Ajker Patrika

অপহরণ-নির্যাতনের অভিযোগে বিদিশার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা, ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
অপহরণ-নির্যাতনের অভিযোগে বিদিশার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা, ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন

ঢাকার বিদিশা ফাউন্ডেশন ও এরিক বিস্ত্রোর মালিক মরহুম রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গাইবান্ধার আমলি আদালতে মামলা হয়েছে। অপহরণ, নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার নানা অভিযোগে তুলে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করেন আতিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।

এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী আতিকুর।

আতিকুর রহমান গাইবান্ধা সদর উপজেলার কিশামত মালিবাড়ির ধর্মপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এ ছাড়া তিনি বিদিশা সিদ্দিকের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী।

এর আগে ২৮ মার্চ বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা আমলি আদালতে একই অভিযোগে মামলা করেন। এতে বিদিশা সিদ্দিকের সঙ্গী মোরশেদ মঞ্জুর, মেজর আনিছ ও শাহজাদাকে অভিযুক্ত করে করেন।

আতিকুর রহমান সম্মেলনে বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে গাইবান্ধায় তিনি একটি ইটভাটা ভাড়া দেন। এরপর ২০১০ সালে বিদিশার মালিকানাধীন ঢাকার এরিক বিস্ত্রো নামীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরবর্তীতে তারই অধীনে ‘বিদিশা ফাউন্ডেশন’ এ যোগদান করেন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে বিদিশা তাঁর ইটভাটায় টাকা লগ্নি করেন। ইটভাটা চালু করার জন্য বিভিন্ন সময় তিনি বিদিশার কাছ থেকে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ধার নেন। এই টাকা ৬০ মাস মেয়াদি কিস্তিতে শোধের চুক্তি করেন। এরপর প্রতি মাসে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা কিস্তিতে মোট ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন আতিকুর। এই টাকাগুলো আতিকুর বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে বিদিশার নির্দেশে ‘বিদিশা ফাউন্ডেশনের’ কাছে ফেরত দেন।

ঢাকার বিদিশা ফাউন্ডেশন ও এরিক বিস্ত্রোর মালিক মরহুম রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকএদিকে বিদিশা সিদ্দিক চলতি বছরের ৭ মার্চ একটি প্রাইভেটকারে তাঁর কতিপয় অস্ত্রধারী লোকজনসহ নিয়ে আতিকুরের ইটভাটায় আসেন। এ সময় ভাটার কর্মচারীদের সামনে পূর্বের সম্পর্কের কারণে তাঁকে গাড়িতে উঠতে বলেন। গাড়িতে ওঠার পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাড়ির মধ্যে তাঁকে মারধর করতে করতে ঢাকার পথে রওনা দেন। এরপর বিদিশা সিদ্দিকের ঢাকার গুলশান-১ এর বাসার দ্বিতীয় তলায় তাঁকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০ থেকে ৩৫টি ১০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেন। এ ছাড়া তাঁর কাছে থাকা নগদ ১ লাখ ৮ হাজার টাকা, মোটরসাইকেলের চাবি, মানিব্যাগে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্লু-বুক, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড, তাঁর স্ত্রী ও তাঁর বাবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. এর চেকের পাতা জোরপূর্বক নেন।

সংবাদ সম্মেলনে আতিকুর আরও জানান, বিদিশা সিদ্দিক ও তাঁর লোকজন গত ৭ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিন তাঁকে আটকে রেখে প্রতিরাতে অমানুষিক নির্যাতন চালান। এরপর তাঁকে ছেড়ে দিতে তাঁর ভাই মো. আসাদুজ্জামান মিথেনকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে ঢাকার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় আটকে রেখে তাঁকেও অমানুষিক নির্যাতন চালান। পরে দুই ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁর বৃদ্ধ বাবা মোহাম্মদ আলী সরকারকে ঢাকায় ডেকে নেন। এরপর বিদিশা সিদ্দিকের বাসার দ্বিতীয় তলায় সকলকে একদিন আটকে রাখেন। সেখানে বিদিশা সিদ্দিকের লোকজন নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি নামায় আতিকুর ও তাঁর বাবার স্বাক্ষর নেন।

এরপর বিদিশা গত ১৭ মার্চ আতিকুর ও তাঁর লোকজনকে গাইবান্ধার ইটভাটায় নিয়ে আসেন। তাঁরা ইটভাটার অফিস তালাবদ্ধ করেন এবং শাহজাদা নামে এক ব্যক্তিকে ইটভাটার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। ইটভাটার যাবতীয় কাগজপত্র, রশিদ, মেমো, অফিসে থাকা বেশ কিছু চেকের পাতা ও বিদিশাকে পরিশোধ করা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার রিসিভ কপিগুলোও তাঁরা নিয়ে নেন। পরবর্তীতে আতিকুরের ব্যবহৃত ইয়ামাহা মোটরসাইকেলটি শাহজাদার মাধ্যমে গাইবান্ধা থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিদিশার নির্দেশে শাহজাদা জোরপূর্বক ইটভাটা দখল করে আছেন ও ইটভাটার অনেক মালামাল বিক্রি করছেন। নিরুপায় হয়ে তিনি গাইবান্ধা সদর থানায় বিষয়টি জানালেও থানা বিষয়টি আমলে না নিলে পরে গাইবান্ধা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদিশা সিদ্দিকি মোবাইলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আতিকুর আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত