Ajker Patrika

ভালোবাসার সাগর দরিয়াপুর

শাকিলা ববি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫৬
ভালোবাসার সাগর দরিয়াপুর

হবিগঞ্জ শহরে থাকতাম বলে প্রতিবছর দুই ঈদের জন্য মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করতাম। ঈদে আমরা যেতাম গ্রামের বাড়ি, যা ছিল আমাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে আমাদের গ্রাম। নামটি কী সুন্দর, দরিয়াপুর! এ যেন ভালোবাসার সাগর এক!

চারপাশে সবুজ ধানখেতের মাঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। ছোটবেলায় যখন গ্রামে যেতাম, তখন বিদ্যুৎ ছিল না। তাই রাত হলেই দেখা যেত জোনাকির আলো। বাবার হাত ধরে যখন গ্রামের মেঠোপথে হাঁটতাম, তখন এই জোনাক পোকাগুলো দেখে মনে হতো, আকাশের তারা যেন নিচে নেমে মিটমিট করে জ্বলছে।

এখন বিজলিবাতির কারণে সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। গ্রামের মেঠোপথ হয়ে গেছে পিচঢালা রাস্তা। রাতের আঁধার কেটে আলো এসে গেছে বলে জোনাক পোকাও দেখা যায় না। তার পরও গাছগাছালিতে ভরপুর আমার গ্রামের সৌন্দর্যে ভাটা পড়েনি।

গ্রামটির দরিয়াপুর নাম হয় প্রায় ১৫০ বছর আগে। নামকরণ নিয়ে রয়েছে সুন্দর এক ইতিহাস। দরিয়া মানে সাগর। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করেছি, ‘আচ্ছা, এই গ্রামের জায়গায় কি আগে সাগর ছিল?’

প্রবীণ ব্যক্তিরা হেসেছেন। এই গ্রাম সৃষ্টির আগে এখানে দরিয়া ছিল বলে অনেকেই শুনেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এখানে গুইড্ডা বিল নামে বিশাল হাওর ছিল। এই হাওরের পানি উত্তাল ছিল দরিয়ার মতো। সেই থেকেই গ্রামের নাম দরিয়াপুর। বর্ষায় হাওর যখন সমুদ্রের রূপ নেয়, তখনকার কথা কল্পনায় আনলে এ কথা মেনে নিতে ইচ্ছে হয়।

এই গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষ রয়েছে। দরিয়াপুরের শাকসবজি এখন সারা জেলায় বিখ্যাত। গ্রামের বুক চিরে গিয়েছে বরাং নদী। কথিত আছে, এই নদী দিয়ে কালনী থেকে ত্রিপুরায় পালিয়েছিলেন রাজা গৌড় গোবিন্দ।

এই গ্রামের রয়েছে দুটি ভাগ। এর একটি হলো লামা দরিয়াপুর। গ্রাম সৃষ্টির পর লামা দরিয়াপুর পরিচিত ছিল দরিয়াপুর নামে। লামা মানে নিচু জায়গা। গ্রামের এই অংশট নিচু জায়গায় হওয়ায় এর নামকরণ হয় লামা দরিয়াপুর। গ্রামের যে উঁচু অংশ, সেটাকে বর্তমানে বলা হয় দরিয়াপুর। তবে দরিয়াপুরের এই অংশে একসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নাথ গোত্রের মানুষ বেশি ছিলেন। তাই এই অংশ একসময় নাথের চক নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় নাথের চকের একটি বড় অংশ ভারতের কৈলাশহরে চলে যায়। তখন নাথের চকের এই অংশ দরিয়াপুর গ্রামে সংযুক্ত হয়। তখন সংগত কারণেই নিচু অংশের নামকরণ করা হয় লামা দরিয়াপুর।

১৮৮৪ সালে স্থাপিত একটি প্রাচীন মসজিদ এখনো রয়েছে দরিয়াপুর গ্রামে। এই মসজিদটি স্থাপন করেন দরিয়াপুরের তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের দারোগা আবদুল কাদির চৌধুরী। একই সালে তিনি তাঁর শ্যালক আবদুল হেকিম চৌধুরীকে লেখাপড়া করানোর জন্য মসজিদের পাশে নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি বিদ্যালয়। যেটি এখন দরিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত।

দরিয়াপুরের রয়েছে গৌরবপূর্ণ ইতিহাস। এই গ্রামে ছিলেন, আছেন অনেক কৃতী সন্তান। যাঁরা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, পাকিস্তান সেনাবাহিনী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্বদেশি আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সে ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫): ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত