লবীব আহমদ, সিলেট

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২ হাজার ৫০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার সব সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় কম মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জকিগঞ্জেও কম মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। যাদের ঘরবাড়িতে বেশি পানি উঠেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেমি. ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেমি, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৬২ সেমি., ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেমি, শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেমি. ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে। গত পাঁচ দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ডুবেছে নগরী:
মহানগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, তালতলা, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজারসহ নিম্নাঞ্চল এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে কারও হাঁটু সমান পানি আবার কারও বাসায় কোমর সমান পানি। অনেকের বাসায় পানি ওঠাতে চলে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাসাবাড়িতে উঠেছেন।
তালতলায় থাকা সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ঈদের দিন রাতে ঢুকে পড়া পানি এখনো রয়েছে স্টেশনটিতে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীতে পানি ঢুকলেই আমাদের অফিস ডুবে যায়। এখনো চার ফুট পানির নিচে রয়েছে আমাদের স্টেশন। তবুও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও ৫০ বছর বয়সী জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি হোটেলে কাজ করি। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্বামী বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি কাজ করে সংসার চালাই। ঈদের দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠেছে। এখন ঘরে গলা পানি। পরে ওই দিন ফজরের ওয়াক্তে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখন এখানে খাবারদাবার নেই।
‘যার কারণে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছি না। একটি পাঁচতলার বাসায় পরিবার নিয়ে উঠেছি। শুনেছি যতরপুরের ওই দিকে একজন ত্রাণ বিতরণ করবে, সেখানে গিয়ে এই চিড়া-মুড়ি চেয়ে আনছি। তবুও তারা দিতে চাচ্ছে না। ঘরের ডেগ-বাসন সব পানির নিচে। কিসের ঈদ করব। ঈদ করছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে গ্যাস নেই। এ কারণে রান্নাবান্নাও করতে পারছি না।’
নগরীর উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) জানান, ‘ঈদের আগের দিন রাতের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে। এখন ঘরে কোমর পানি। আমার পরিবারে আটজন সদস্য। বাসায় কোমর পানি হওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি। যার কারণে যারা নিচতলায় থাকেন, তারা সবাই-ই এই পানিতে আক্রান্ত।
আগের বারও পানি উঠছিল। এখন বৃষ্টি হলেই মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ঈদের নামাজ গিয়ে পড়তে হয়েছে হাঁটুসমান পানি ভেঙে গিয়ে। ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা থাকলেও প্রায় সব জায়গায়ই মানুষজন মসজিদে পড়ছেন। এবারের ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে নি। সারা দিন বৃষ্টি আর বাসায় পানি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা। সুরমা নদীও ভরা। পানি যাওয়ার জায়গা নেই আর আমাদেরও বাঁচার উপায় নেই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষ উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না খাবার, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।’
হাসপাতালে পানি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে পানি। তবে সবশেষ বুধবার হাসপাতালের মধ্যে থেকে পানি নেমে যায়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবারে পানি বাড়ার কারণে হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে নিচতলায় থাকায় ইমার্জেন্সি বিভাগের সবকিছু ওপর তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার পানি কমে গেলে তা আবার নিচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।’
মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু:
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলা করে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম। আব্দুল হালিম ওই গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপচালক ছিলেন।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ:
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্ধের এই ঘোষণা দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সভা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ জুন খুলে দেওয়া হয়।
বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী:
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটামুটি সিলেটের সব জায়গায়ই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রিপোর্টে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি। গত ২৯ মে থেকে সিলেটে ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, ৬৩১ টন টন জিআর চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ৯ লাখ করে শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইউএনওরা বণ্টন করছেন।’

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২ হাজার ৫০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার সব সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় কম মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জকিগঞ্জেও কম মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। যাদের ঘরবাড়িতে বেশি পানি উঠেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেমি. ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেমি, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৬২ সেমি., ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেমি, শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেমি. ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে। গত পাঁচ দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ডুবেছে নগরী:
মহানগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, তালতলা, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজারসহ নিম্নাঞ্চল এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে কারও হাঁটু সমান পানি আবার কারও বাসায় কোমর সমান পানি। অনেকের বাসায় পানি ওঠাতে চলে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাসাবাড়িতে উঠেছেন।
তালতলায় থাকা সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ঈদের দিন রাতে ঢুকে পড়া পানি এখনো রয়েছে স্টেশনটিতে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীতে পানি ঢুকলেই আমাদের অফিস ডুবে যায়। এখনো চার ফুট পানির নিচে রয়েছে আমাদের স্টেশন। তবুও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও ৫০ বছর বয়সী জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি হোটেলে কাজ করি। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্বামী বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি কাজ করে সংসার চালাই। ঈদের দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠেছে। এখন ঘরে গলা পানি। পরে ওই দিন ফজরের ওয়াক্তে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখন এখানে খাবারদাবার নেই।
‘যার কারণে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছি না। একটি পাঁচতলার বাসায় পরিবার নিয়ে উঠেছি। শুনেছি যতরপুরের ওই দিকে একজন ত্রাণ বিতরণ করবে, সেখানে গিয়ে এই চিড়া-মুড়ি চেয়ে আনছি। তবুও তারা দিতে চাচ্ছে না। ঘরের ডেগ-বাসন সব পানির নিচে। কিসের ঈদ করব। ঈদ করছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে গ্যাস নেই। এ কারণে রান্নাবান্নাও করতে পারছি না।’
নগরীর উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) জানান, ‘ঈদের আগের দিন রাতের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে। এখন ঘরে কোমর পানি। আমার পরিবারে আটজন সদস্য। বাসায় কোমর পানি হওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি। যার কারণে যারা নিচতলায় থাকেন, তারা সবাই-ই এই পানিতে আক্রান্ত।
আগের বারও পানি উঠছিল। এখন বৃষ্টি হলেই মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ঈদের নামাজ গিয়ে পড়তে হয়েছে হাঁটুসমান পানি ভেঙে গিয়ে। ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা থাকলেও প্রায় সব জায়গায়ই মানুষজন মসজিদে পড়ছেন। এবারের ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে নি। সারা দিন বৃষ্টি আর বাসায় পানি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা। সুরমা নদীও ভরা। পানি যাওয়ার জায়গা নেই আর আমাদেরও বাঁচার উপায় নেই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষ উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না খাবার, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।’
হাসপাতালে পানি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে পানি। তবে সবশেষ বুধবার হাসপাতালের মধ্যে থেকে পানি নেমে যায়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবারে পানি বাড়ার কারণে হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে নিচতলায় থাকায় ইমার্জেন্সি বিভাগের সবকিছু ওপর তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার পানি কমে গেলে তা আবার নিচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।’
মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু:
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলা করে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম। আব্দুল হালিম ওই গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপচালক ছিলেন।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ:
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্ধের এই ঘোষণা দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সভা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ জুন খুলে দেওয়া হয়।
বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী:
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটামুটি সিলেটের সব জায়গায়ই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রিপোর্টে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি। গত ২৯ মে থেকে সিলেটে ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, ৬৩১ টন টন জিআর চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ৯ লাখ করে শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইউএনওরা বণ্টন করছেন।’
লবীব আহমদ, সিলেট

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২ হাজার ৫০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার সব সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় কম মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জকিগঞ্জেও কম মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। যাদের ঘরবাড়িতে বেশি পানি উঠেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেমি. ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেমি, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৬২ সেমি., ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেমি, শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেমি. ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে। গত পাঁচ দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ডুবেছে নগরী:
মহানগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, তালতলা, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজারসহ নিম্নাঞ্চল এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে কারও হাঁটু সমান পানি আবার কারও বাসায় কোমর সমান পানি। অনেকের বাসায় পানি ওঠাতে চলে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাসাবাড়িতে উঠেছেন।
তালতলায় থাকা সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ঈদের দিন রাতে ঢুকে পড়া পানি এখনো রয়েছে স্টেশনটিতে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীতে পানি ঢুকলেই আমাদের অফিস ডুবে যায়। এখনো চার ফুট পানির নিচে রয়েছে আমাদের স্টেশন। তবুও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও ৫০ বছর বয়সী জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি হোটেলে কাজ করি। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্বামী বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি কাজ করে সংসার চালাই। ঈদের দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠেছে। এখন ঘরে গলা পানি। পরে ওই দিন ফজরের ওয়াক্তে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখন এখানে খাবারদাবার নেই।
‘যার কারণে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছি না। একটি পাঁচতলার বাসায় পরিবার নিয়ে উঠেছি। শুনেছি যতরপুরের ওই দিকে একজন ত্রাণ বিতরণ করবে, সেখানে গিয়ে এই চিড়া-মুড়ি চেয়ে আনছি। তবুও তারা দিতে চাচ্ছে না। ঘরের ডেগ-বাসন সব পানির নিচে। কিসের ঈদ করব। ঈদ করছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে গ্যাস নেই। এ কারণে রান্নাবান্নাও করতে পারছি না।’
নগরীর উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) জানান, ‘ঈদের আগের দিন রাতের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে। এখন ঘরে কোমর পানি। আমার পরিবারে আটজন সদস্য। বাসায় কোমর পানি হওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি। যার কারণে যারা নিচতলায় থাকেন, তারা সবাই-ই এই পানিতে আক্রান্ত।
আগের বারও পানি উঠছিল। এখন বৃষ্টি হলেই মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ঈদের নামাজ গিয়ে পড়তে হয়েছে হাঁটুসমান পানি ভেঙে গিয়ে। ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা থাকলেও প্রায় সব জায়গায়ই মানুষজন মসজিদে পড়ছেন। এবারের ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে নি। সারা দিন বৃষ্টি আর বাসায় পানি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা। সুরমা নদীও ভরা। পানি যাওয়ার জায়গা নেই আর আমাদেরও বাঁচার উপায় নেই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষ উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না খাবার, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।’
হাসপাতালে পানি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে পানি। তবে সবশেষ বুধবার হাসপাতালের মধ্যে থেকে পানি নেমে যায়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবারে পানি বাড়ার কারণে হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে নিচতলায় থাকায় ইমার্জেন্সি বিভাগের সবকিছু ওপর তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার পানি কমে গেলে তা আবার নিচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।’
মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু:
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলা করে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম। আব্দুল হালিম ওই গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপচালক ছিলেন।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ:
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্ধের এই ঘোষণা দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সভা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ জুন খুলে দেওয়া হয়।
বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী:
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটামুটি সিলেটের সব জায়গায়ই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রিপোর্টে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি। গত ২৯ মে থেকে সিলেটে ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, ৬৩১ টন টন জিআর চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ৯ লাখ করে শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইউএনওরা বণ্টন করছেন।’

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২ হাজার ৫০০ জন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উপজেলার সব সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সব সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আর জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলায় কম মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং জকিগঞ্জেও কম মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। যাদের ঘরবাড়িতে বেশি পানি উঠেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেমি. ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেমি, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৬২ সেমি., ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেমি, শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেমি. ও সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে। গত পাঁচ দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ডুবেছে নগরী:
মহানগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, তালতলা, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপার, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, কাজির বাজার, শেখঘাট, বেতের বাজারসহ নিম্নাঞ্চল এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এসব এলাকার মানুষের বাসাবাড়িতে কারও হাঁটু সমান পানি আবার কারও বাসায় কোমর সমান পানি। অনেকের বাসায় পানি ওঠাতে চলে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাসাবাড়িতে উঠেছেন।
তালতলায় থাকা সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ঈদের দিন রাতে ঢুকে পড়া পানি এখনো রয়েছে স্টেশনটিতে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীতে পানি ঢুকলেই আমাদের অফিস ডুবে যায়। এখনো চার ফুট পানির নিচে রয়েছে আমাদের স্টেশন। তবুও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও ৫০ বছর বয়সী জায়েদা বেগম জানান, ‘আমি হোটেলে কাজ করি। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্বামী বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি কাজ করে সংসার চালাই। ঈদের দিন রাতের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠেছে। এখন ঘরে গলা পানি। পরে ওই দিন ফজরের ওয়াক্তে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখন এখানে খাবারদাবার নেই।
‘যার কারণে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। হোটেল বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছি না। একটি পাঁচতলার বাসায় পরিবার নিয়ে উঠেছি। শুনেছি যতরপুরের ওই দিকে একজন ত্রাণ বিতরণ করবে, সেখানে গিয়ে এই চিড়া-মুড়ি চেয়ে আনছি। তবুও তারা দিতে চাচ্ছে না। ঘরের ডেগ-বাসন সব পানির নিচে। কিসের ঈদ করব। ঈদ করছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে গ্যাস নেই। এ কারণে রান্নাবান্নাও করতে পারছি না।’
নগরীর উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) জানান, ‘ঈদের আগের দিন রাতের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে। এখন ঘরে কোমর পানি। আমার পরিবারে আটজন সদস্য। বাসায় কোমর পানি হওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি। যার কারণে যারা নিচতলায় থাকেন, তারা সবাই-ই এই পানিতে আক্রান্ত।
আগের বারও পানি উঠছিল। এখন বৃষ্টি হলেই মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ঈদের নামাজ গিয়ে পড়তে হয়েছে হাঁটুসমান পানি ভেঙে গিয়ে। ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা থাকলেও প্রায় সব জায়গায়ই মানুষজন মসজিদে পড়ছেন। এবারের ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে নি। সারা দিন বৃষ্টি আর বাসায় পানি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা। সুরমা নদীও ভরা। পানি যাওয়ার জায়গা নেই আর আমাদেরও বাঁচার উপায় নেই।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। নগরীর ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে মানুষ উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না খাবার, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান।’
হাসপাতালে পানি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে পানি। তবে সবশেষ বুধবার হাসপাতালের মধ্যে থেকে পানি নেমে যায়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবারে পানি বাড়ার কারণে হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে নিচতলায় থাকায় ইমার্জেন্সি বিভাগের সবকিছু ওপর তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার পানি কমে গেলে তা আবার নিচে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো হাসপাতালের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।’
মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু:
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলা করে মাছ ধরতে গিয়ে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম। আব্দুল হালিম ওই গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে ও পেশায় পিকআপচালক ছিলেন।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ:
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্ধের এই ঘোষণা দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সভা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ জুন খুলে দেওয়া হয়।
বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী:
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটামুটি সিলেটের সব জায়গায়ই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রিপোর্টে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি। গত ২৯ মে থেকে সিলেটে ১ হাজার ৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, ৬৩১ টন টন জিআর চাল, ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ৯ লাখ করে শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইউএনওরা বণ্টন করছেন।’

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই।
৩ ঘণ্টা আগে
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগেসুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট)

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।
সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।
১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’
শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’
সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ
করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।
সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।
১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’
শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’
সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ
করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
১৯ জুন ২০২৪
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগেমো. মাসুম, টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ)

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আলু রোপণসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে পানি জমে থাকলেও তা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমি দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকে। এতে আলু, শাকসবজি ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অবনতি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং আলু চাষসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনেও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুত সমাধানের আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষকেরা।
কৃষক মো. বিপ্লব আলম বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের অনেক জমি এখনো পানিতে ভেজা রয়েছে। ফলে আলু রোপণ সম্ভব হচ্ছে না।’
টঙ্গিবাড়ী খাল রক্ষা পরিষদের সদস্য মো. অনিক শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে খালের মুখগুলো মূলত সড়ক নির্মাণ ও অবৈধ দখলের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখানে যদি অন্তত স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পানিনিষ্কাশন অনেকটা সচল হয়ে উঠবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃতীশ চন্দ্র পাল বলেন, আড়িয়ল ইউনিয়নে আবাদ অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন স্থানে খালের মুখ বন্ধ ও দখল হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ওই এলাকায় চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মুন্সিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া মমতাজকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আলু রোপণসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে পানি জমে থাকলেও তা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমি দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকে। এতে আলু, শাকসবজি ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অবনতি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং আলু চাষসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনেও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুত সমাধানের আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষকেরা।
কৃষক মো. বিপ্লব আলম বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের অনেক জমি এখনো পানিতে ভেজা রয়েছে। ফলে আলু রোপণ সম্ভব হচ্ছে না।’
টঙ্গিবাড়ী খাল রক্ষা পরিষদের সদস্য মো. অনিক শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে খালের মুখগুলো মূলত সড়ক নির্মাণ ও অবৈধ দখলের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখানে যদি অন্তত স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পানিনিষ্কাশন অনেকটা সচল হয়ে উঠবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃতীশ চন্দ্র পাল বলেন, আড়িয়ল ইউনিয়নে আবাদ অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন স্থানে খালের মুখ বন্ধ ও দখল হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ওই এলাকায় চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মুন্সিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া মমতাজকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
১৯ জুন ২০২৪
সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই।
৩ ঘণ্টা আগে
রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।
এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।
গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।
গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।
এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।
গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।
গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
১৯ জুন ২০২৪
সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই।
৩ ঘণ্টা আগে
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগেকক্সবাজার প্রতিনিধি

বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। বরাবরের মতোই অবকাশযাপনে ভ্রমণপিপাসুরা এবারও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করবেন। তবে শনিবারেই চাপ কমবে না। পর্যটকের এই ঢল আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন।
হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের মালিকেরা বলছেন, বুধবার বিকেল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। মাঝারি মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
সাগরপারের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ আছে ২৪৫টি। তাদের প্রায় সব কক্ষ শনিবার পর্যন্ত বুকিং আছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।
কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকার ৬০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল পর্যটক সমাগমে যেন কেউ থাকা-খাওয়ায় বাড়তি অর্থ আদায় না করে তার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকের আনাগোনায় তিন কিলোমিটার সৈকত মুখর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শান্ত সৈকতে কেউ গোসলে নেমেছেন, কেউ জেটস্কি করে দূর সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার চেয়ার-ছাতায় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন। গোসলে নামা বিপুল পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যটকেরা শহরের এই তিন পয়েন্টের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন।
কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।’ তাঁর মতো পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়ানোর জন্য বের হয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বাড়বে—বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। কোথাও পর্যটক হয়রানির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। বরাবরের মতোই অবকাশযাপনে ভ্রমণপিপাসুরা এবারও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করবেন। তবে শনিবারেই চাপ কমবে না। পর্যটকের এই ঢল আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন।
হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের মালিকেরা বলছেন, বুধবার বিকেল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। মাঝারি মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
সাগরপারের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ আছে ২৪৫টি। তাদের প্রায় সব কক্ষ শনিবার পর্যন্ত বুকিং আছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।
কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকার ৬০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল পর্যটক সমাগমে যেন কেউ থাকা-খাওয়ায় বাড়তি অর্থ আদায় না করে তার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকের আনাগোনায় তিন কিলোমিটার সৈকত মুখর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শান্ত সৈকতে কেউ গোসলে নেমেছেন, কেউ জেটস্কি করে দূর সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার চেয়ার-ছাতায় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন। গোসলে নামা বিপুল পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যটকেরা শহরের এই তিন পয়েন্টের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন।
কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।’ তাঁর মতো পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়ানোর জন্য বের হয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বাড়বে—বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। কোথাও পর্যটক হয়রানির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
১৯ জুন ২০২৪
সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই।
৩ ঘণ্টা আগে
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে।
৪ ঘণ্টা আগে