Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে নিহত: একটা চাকরির জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন আরিফ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ২০: ৫৯
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে নিহত: একটা চাকরির জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন আরিফ

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় নিহত হন আরিফুর রহমান (২৭)। বৃদ্ধ মা-বাবার একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। অভাবের সংসারে একটা চাকরির জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার দিন জুমার নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে খাবার খাবেন বলেছিলেন। কিন্তু লাশ পাওয়া গেল হাসপাতালে। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরিফুরের বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন (৩০)।

আজ শনিবারের ঘটনায় নিহত আরিফের বাড়িতে গেলে প্রতিবেশী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় দেখা যায়। আরিফদের বাড়ি আগে মসজিদপাড়া মহল্লায় ছিল। বছরখানেক ধরে ইসলামবাগে (সরকারি মহিলা কলেজের উত্তর গেটসংলগ্ন) ভাড়াবাসায় থাকছে তাঁর পরিবার।

বাবা ফরমান আলী (৬০) পুরোনো কাপড়ের ছোট একটি ব্যবসা করেন। আরিফ কাজ নিয়েছিলেন প্রিন্টিং প্রেসে। মা আলেয়া বেগম (৫৫) বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন। 

ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে নির্বাক আলেয়া বেগম। আজ তাঁদের বাড়ি গেলে তসবি জপতে জপতে শুধু বলেন, ‘আরিফ কৃষি ডিপ্লোমা করে চাকরির চেষ্টায় ছিল। বসে না থেকে প্রিন্টিং প্রেসে কাজ নেয়। শুক্রবার সে বলে যায় নামাজ পড়ে এসে সে ভাত খাবে, আমি ভাত নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আরিফ আসল না। ওর লাশ আসল। এখন আমরা কীভাবে ভাত খাব ওকে ছেড়ে।’

আরিফের বাবা ফরমান আলী বলেন, ‘আমরা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাই। কষ্ট করে ওদের পড়ালেখাও শিখিয়েছি। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ওই ছিল আমাদের দিনযাপনের একমাত্র সঙ্গী। ওর স্বপ্নও ছিল অনেক। কিন্তু সব স্বপ্নই চুরমার হয়ে গেল। ও না থাকায় আমাদের ঘুমও হারিয়ে গেল।’ 

আরিফের বন্ধু কৌশিক বলেন, ‘সে কাজ ছাড়া সামান্য যে সময় পেত, সেটুকু আমাদের সঙ্গে কাটাত। কোনো রাজনীতিতে সে জড়িত ছিল না। ঘটনার সময় সে আমাদের সঙ্গেই তেঁতুলিয়া রোডের একপাশে আড্ডায় ছিল। হঠাৎ করেই মাথায় কী যেন লেগে, সে লুটিয়ে পড়ে। দ্রুত পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’ 

কৌশিক আরও বলেন, ‘আরিফ সবার সঙ্গেই মিশত। শুধু বলত, পরিবারকে ভালো রাখতে একটা চাকরি খুব দরকার।’ 

আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে আরিফের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জান মুক্তা ও ইসলামি সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন। 

এ ব্যাপারে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আরিফ আমাদের সংগঠনের কর্মী না হলেও একজন মুসলিম হিসেবে সে আমাদেরই লোক। তার শহীদী মৃত্যু হয়েছে।’ এ বিষয়ে মামলা বা কোনো কর্মসূচি আপাতত নেই বলেও জানান তিনি। 

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ এবং তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। এই সংগঠনের নেতৃত্বেই গতকাল বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুজন নিহত হন। একজন আরিফুর রহমান (২৭)। অপরজন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান (৪০)। নাটোরের বনপাড়া থেকে সালানা জলসায় যোগ দিতে এসেছিলেন। 

এ ব্যাপারে আজ আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সংবাদ সম্মেলনে সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘আমাদের একজন নিহত হওয়ায় আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রিসিভ কপি দেওয়া হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত