Ajker Patrika

অবশেষে চিকিৎসা পেল সেই অসুস্থ হাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ১৫: ৫৮
অবশেষে চিকিৎসা পেল সেই অসুস্থ হাতি

সিলেটের মৌলভীবাজারে চিকিৎসার জন্য লোকালয়ে আসা বন্য হাতিটির খোঁজ পাওয়া গেছে। টানা চার দিন খোঁজাখুঁজির পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের সমনভাগ বিটের আলামবাড়ী এলাকায় হাতিটির সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। 

গত ২৫ মে (শনিবার) এ নিয়ে আজকের পত্রিকার অনলাইনে ‘চিকিৎসার জন্য লোকালয়ে অসুস্থ বন্য হাতি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে বন বিভাগ। হাতিটির খোঁজে মাঠে নামে মেডিকেল টিম। 

বন বিভাগ ও স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা জানান, গত ২২ মে (বুধবার) থেকে ২৪ মে (শুক্রবার) বিকেল পর্যন্ত দুর্গাপুর পেট্রল বাংলা ও লবনখুলি এলাকায় মানুষে দ্বারে দ্বারে লোকালয়ে ঘুরছিল হাতিটি। এ সময় স্থানীয় লোকজন হাতিটি অসুস্থ দেখতে পেয়ে কলাগাছসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার সংগ্রহ করে তাকে খেতে দেয়। তখন মানুষের সঙ্গে কোনো সংঘাত ঘটেনি। তবে মানুষের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে স্থানীয়রা হাতিটিকে আবার বনের দিকে তাড়িয়ে দেয়। 

অসুস্থ হাতিটিকে চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রস্তুত করা হচ্ছেস্থানীয়রা জানায়, হাতিটি প্রায় সময় দলছুট হয়ে এভাবে বন ত্যাগ করে লোকালয়ে চলে আসত। এটিসহ বনে রয়েছে মোট চারটি মাদি হাতির দল। 

এরপর হাতিটির অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বন বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল হাতিটির তথ্য সংগ্রহ করে বন দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বন দপ্তর দ্রুত চার সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করে। 

সিলেট বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন ও বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারোয়ারসহ মেডিকেল টিমের প্রধান মো. মুস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত হয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন হাতিটি গভীর জঙ্গলে চলে গেছে। এরপর বনে খোঁজখবর নিয়ে পাওয়া যায়নি।   

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলে বনে হাতিটি খুঁজে বের করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ চার দিন পরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমনভাগ বিটের আলামবাড়ী এলাকায় হাতিটির সন্ধান পাওয়া যায়। সেখান গিয়ে হাতিটিকে ট্র্যাংকুইলাইজারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

ঘটনাস্থলে বন বিভাগ কর্মকর্তারা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেনবিষয়টি নিশ্চিত করে জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন বলেন, ‘স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাতিটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। আমরা দেখেছি হাতিটি মোটামুটি সুস্থ আছে নিজে চলাফেরা করতে পারছে। সেখানকার লোকজন বলেছে, হাতিটিকে গাছ থেকে কাঁঠাল খেতে দেখা গেছে। চিকিৎসক টিম অচেতন করার জন্য হাতিটিকে ট্র্যাংকুইলাইজারের মাধ্যমে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়, কিন্তু হাতিটি অচেতন হয়নি। অচেতন না হওয়ায় তাকে অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা হাতিটিকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখব, আশা করি হাতিটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।’ 

মেডিকেল টিমের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের পশু চিকিৎসক ভেটেরিনারি সার্জন মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাতিটি দেখে বোঝা গেছে অনেক বয়স্ক। বয়স ৬০-৭০ বছর হতে পারে। লিভারসহ বিভিন্ন অর্গান দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। একটু অসুস্থ ছিল, তা ন্যাচরালি সুস্থ হয়ে গেছে। মূলত বার্ধক্যজনিত কারণে এমন হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। হাতিটির কোমরে যে ক্ষতস্থান ছিল, সেটি শুকিয়ে গেছে। সেখানে কোনো পোকা নাই। তার শরীরে ট্র্যাংকুইলাইজারের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছি, যাতে শরীরে পোকা হয়ে ইনফেকশন না হয়। হাতিটির চলাফেরা ও খাবার স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করি দ্রুত ইম্প্রুভ হবে।’ 

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হাতির চিকিৎসার জন্য আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। চিকিৎসা হয়েছে। ভেটেরিনারি পশু চিকিৎসক টিম চিকিৎসা দিয়েছে। বোঝা গেছে, হাতিটির শরীরে এখনো অনেক শক্তি আছে। আশা করি হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ