Ajker Patrika

ছুরিকাঘাতে হৃৎপিণ্ড ফুটো হয়ে মারা যান শাবি শিক্ষার্থী বুলবুল

সিলেট প্রতিনিধি
ছুরিকাঘাতে হৃৎপিণ্ড ফুটো হয়ে মারা যান শাবি শিক্ষার্থী বুলবুল

ছুরিকাঘাতে হৃৎপিণ্ড ফুটো হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের। বুলবুলের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম এমনটি জানিয়েছেন। আজ বৃহম্পতিবার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন চিকিৎসকেরা।

এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুলবুলের শরীরে ছুরির চারটি আঘাত ছিল। এর মধ্যে পেট, বুক ও উরুর আঘাত গুরুতর। বুকে ছুরিকাঘাতের ফলে তাঁর হৃৎপিণ্ড ফুটো হয়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই বুলবুলের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া হাতে আরেকটি আঘাত থাকলেও তা গুরুতর নয়।’ 

গত সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজিকালুর টিলায় ছুরিকাঘাতে আহত হন বুলবুল আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, তখন টিলায় তাঁর সঙ্গে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীও ছিলেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে বুলবুলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

বুলবুল আহমদ খুনের ঘটনায় ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আর তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ছিনতাইয়ের উদ্দেশেই বুলবুলকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের টিলারগাঁও এলাকার মো. গোলাব আহমেদের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৯), আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (১৯) ও তছির আলীর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৯)। তাঁদের মধ্যে কামরুল ইসলামের বাড়ি থেকে বুলবুলের মোবাইল ফোন ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এদের মধ্যে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন আবুল হোসেন। বাকি দুজনকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ বিচারক সুমন ভূঁইয়া আদালতে তোলা হয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, আসামিরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবেন বলে জানালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।

চার দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি

এদিকে বুলবুল হত্যার ঘটনায় ৪ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন তাঁরা। এ সময় উপাচার্যের হাতে স্মারকলিপি পৌঁছে দেন ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো—উচ্চতর তদন্তের মাধ্যমে বুলবুল হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত প্রকৃত খুনিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে; নিহতের পরিবারকে অতিদ্রুত ক্ষতিপূরণ হিসেবে এককালীন ৫০ লাখ টাকা এবং আগামী ১২ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে অথবা এককালীন ৫০ লাখ টাকা এবং তাঁর পরিবারের ১ জন সদস্যের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে; ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, অনিরাপদ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে, ক্যাম্পাসের টিলাগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রাচীর সংলগ্ন স্থানে কাঁটাতারের ব্যবস্থা করতে হবে; এবং বুলবুলের স্মৃতি রক্ষার্থে বুলবুল হত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও বুলবুল চত্বর ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে ২৫ জুলাইকে বুলবুল হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। 

স্মারকলিপি প্রদান শেষে আশরাফুল বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দাবিগুলো পূরণ করা হবে। বুলবুল হত্যার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তাঁর পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে ডাকবেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবির দিকে লক্ষ্য রেখে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

আশরাফুল আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার বিষয়ে উপাচার্য আমাদের জানান, ক্যাম্পাসে লাইটিং, সিসিটিভি ক্যামেরা সচল ও নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে একটা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। খুব দ্রুত এ দাবি পূরণ করা হবে। বুলবুল হত্যার জায়গায় ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ ও ‘বুলবুল চত্বর’ ঘোষণা এবং ২৫ জুলাই বুলবুল হত্যা দিবস ঘোষণার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিষয়গুলো উত্থাপন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনীম, অধ্যাপক ড. ফাতেমা খাতুন, অধ্যাপক ড. আশরাফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. ইসমত আরা, সহযোগী অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল হোসাইনী, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদ হাসান, সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা, সহকারী অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন, সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, সহকারী অধ্যাপক জুবায়দা গুলশান আরা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইমামুল হোসেন হৃদয়, আশরাফুল আলম আকাশ, মিলন মাহমুদ, নাঈম আহমেদ, হাবিব এবং রাকিব প্রমুখ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত