Ajker Patrika

আইএমএফের কিস্তির অপেক্ষা নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ৫১
ইআরএফ ও ফরেন চেম্বার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইআরএফ ও ফরেন চেম্বার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি গ্রহণের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদের মতো বাজেট তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এমন তথ্য জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

অর্থ উপদেষ্টা জানান, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়। আইএমএফের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। আমরা সিদ্ধান্ত নেব আমাদের মতো। আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক অবস্থান অনুসরণ করে বাজেট প্রণয়ন ও অর্থনীতি পরিচালনা করব।’

আইএমএফের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে—বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সম্পূর্ণভাবে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয়। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই শর্ত পূরণ করা সম্ভব নয়; কারণ, বাজারকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন করে দিলে ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে; যা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সে জন্য সরকার একটি নিয়ন্ত্রিত ও বাস্তবধর্মী বিনিময় হার ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

উল্লেখ্য, সরকার ইতিমধ্যে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচিতে রয়েছে; যার মধ্য থেকে ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে পেয়েও গেছে। বাকি ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্তপূরণের এই জটিলতা তৈরি হয়েছে; যা বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফকে নীতির প্রশ্নে একটা দ্বিমুখী অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন সরকার আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্ণ শর্ত অনুসরণ করতে চায় না। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নেব। বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আমাদের স্বার্থ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করব।’

এদিকে গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য সার আমদানির প্রস্তাব, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জন্য এলএনজি আমদানির প্রস্তাব এবং বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বড় প্রকল্পের অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সরকার ২০০টি জিপ কেনার জন্য ১৭২ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে, যা বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, এই ক্রয় প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য, সড়ক, বিদ্যুৎ, রেলপথ এবং পুলিশের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪৫০ কোটি টাকার সার আমদানির অনুমোদন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য প্রায় ৭ হাজার ২৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে শক্তিশালী করবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়ক হবে।

এদিকে সরকার আগামী কয়েক বছরে মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণে কাজ করছে, যেখানে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ৮ দশমিক ৪৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারকে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

সরকারের এই উদ্যোগগুলো আন্তর্জাতিক ঋণচুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালিত হলেও সরকারের দৃঢ় অবস্থান এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর স্বাধীনতা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে আইএমএফের শর্তগুলো এবং আন্তর্জাতিক চাপের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করাটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত