Ajker Patrika

ভিক্ষুকের ঘরে দুই বস্তার টাকা গুনে যা পাওয়া গেল

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ২৫
সালেয়া বেগমের জমানো ভিক্ষার টাকা গুনছেন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সালেয়া বেগমের জমানো ভিক্ষার টাকা গুনছেন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

বয়স প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই। জীবনটা কেটেছে পথে পথে ভিক্ষা করে। কিন্তু সালেয়া বেগম কখনো নিজের জন্য কিছু করেননি। অসুস্থ হলেও চিকিৎসা নেননি, নতুন কাপড় কেনেননি। বরং ভিক্ষা করে পাওয়া টাকা-পয়সা ধীরে ধীরে জমিয়েছেন। চার দশকের বেশি সময় ধরে ভিক্ষা করে জমানো সেই টাকা দুই বস্তা ভরে গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাইওনিয়ার কেজি অ্যান্ড হাইস্কুল মাঠের পেছনে হঠাৎ হইচই। খবর ছড়িয়ে পড়ে, ভিক্ষুক সালেয়া বেগমের ঘরে পাওয়া গেছে দুই বস্তা টাকা। মুহূর্তেই সেখানে কৌতূহলী জনতার ভিড় জমে যায়। জনসমক্ষে বসে স্থানীয় কিছু লোক নগদ টাকা আর পয়সাগুলো গুনতে শুরু করেন। আজ দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থানীয়রা টাকা গুনে শেষ করেন। দুই বস্তায় মোট ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। বাকি আরও অনেক নোট ও কয়েন রয়েছে, যা ব্যবহারযোগ্য নয়।

সালেয়া বেগম থাকেন সিরাজগঞ্জ কওমি জুট মিলের এক কোণের বারান্দায়। স্বামী অনেক দিন আগে মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে শাপলা খাতুনের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও সালেয়ার কাছে দুই বস্তা টাকা জমেছে—এটা কল্পনাও করতে পারেননি মেয়ে।

শাপলা খাতুন বলেন, ‘মা একা থাকতে চাইতেন। আমরা জানতামই না এত টাকা জমিয়েছেন তিনি। এখন মা অসুস্থ। এই টাকা দিয়ে চিকিৎসাই করানো হবে।’

স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ শুভ বলছিলেন, ‘হঠাৎ দেখি রিকশায় করে বস্তা আনা হচ্ছে। পরে বুঝলাম, টাকায় ভর্তি। সালেয়া বেগম প্রায় ৪০ বছর ধরে ভিক্ষা করেন। আমরা জানতামই না তাঁর কাছে এত টাকা আছে।’

মো. রাশেদুল ইসলাম আলম নামে এক এলাকাবাসী বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই সালেয়া অসুস্থ। তাঁর কাছে কিছু টাকা আছে জেনেছিলাম, কিন্তু এতটা আছে ভাবিনি। এক টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা ও বিশ টাকার নোট পাওয়া গেছে। অনেক নোট তো নষ্ট হয়ে গেছে।’

ভিক্ষায় পাওয়া প্রতিটি টাকাই নিজের কাছে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন সালেয়া বেগম। কারও কাছে বিশ্বাস করে টাকা রাখেননি, ভরসা করেননি। হয়তো মনে করেছিলেন, একদিন এই টাকাই তাঁর আশ্রয় হবে। এলাকাবাসী দুই বস্তা টাকা দিয়ে এখন সালেয়ার চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাবেক কাউন্সিলর মো. শিপু জানান, সালেয়া বেগম এক জীবনে একটুও অপচয় করেননি। একসময়কার ভিক্ষার টাকাই জমে দাঁড়িয়েছে দুই বস্তায়। এখন এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই টাকা খরচ হবে তাঁর চিকিৎসায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...