Ajker Patrika

একজনের বেশি শ্রমিক নেয় না চা-বাগান, অর্থকষ্টে বড় পরিবার

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ৩২
একজনের বেশি শ্রমিক নেয় না চা-বাগান, অর্থকষ্টে বড় পরিবার

‘পরিবারে পাঁচ-ছয়জন সদস্য। স্ত্রী বাগানে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করে। এই টাকা দিয়ে পরিবার চলে না। কয়েকটা টাকার জন্য কাজের খোঁজে প্রতিদিন কাঁধে কুড়াল নিয়ে গ্রামগঞ্জে বেরিয়ে পড়ি। কোনো দিন কাজ মিলে, কোনো দিন খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হয়।’ কথাগুলো কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা–বাগানের গবী নামের এক শ্রমিকের।

সমরায় নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘কাজের সন্ধানে দা, কুড়াল ও করাত নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কাজ খুঁজে বেড়াই। কোনো দিন ৩০০-৪০০ রুজি হয়, কোনো দিন কাজ ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হয়। কাজের জন্য প্রতিদিন ২০-২৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় কাজের সন্ধানে যেতে হয়। কাজ না পেলে অনাহারে দিন কাটাতে হয়।’

এদিকে নিজেদের এই মানবেতর জীবনযাপনের জন্য শ্রমিক নেতারা দায়ী করছেন চা–বাগানের মালিকদের। তাঁরা বলছেন, চা–বাগানের মালিকেরা নিজ প্রয়োজনে অশিক্ষার বেড়াজালে আবদ্ধ রেখেছেন চা-শ্রমিকদের। তাঁদের জীবনমান উন্নতির জন্য কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে তাঁদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি মিলছে না।

চা–শ্রমিক সুখ বলেন, চা–বাগানে একজন কাজ করলে পরিবারের অন্য সদস্যরা বেকার থাকেন। একজনের বেশি বাগানের কাজে নেওয়া হয় না। বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের জন্য যুগ যুগ ধরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। প্রতি একর জায়গা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাগানমালিকেরা দিচ্ছেন না। বাগানে কাজ না পেয়ে তাঁরা বাইরে কাজ খুঁজছেন।

বাগানের শ্রমিক সমরায় বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্য ছয়জন। এর মধ্যে আমার স্ত্রী শুধু বাগানে কাজ করে। এই টাকা দিয়ে পরিবার চালানো সম্ভব না। বাগানে কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে কয়েকজনের একটি দল করে আমরা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি।’

কমলগঞ্জের কানিহাঁটি চা-বাগানের শ্রমিক গবী ও সুখ বলেন, ‘একবেলা ডাল-ভাতের জন্য কাজের সন্ধানে বের হই প্রতিদিন। গ্রামে গ্রামে সারা দিন হেঁটে কোনো দিন কাজ মিলে, আবার কখনো খালি হাতে ফিরতে হয়। কাজ না মিললে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আমরা সাধারণ শ্রমিকের তুলনায় অনেক কমে কাজ করি। একজন শ্রমিক এখন ৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে, আর আমরা ৩০০-৪০০ টাকায় কাজ করি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, চা–বাগানে বেকারত্ব দূর করার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। চা-বাগানে এখনো হাজার হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি আছে। এগুলো বেকার চা-শ্রমিক ও তাঁদের সন্তানকে চাষাবাদ করার জন্য দেওয়া হলে বেকারত্ব কিছুটা দূর হবে। তাতে তাঁদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজের জন্য ঘুরতে হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়েনি। বাগানের মালিক পক্ষ চাইলে অনেক শ্রমিকের বেকারত্ব দূর করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত