Ajker Patrika

গাইবান্ধায় কোটি টাকার লাল মরিচের হাট

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা 
আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ১৫: ৩৮
গাইবান্ধায় কোটি টাকার লাল মরিচের হাট

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং পাশের জামালপুরের বিভিন্ন চর থেকে বিক্রির জন্য নৌকা আর ঘোড়ার গাড়িতে করে সকাল থেকে মরিচ নিয়ে হাজির হন কৃষকেরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ফুলছড়ির এই মরিচের হাটে বাড়তে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যস্ততা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এখানে মরিচ কিনতে আসেন। সপ্তাহে দুই দিন বসা শুকনা মরিচের এই হাটে বেচাকেনা হয় প্রায় কোটি টাকার।

গাইবান্ধার শুকনা লাল মরিচের কদর দেশজুড়ে। মরিচ চাষে চরাঞ্চলের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় মরিচের আকার বড় ও সুন্দর হয়। অন্যান্য মাটির তুলনায় চরের মাটিতে মরিচের ফলন দুই থেকে তিন গুণ বেশি হয়। জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীবেষ্টিত চরে শত শত বিঘা জমিতে মরিচের চাষ হয়ে থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলি মাটিতে দুই-তিনটি চাষের পর মরিচের বীজ বোনা হয়। ১৫-২০ দিন পর পর দুই-তিনবার নিড়ানি দিলেই বিনা সারে ব্যাপক ফলন হয়। উৎপাদন খরচও বেশ কম। ভালো আয় হয় বলে এলাকার মানুষের কাছে এটি লাল সোনা নামে পরিচিত।

ফুলছড়ি উপজেলায় মরিচের চাষ ভালো হওয়ায় জেলার একমাত্র হাট বসে এখানে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারি গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, প্রতি বিঘা মরিচ উৎপাদনে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিঘায় কাঁচা মরিচ ৫০ মণ হলে তা রোদে শুকিয়ে ৯ থেকে ১০ মণ হয়। প্রতি মণ শুকনা মরিচ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।

মরিচ বিক্রেতা গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক জোব্বার মিয়া বলেন, ‘চরের সব মরিচ আমরা এই হাটেই বিক্রি করি।’

ফুলছড়িতে লাল মরিচের হাটএই হাটে মরিচ বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘শুধু আমি না, এই হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসেন আমার মতো চরাঞ্চলের হাজারো কৃষক।’

চরাঞ্চলের কৃষকদের ফলানো লাল সোনা কাঠফাটা রোদেও কিনতে আসছেন বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারেরা। তবে এই হাট থেকে বেশি মরিচ কেনেন নামীদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা।

বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে আসা সালেহ আকন্দ বলেন, ‘এখানকার মরিচের মান অনেক ভালো। তবে দাম একটু বেশি। ভোরে ট্রাক নিয়ে এসেছি এই হাটে মরিচ কেনার জন্য।’

জয়পুরহাট থেকে মরিচ কিনতে আসা জুয়েল মিয়া বলেন, ‘এই হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ মণ করে মরিচ কিনে নিয়ে যাই। স্থানীয় কিছু হাটে পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানিকে দিয়ে থাকি।’

ফুলছড়িতে লাল মরিচের হাটউপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের পুরোনো উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে ২০০২ সাল থেকে বসে এই মরিচের হাট। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মে মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রি হয়। তবে অন্য সময়গুলোতে বেচাবিক্রি কম হয়।

ফুলছড়ি হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন মরিচের হাট বসে। প্রতি হাটে শুধু চরাঞ্চলের শুকনা লাল মরিচ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকার পাশাপাশি মাটি উর্বর হওয়ায় চরাঞ্চলের লোকজন মরিচ চাষে ঝুঁকছে। তারা মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত