Ajker Patrika

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন /ট্রাম্পের শুল্ক ধসিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অগ্রযাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের সৌজন্য
বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের সৌজন্য

২০২৫ সালটি হয়তো বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। গত বছর, এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে দেশটি। ছাত্র-জনতা এক স্বৈরশাসককে হটিয়ে দেয়, আর পুরো দেশ পড়ে যায় বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি। এরপর, যখন নতুন সরকার অর্থনীতি সামাল দিতে ব্যস্ত, তখনই আসে আরেক দুঃসংবাদ—যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে! বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল, যার মাধ্যমে জ্বালানি, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য আমদানি করা হয়। এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশের ওপর শুল্ক স্থগিত করেন। তবে তা আবার চালু হওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কে দিন কাটছে পোশাক খাতের শ্রমিকদের।

ঢাকার উপকণ্ঠে থাকা ২৫ বছর বয়সী মুর্শিদা আক্তার গত পাঁচ বছর ধরে সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালান। সম্প্রতি তিনি ও আরও প্রায় ২০০ জন শ্রমিক (যাদের ৭০ শতাংশই নারী) সাভারের শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত ৪-এ ইয়ার্ন ডাইং নামের একটি পোশাক কারখানায় নতুন চাকরি নেন।

শুল্কের ব্যাপারে আশঙ্কা থাকলেও মুর্শিদা নতুন কর্মস্থলে এসে বেশ খুশি। আগের চেয়ে বেতন কিছুটা বেশি— মাসে ১৫৬ ডলার (প্রায় ১৯ হাজার টাকা)। পথঘাটও আগের চেয়ে সহজ, পরিবেশটাও তুলনামূলক ভালো। ট্রাম্পের শুল্কের বিষয়ে কথা বললে মুর্শিদা বলেন, ‘আমার চিন্তা, অর্ডার কমে যাবে। তাহলে তো কাজও কমে যাবে।’

প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ, যা আয়তনে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের সমান। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন হয় দেশটি। একসময় মনে করা হতো, দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থ। তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে দেশটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে।

বিশ্বের দরজায় দরজায় সেলাইয়ের কাজ করেছে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা, বিশেষ করে নারীরা। ফলে এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় জীবনমান পাশের দেশ ভারতের নাগরিকদের থেকেও উন্নত।

মুর্শিদা আক্তারের মতো প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে কাজ করছেন। তাঁর স্বামী ও সন্তানসহ আরও অনেকের পরিবার এই কাজের ওপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্পের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যেতে পারে। অবশ্য শুল্ক স্থগিত হওয়ার আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠি লেখেন। তিনি ৯০ দিনের সময় চেয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ আরও বেশি আমেরিকান তুলা ও অন্যান্য পণ্য কিনবে, যাতে করে দেশটির ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ট্রাম্পের এই হুমকিকে বলেন, ‘ক্ষমতার এক কুৎসিত প্রদর্শনী।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দারুণ প্রবৃদ্ধির পর এখন যখন দেশটি মন্দার মুখে, তখন এভাবে আঘাত হানা অমানবিক।’

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই পোশাক— আর সবচেয়ে বেশি পোশাক যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এমনকি যদি ট্রাম্প জুলাইয়ে তার ‘গ্রেস পিরিয়ড’ শেষে ৩৭ শতাংশ শুল্ক না-ও ফেরান, তবুও ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে, যা তিনি প্রায় সব দেশের ওপরই আরোপ করেছেন।

কিন্তু এই ১০ শতাংশ শুল্কও পোশাকশিল্পের মতো কম মুনাফার খাতে বড় ধাক্কা। প্রতিযোগিতা তীব্র—চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রতিনিয়ত পাল্লা দিতে হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রের সমর্থকেরা এক আশার বার্তা হিসেবে দেখলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের জোট ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থিক খাতে যে লুটপাট চলেছিল, তা সামাল দিতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সাল নাগাদ অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে—এই আশাতেই ছিলেন তারা। কিন্তু শুল্ক সেই আশায় পানি ঢেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক আগামী দুই বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপও বাড়ছে। গত বছর তারা বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে।

ঢাকা-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা আইএমএফ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে আছি—সাবসিডি কমাতে হবে, জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে।’

১০ শতাংশ শুল্ক ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের হৃৎপিণ্ডে আঘাত হানছে—যে খাতটি নিজেকে বদলে ফেলেছে গত এক দশকে। ২০১৩ সালে ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে, প্রাণ যায় ১ হাজার ১০০ জনের বেশি শ্রমিকের। এ ঘটনাটি পশ্চিমা ক্রেতাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল—তারা ভেবেছিল, হয়তো আর এখানকার কারখানাগুলোর সঙ্গে কাজ করা যাবে না।

তবে খাতটি তখনই বুঝে ফেলে, টিকে থাকতে হলে বদলাতে হবে। রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষ এখনো পড়ে আছে সাভারগামী প্রধান সড়কের ধারে। এ স্থানটি যেন এক চিরন্তন স্মারক—যা পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে।

পোশাকশিল্পে প্রতিষ্ঠানসংখ্যা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ এবং কর্মসংখ্যা বেড়েছে। এখন বাংলাদেশে ২৩০টি কারখানা আছে, যারা ইউএস–ভিত্তিক ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (LEED) সার্টিফায়েড—যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উৎপাদনের প্রতীক। বিশ্বের আর কোনো দেশে এত LEED সার্টিফায়েড পোশাক কারখানা নেই।

মুর্শিদা আক্তার যে ৪এ ইয়ার্ন ডাইং কারখানায় কাজ করেন, সেটিও এর মধ্যে পড়ে। নামের মধ্যে ‘ইয়ার্ন ডাইং’ থাকলেও আসলে প্রতিষ্ঠানটি এখন আর সুতার রং করে না। তারা এখন উচ্চমূল্যের জ্যাকেটসহ বিভিন্ন আউটারওয়্যার তৈরি করে—যেখানে থাকে উন্নত মানের জিপার, ওয়াটারপ্রুফ ফিনিশিংসহ নানা জটিলতা।

তাদের ক্রেতাদের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কারহার্ট থেকে শুরু করে কেলভিন ক্লেইনের মতো ব্র্যান্ড, যদিও ইউরোপীয় ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।

কারখানার পাঁচটি ফ্লোরেই কর্মীরা ব্যস্তভাবে কাটিং, সেলাই ও ফিনিশিংয়ের কাজ করছে—এই মুহূর্তে তারা কস্টকোর জ্যাকস নিউইয়র্ক সিরিজের পণ্য তৈরি করছে। ফ্যানের গুমগুম আওয়াজ, সুচের কটকট শব্দ ও হালকা সংগীত—সব মিলিয়ে কর্মপরিবেশটা খোলামেলা, হাওয়াদার এবং তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক, এমনকি প্রাক-বর্ষা মৌসুমেও।

কারখানার ভেতরে সাইনবোর্ডগুলোর ভাষা প্রথমে ইংরেজি, তারপর বাংলা। এখানকার অন্য অনেক কারখানার মতোই, ৪এ ইয়ার্ন ডাইং প্রস্তুত থাকে বিদেশি পরিদর্শকদের চোখে চোখে থাকার জন্য।

বাইরের দেয়ালজুড়ে ঝুলছে সবুজ গাছপালা, ছাদজুড়ে বসানো আছে সৌর প্যানেল, যা কারখানার উৎপাদনে সহায়তা করে।

গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের সময়কার আন্দোলনে এই কারখানাও হামলার মুখে পড়ে। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার ইমাম বলেন, তারা কাজ বন্ধ করেননি।

বিক্ষোভকারীরা তখন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল—ধারণা করা হচ্ছিল, তারা হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিল। খন্দকার ইমাম বলেন, ‘আমাদের গেটে এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।’ তিনি হেলমেট পরে নিজেই কর্মীদের সঙ্গে গেটের বাইরে গিয়ে রুখে দাঁড়ান।

শেষ পর্যন্ত কেউ গুরুতর আহত হননি, আর একদিনের জন্যও উৎপাদন বন্ধ হয়নি বলে জানান ইমাম। তাঁর ভাষায়, এই কোম্পানি যেমন টিকে আছে, তেমনি দেশও এখন বিপদের মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে অভ্যস্ত।

কোম্পানির প্রধান পরিবেশ ও টেকসই বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশের পুরো অর্থনীতি এই সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। যারা হাসিনাকে সরিয়েছে, তারাও এটা বোঝে। কারণ আমাদের শ্রমশক্তিই একমাত্র সম্পদ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে না কোনো শাখা, অবকাঠামো বা এটিএম বুথ; গ্রাহকেরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় পাবেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা।

নতুন যুগের আবেদনকারীরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদনের শেষ সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এই ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে।

মূলধনে বড় শর্ত

২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং প্রচলিত ব্যাংকের মতোই সিআরআর (নগদ জমা অনুপাত) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত) বজায় রাখতে হবে।

এই ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা পর্যায়ের লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ থাকবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও আনতে হবে, যার পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।

অ্যাপেই পুরো ব্যাংকিং

প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হবে সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর। কোনো শাখা বা এটিএম থাকবে না; বরং গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব সেবা নিতে পারবেন। প্লাস্টিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে। গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব সেবা পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর আওতায়; যা ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

যোগ্যতার কঠোর মানদণ্ড

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য এই ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে ব্যাংকিং পেশায় অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।

ক্যাশলেস সমাজের পথে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।’ তিনি জানান, এসব ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

যাচাইয়ের পর অনুমোদন

প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণরা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নতুন বছরের প্রথমে শুরু হতে পারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম।

চ্যালেঞ্জ এখন দক্ষতার

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল তথা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্ত রাখা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।

এ বছর প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১০টি দেশ থেকে ৪৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

এরা মূলত ফ্যাব্রিক মিল (ডেনিম ও নন-ডেনিম), গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক, সুতা উৎপাদক, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ ও ট্রিমস, কেমিক্যালস, মেশিনারি বা প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ার। ফাইল ছবি
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ার। ফাইল ছবি

সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আজ মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৮০ তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১ হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক এবং অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি। মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশীপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে; কিন্তু ব্যাংকটি ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়।

বিএসইসি এও জানায়, এর আগে ৯৬৫ তম কমিশন সভায় ওই বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই অপরাধে এবার ব্যাংকের তৎকালীন এমডি শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন তুলায় শুল্কছাড়ে স্পষ্টতা চায় বিজিএমইএ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে বিজিএমইএ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে বিজিএমইএ। ছবি: আজকের পত্রিকা

পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরে বিজিএমইএ। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে মার্কিন তুলার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ঘোষিত শুল্ক সুবিধা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা। মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইকমের লি ইন, কারগিলের ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসির ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রির ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েন বোসম্যানসহ আরও অনেকে।

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নতুন শুল্কছাড় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য এক বড় সুযোগ। কিন্তু এই সুবিধা কার্যকরভাবে পেতে কারখানাগুলোকে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, বর্তমানে আমদানি করা তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তবে এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ। মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধার বিষয়ে গবেষণা করে সুতা উৎপাদনকারীদের তথ্য সরবরাহ করা হলে তাঁরা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত