Ajker Patrika

অর্থনীতি এগোলেও প্রবৃদ্ধি ও আস্থা রয়ে গেছে সংকটে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

কয়েক মাস ধরে ব্যবসায় সম্প্রসারণের ধারা অব্যাহত থাকলেও এর গতি স্থিতিশীল নয়। গত বছর জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে অর্থনীতি সংকোচনের মুখে পড়েছিল, যা পরবর্তী মাসগুলোতে পুনরুদ্ধারের পথে ফিরে আসে। অক্টোবরে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পর নভেম্বরে গতি আরও বাড়লেও ডিসেম্বরে তা কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। জানুয়ারিতে গতি বাড়লেও ফেব্রুয়ারিতে তা আবার কমেছে। অর্থাৎ অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারা অব্যাহত থাকলেও বাড়ন্তের গতি আগের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে। এতে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উৎপাদনে একটু ধীর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে ব্যবসায়ীদের আস্থাও কিছুটা কমেছে।

গতকাল রোববার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ পারচেজিং ম্যানেজার্স’ ইনডেক্স (পিএমআই) সূচকের সর্বশেষ তথ্যও এই প্রবণতাকে ইঙ্গিত করছে। ফেব্রুয়ারি মাসে সামগ্রিক স্কোর জানুয়ারির তুলনায় ১.১ পয়েন্ট কমে ৬৪.৬-এ নেমেছে, যা সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে দেশের সামগ্রিক পিএমআই স্কোর দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৬, যা জানুয়ারির তুলনায় ১ দশমিক ১ পয়েন্ট কম। এই সর্বশেষ পিএমআই সূচক নির্মাণ ও সেবা খাতে ধীর সম্প্রসারণ হার এবং কৃষি ও উৎপাদন খাতে দ্রুত সম্প্রসারণ হারের কারণে হয়েছে।

পিএমআই শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। সূচকের মান ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং ৫০-এর নিচে হলে সংকোচন বোঝায়। আর মান ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গত জুলাইয়ে এক ধাক্কায় পিএমআই মান ৩৬ দশমিক ৯ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। আগস্টে তা কিছুটা বেড়ে ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট হয়। আর অক্টোবরে এসে ৫৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে ওঠে।

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শতবর্ষের পুরোনো সংগঠন এমসিসিআই ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ এক বছর ধরে যৌথভাবে পিএমআই প্রণয়ন করছে। সূচকটি প্রণয়নে সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যালয় (এফসিডিও) ও সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট (এসআইপিএমএম)।

পলিসি এক্সচেঞ্জ চেয়ারম্যান ও সিইও, এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের পিএমআই সূচক টানা পাঁচ মাসের স্থায়ী সম্প্রসারণ নির্দেশ করে, যা রপ্তানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা এবং কৃষিতে মৌসুমি প্রবৃদ্ধি দ্বারা চালিত হয়েছে। তবে নির্মাণ এবং সেবা খাতে ধীর সম্প্রসারণ দেখা গেছে। দুর্বল চাহিদা, জ্বালানি-বিভ্রাট এবং চলমান বিক্ষোভের কারণে ব্যবসায়িক আস্থা কম। টেকসই পুনরুদ্ধার আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারের দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে।

সূচক পরিমাপে চারটি খাত বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেই চারটি খাত হলো উৎপাদন, কৃষি, নির্মাণ ও সেবা। তার মধ্যে জানুয়ারিতে পণ্য উৎপাদন গতি কমলেও কৃষি, ব্যবসা, নির্মাণ ও সেবা খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে গতি কিছুটা বেড়েছে। তাতে সামগ্রিকভাবে পিএমআই মানও বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।

পিএমআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি খাত টানা পাঁচ মাসের সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে এবং দ্রুত সম্প্রসারণ হার প্রদর্শন করেছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ইনপুট খরচ এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকের দ্রুত সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। কর্মসংস্থান সূচক ধীর সংকোচনের হার প্রকাশ করেছে।

উৎপাদন খাত টানা ছয় মাসের সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে এবং দ্রুত সম্প্রসারণ হার প্রকাশ করেছে। নতুন অর্ডার, কারখানার উৎপাদন, ইনপুট ক্রয় এবং সরবরাহকারী ডেলিভারি সূচকের দ্রুত সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। তবে নতুন রপ্তানি, সমাপ্ত পণ্য, আমদানি এবং কর্মসংস্থান সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। অর্ডার ব্যাকলগ সূচক দ্রুত সংকোচনের হার প্রদর্শন করেছে।

নির্মাণ খাত টানা তিন মাসের সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে, তবে ধীরগতিতে। নতুন ব্যবসা এবং নির্মাণ কার্যক্রম সূচক ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড করেছে, যেখানে ইনপুট খরচ সূচকের দ্রুত সম্প্রসারণ দেখা গেছে। কর্মসংস্থান সূচক সম্প্রসারণে ফিরে এসেছে এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচক ধীর সংকোচনের হার প্রকাশ করেছে।

সেবা খাত টানা পাঁচ মাসের সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে, তবে ধীরগতিতে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থান সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। অর্ডার ব্যাকলগ সূচক সংকোচনে ফিরে এসেছে এবং ইনপুট খরচ সূচকের দ্রুত সম্প্রসারণ দেখা গেছে। কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ এবং সেবা—সব প্রধান খাতে ভবিষ্যৎ ব্যবসা সূচকের ধীর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ: আড়াই বিলিয়নের গড় ধারাবাহিকতা দুই মাস

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ: আড়াই বিলিয়নের গড় ধারাবাহিকতা দুই মাস

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পরিবারের প্রয়োজনে প্রতিদিনই টাকা পাঠাচ্ছেন। এই অর্থ দেশে আসে রেমিট্যান্স হিসেবে, যা দেশের টাকার মান ধরে রাখে, আমদানি খরচ মেটায় এবং বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করে। অক্টোবর মাসে দেশে এসেছে ২৫৬ কোটি ডলার—সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম, কিন্তু গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, টানা দুই মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি গড় ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। এই প্রবাসী আয় শুধু পরিবারের সহায়তা নয়, দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতারও এক অদৃশ্য চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ১৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময় ছিল ৮০৯ কোটি ডলার। মাত্র চার মাসেই রেমিট্যান্স বেড়েছে ২০০ কোটি ডলার বেশি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছাড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যতক্ষণ হুন্ডি ও পাচার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততক্ষণ রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে। এভাবে প্রতি মাসেই ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে।’

তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ২০২৪ সালের একই মাসে যা ছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ১৬ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অর্থাৎ অক্টোবরের তুলনায় সামান্য কম।

মাসভিত্তিক প্রবাহের হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বর ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ এবং অক্টোবর ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশে ডলার মার্কেট এখন স্বাভাবিক এবং খোলাবাজারে হুন্ডির প্রভাব কমায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলেই রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। বর্তমান ব্যাংকিং রেট প্রায় খোলাবাজারের ডলারের কাছাকাছি, যা প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৩টির মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার এসেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার, বেসরকারি ৪২ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক থেকে এসেছে ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

তবে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক এবং বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট। গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ হয়েছে মার্চ মাসে, ৩২৯ কোটি ডলার। পুরো বছর প্রবাসী আয়ের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এর আগের বছরগুলোতেও ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেখা গেছে; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, ‘দেশের ডলার মার্কেট স্থিতিশীল হওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। হুন্ডির প্রভাব কমায় এই প্রবাহ আরও নিয়মিত হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ দেশকে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে স্থিতিশীলতা, আমদানি ব্যয় মেটানো এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালী ব্যবহার নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি এটি দেশের অর্থনীতির জন্য এক নির্ভরযোগ্য চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গা বিসিক শিল্পনগরী: ৪২ কোটির প্রকল্প চার বছরেও নির্জীব

  • হেলায় নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনা।
  • ৭৮ প্লটের মধ্যে বরাদ্দ হয় ৩১টি।
  • ২৫ উদ্যোক্তার মধ্যে সক্রিয় মাত্র তিনজন।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ১৮
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীর পুরো এলাকা আগাছা-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীর পুরো এলাকা আগাছা-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে ঢুকতেই যেন চোখে পড়ে এক অচেনা নীরবতা। চারপাশে জঙ্গল-আগাছায় ঢাকা রাস্তা, পরিত্যক্ত প্লট, প্রকল্প এলাকাজুড়ে ভবনহীন ঝুলে থাকা তার এবং সার্বিক নিরাপত্তার ঘাটতি—সব মিলিয়ে যেন এক ভুলে যাওয়া প্রকল্পের গল্প। সরকারি ৪২ কোটি টাকায় নির্মিত এ শিল্পনগরী চার বছরেও প্রাণ ফেরাতে পারেনি। ভবন আছে, কিন্তু কাজ নেই; আশা আছে, কিন্তু এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেই।

সরকার ২০২১ সালে ২৫.২ একর জমির ওপর এই শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করে। লক্ষ্য ছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করা, কর্মসংস্থান বাড়ানো, আর জেলার অর্থনীতি চাঙা করা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। ৭৮টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩১টি; এর মধ্যে ৬ জনের বরাদ্দ বাতিল হয় নানা জটিলতায়। ২৫ উদ্যোক্তার মধ্যে মাত্র তিনজন এখন সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন—বাকি প্লটগুলো খালি পড়ে রয়েছে। কিছু জায়গায় ইটের গাঁথুনি শুরু হলেও পরে থেমে গেছে সব।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো এলাকা এখন আগাছা-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাঙা, পানি নিষ্কাশনের উপায় নেই, বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানি বাড়ায় মশার উপদ্রব, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। এখানে রাত হলে অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা শিল্পনগরী, নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি বিনিয়োগে আসা উদ্যোক্তাদের মনে জাগায় শঙ্কা। ফলে একসময় যেখানে কর্মচাঞ্চল্যের বড় আশা ছিল, সেখানে এখন পায়ের আওয়াজও শোনা যায় না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি মূলত থেমে আছে। এখানে সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে; কিন্তু পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট। উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। নানা কারণেই বিসিক এলাকায় ব্যবসা করা মানে বড় ঝুঁকি নেওয়া।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হোসেন। তাঁর কথায়, ‘বিসিক হলো, ভেবেছিলাম এলাকায় কাজের সুযোগ বাড়বে। কিন্তু সবকিছু থেমে গেছে। এখন মনে হয়, এ জায়গায় শুধু আগাছা আর নীরবতাই জন্ম নিচ্ছে। সব সম্ভাবনা উবে গেছে।’

চুয়াডাঙ্গা বিসিকের উপব্যবস্থাপক এ বি এম আনিসুজ্জামান অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, মোট প্লটের ৪০ শতাংশ ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও শিগগির বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাঁরা বরাদ্দ নিয়েও কাজ শুরু করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘কারখানাগুলো চালু হলে কর্মসংস্থান বাড়বে।’

তবে মাঠের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। চার বছর ধরে এভাবে অব্যবহৃত পড়ে থাকা শিল্পনগরী প্রশ্ন তুলছে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। প্রায় ৪২ কোটি টাকার এ বিনিয়োগে এখন পর্যন্ত যে ­ফল, তা হতাশাজনক। শুধু সরকারি অর্থের অপচয় নয়; বরং এটি স্থানীয় উন্নয়নের গতি থামিয়ে দিয়েছে।

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, পানি-বিদ্যুৎ-সংযোগ থেকে শুরু করে রাস্তা, নিরাপত্তা, ড্রেনেজ—সব মৌলিক অবকাঠামোই দুর্বল। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উপযোগী পরিবেশ নেই। অনেকে প্রাথমিকভাবে জমি পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেননি।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শিল্পনগরী কেবল অবকাঠামো দিয়ে টিকে থাকে না; এর সঙ্গে থাকতে হয় প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা ও প্রশাসনিক সহায়তা। চুয়াডাঙ্গার বিসিক প্রকল্পে সেগুলোর অভাব স্পষ্ট।

দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ও অবহেলা এখন প্রকল্পটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। কিছু জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ হলেও তার পাশেই জন্ম নিচ্ছে আগাছা। যেন জীবন্ত উদাহরণ, কীভাবে পরিকল্পনার ঘাটতি এক সম্ভাবনাময় প্রকল্পকে জঙ্গলে পরিণত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫-২৬ অর্থবছর: প্রথম তিন মাসে এক টাকাও ঋণ ও প্রতিশ্রুতি দেয়নি চীন

  • আইডিএ ছাড় করেছে ৩২ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
  • ভারত, জাপান ও রাশিয়াও নতুন বিনিয়োগ বা ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
২০২৫-২৬ অর্থবছর: প্রথম তিন মাসে এক টাকাও ঋণ ও প্রতিশ্রুতি দেয়নি চীন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চীন কোনো ঋণ ছাড় করেনি এবং নতুন ঋণের কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, একই সময়ে ভারত, জাপান ও রাশিয়াও নতুন বিনিয়োগ বা ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে ১১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার পরিমাণ ছাড় হয়েছে। এর মধ্যে আইডিএ ছাড় করেছে ৩২ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, রাশিয়া ৩১ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার, এডিবি ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার ডলার, ভারত ৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার, জাপান ৪ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এআইআইবি ৪ লাখ ডলার এবং অন্যান্য দেশ ছাড় করেছে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

একই সময়ে দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৯১ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এডিবি ৪৮ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার, আইডিএ ১ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং অন্যান্য দেশ ৪১ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। কিন্তু এই সময়ে নতুন করে ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি জাপান, চীন, ভারত, রাশিয়া এবং এআইআইবি।

স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮৯৫ কোটি­­ ডলারের ঋণ ও সহায়তা দিয়েছে চীন। এর মধ্যে গত আট বছরে ঋণ ছাড় হয়েছে ৬০৭ কোটি ডলার। বর্তমানে ৪৬০ কোটি ডলারের চীনা ঋণ পাইপলাইনে রয়েছে।

২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের চুক্তি হয়। এর আওতায় পদ্মা রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা সেতু ও মাতারবাড়ী-বন্দর সংযোগ সড়কসহ বহু বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

চীনা অনুদান এখন অবকাঠামোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও বিস্তৃত। চট্টগ্রামে ৫০০-৭০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল এবং রংপুরে এক হাজার শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা চীনা অনুদান রয়েছে, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ। ২০২৮ সালের মধ্যে এই দুটি হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ৫২ হাজার কোটি টাকা ধার ও ডলারের দর নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ৫২ হাজার কোটি টাকা ধার ও ডলারের দর নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিনিময় হার নির্ধারণপ্রক্রিয়া ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে জামানত ছাড়া দেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক ডলারের দর নির্ধারণ করছে না, বরং রেফারেন্স রেটের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। একই সঙ্গে আইএমএফ প্রশ্ন তুলেছে, জামানত ছাড়া ব্যাংকগুলোকে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া কতটা যৌক্তিক ও টেকসই।

রোববার (২ নভেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরী, ড. কবির আহমেদ; গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ জানতে চায়—বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। জবাবে গভর্নর মনসুর জানান, রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে আইএমএফ বলেছে, রেফারেন্স রেট আসলে বাজারনির্ভর নয়; প্রকৃত বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে হলে তা পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

রেফারেন্স রেট সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত একটি মানদণ্ড, যা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভিত্তিমূল্য হিসেবে কাজ করে। তবে আইএমএফের মতে, এটি ডলারের প্রকৃত বাজারদর প্রতিফলিত করে না এবং আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহে বিকৃতি তৈরি করে।

বৈঠকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও জামানতহীন ঋণ নিয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, গত এক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে কয়েকটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে, যেগুলোর অনেকেই বিল বা বন্ড জমা রাখতে পারেনি। এসব ব্যাংক শুধু প্রতিশ্রুতিপত্র (ডিমান্ড প্রমিসরি নোট) দিয়ে টাকা নিয়েছে, যা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি। আইএমএফ এ প্রথাকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ’ হিসেবে উল্লেখ করে তা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

আইএমএফ আরও জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এসব ঋণে গ্যারান্টার হিসেবে ভূমিকা নিচ্ছে এবং এতে রাষ্ট্রীয় ঝুঁকি কতটা বাড়ছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দেয়নি।

এ ছাড়া বিগত সরকারের সময় গোপন রাখা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করায় আইএমএফ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে সংস্থাটি মনে করে, সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দ্রুত ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে—যা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির অন্যতম শর্ত।

গত জুন শেষে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায়, যা এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেড়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে আর বেসরকারি খাতে তা ১০ শতাংশের ওপরে।

আইএমএফ প্রতিনিধিদল রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও অন্যান্য পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্ন তোলে। তারা জানতে চায়, এসব উদ্যোগ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ও আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব ফেলছে।

বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যে আইএমএফ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে তারা সতর্ক করে দিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও জলবায়ু সহনশীল বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির মাধ্যমে আইএমএফ কর্মসূচিতে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। পরে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়। এখন পর্যন্ত চার কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় ৩৬৫ কোটি ডলার।

বৈঠকের শেষে আইএমএফ স্পষ্টভাবে জানায়, ডলারের মূল্য নির্ধারণ পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে জামানতহীন ঋণ দেওয়ার প্রচলন বন্ধ করতে হবে—অন্যথায় আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক আস্থা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত