Ajker Patrika

পানিতে ভাসছে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
পানিতে ভাসছে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড পানিতে ভাসছে। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশির ভাগ বাড়িঘরের সামনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে যানবাহনসহ শহরবাসীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। 

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের থানার মোড় থেকে শায়েস্তানগর ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত পানিতে ভাসছে। সেই রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনগুলোর চাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পানি জমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে। 

গত বর্ষায় মাত্র দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরো শহর ডুবে গিয়েছিল। এবারও পরিস্থিতি বদলায়নি। পরিবেশবাদী ও সচেতন ব্যক্তিরা বহু বছর ধরে শহরের পুরোনো খোয়াই নদীসহ জলাধারগুলো ভরাট ও দখলের জন্যই বৃষ্টির পানি নির্গমনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়াকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির প্রধান কারণ বলে আসছেন। 

শহরের ব্যাক রোডের ফায়ার সার্ভিসের সামনে থেকে বেবিস্ট্যান্ড, পুরোনো পৌরসভার রাস্তা, সিনেমা হল এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কের দুই পাশের দোকানগুলোতে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। 

শহরের সার্কিট হাউস, গণপূর্ত অফিস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবন, সদর মডেল থানা, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং (পিটিআই), রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাঙ্গণ ডুবে গেছে। শহরের ঘোষপাড়া, অনন্তপুর, ফায়ার সার্ভিস, স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা, ইনাতাবাদ, শায়েস্তানগর, জঙ্গল বহুলা, নিউ মুসলিম কোয়ার্টার, শ্যামলী এলাকাগুলোর বাসাবাড়িতে পানি ঢোকার উপক্রম হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে ওই এলাকাগুলোর বাড়িঘরে পানি ঢুকবে। 

শহরের সার্কিট হাউস ও শায়েস্তানগর এলাকায় গেলে সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর ধরে তাঁরা জলাবদ্ধতা সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকার রাস্তাগুলো ডুবে যায়। বাসার সামনে পানি চলে আসে। রাস্তাগুলোতে হাঁটু পানি হওয়ায় বাড়ির মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। 

হবিগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে। এই সমস্যার জন্য হবিগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে নাগরিকের অসচেতনতা ও দায়িত্ব পালনে অনীহার জন্যও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে পৌর কর্তৃপক্ষ মনে করে। 

 হবিগঞ্জ শহরের অনেক এলাকাই বৃষ্টির পানিতে এভাবে তলিয়ে যায়হবিগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ অপচনশীল ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলা হয়। পৌরসভার ময়লার ভ্যান ও ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। শহরে চলাচলরত অটোরিকশার পেছনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের সত্যতা সরেজমিনে ঘুরে চোখে পড়ে। শহরের প্রতিটি ড্রেনের মুখ পলিথিন ও প্লাস্টিকে ভরে রয়েছে। আবর্জনা ফেলার জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে ড্রেনের সঙ্গে পাইপ যুক্ত করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, পুরোনো খোয়াই নদীসহ শহরের জলাধারগুলো দখল হয়ে ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি নির্গমন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহর ডুবে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সারা দিন শহরের পানি নিষ্কাশনে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল দেখতে পেয়েছি। নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে আমরা উঠান বৈঠকসহ যানবাহনে বিজ্ঞাপন ও মাইকিং করি। তাদের ডাস্টবিন ও পৌরসভার ভ্যানে ময়লা ফেলার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সবাই তা মানছেন না। যে কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত