন-রেড-ইয়েলো চ্যানেল আসছে।
  • ইলেকট্রিক পণ্যে সময় বেশি।
আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
পণ্য খালাসে নীতির সংস্কার

বন্দরে আটকে থাকা আমদানি করা পণ্যের দ্রুত খালাস নিশ্চিত করতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানি নীতি আদেশ ও বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষাবিষয়ক বিধিমালায় সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বলছে, যেসব পণ্য বিগত এক দশক মানসম্মতভাবে আমদানি হয়ে আসছে, সেগুলোর জন্য ঝুঁকি বিবেচনায় দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ম তৈরি করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমদানি নীতি আদেশ, ২০২৪-২০২৭-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় তিনটি পৃথক চ্যানেল—গ্রিন, ইয়েলো ও রেড বিস্তৃতভাবে ব্যবহার করা হবে। গ্রিন চ্যানেলের আওতায় আসা পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর পর সরাসরি ছাড় করা যাবে। ইয়েলো চ্যানেলে শর্ত সাপেক্ষে পরীক্ষা শেষে ছাড় দেওয়া হবে, আর রেড চ্যানেলের পণ্য বাধ্যতামূলক পরীক্ষার পরই ছাড় পাবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অধিশাখা) মো. আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পণ্য দ্রুত ছাড়ের জন্য কিছু বিধি ও আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে বিভিন্ন পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।’

বর্তমানে আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২০২৪ অনুসারে ৭৯টি পণ্যের বিএসটিআই অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে ৩২টি খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ও রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। বিএসটিআই সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক পণ্যের পরীক্ষায় সময় বেশি লাগায় অনেক পণ্য মাসের পর মাস বন্দরে পড়ে থাকে, ফলে আমদানিকারকদের বাড়তি খরচ গুনতে হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এলইডি লাইট পরীক্ষায় ৯০ কর্মদিবস, ব্যাটারিচালিত পণ্যে ৬০ কর্মদিবস এবং বৈদ্যুতিক লাইটে ২৮ কর্মদিবস সময় লাগে। এই বিলম্ব আমদানিকারকের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিএসটিআই মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিচ্ছি। এনবিআর এই ব্যবস্থায় ১৯টি সংস্থাকে একত্রে সমন্বয় করছে। পাশাপাশি, যেসব পণ্যের মান বিগত ১০ বছরে কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনায় দ্রুত ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হবে। এ জন্য আইন ও বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।’

তবে ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা বলছে, শুধু নীতিমালার সংস্কার নয়; বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আরও জরুরি। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি হাফেজ এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমি ৩০-৪০ বছর ধরে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট আমদানি করছি। তবু আমাদের পণ্য কোনো কারণ ছাড়াই কাস্টমস এক মাস আটকে রেখেছে। শুধু নিয়ম নয়, বাস্তবায়নকারীদের মানসিকতার পরিবর্তনও দরকার।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসটিআই সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অস্থায়ী ছাড়ের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক পণ্যের ক্ষেত্রে। পণ্য আমদানির পর বিএসটিআই পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের গুদামে পণ্য পৌঁছলে সিলগালা করে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তা বাজারজাত করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য সহজীকরণের স্বার্থে বন্দরে সময়মতো পণ্য খালাস এখন জরুরি। অথচ বিএসটিআই পরীক্ষা, কাস্টমস-প্রক্রিয়া ও আমদানি নীতির জটিলতা একত্রে মিলে পণ্যের গতি থামিয়ে দিচ্ছে। সরকার যদি বাস্তবমুখী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে, তাহলে পণ্য খালাসে গতি ফিরবে, ব্যবসায়ী পর্যায়ে খরচ কমবে এবং ভোক্তার হাতেও পণ্য পৌঁছাবে তুলনামূলক কম দামে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির পরই অস্ত্রের লাইসেন্স পান উপদেষ্টা আসিফ

জুলাই নিয়ে ফেসবুকে পুলিশ সদস্যের আপত্তিকর পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এনপিবি পিস্তল কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র

গায়ের জোরে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি মামলা বসিয়ে দেওয়া হয়: দুদক চেয়ারম্যান

প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হলেন যাঁরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত