Ajker Patrika

‘চিকিৎসা বন্ধ থুইয়া ধর্মঘট করলে রোগী বাঁচপে কেমন করি’

  • বুধবার ও বৃহস্পতিবারও চলবে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি।
  • দাবি আদায় না হলে রোববার থেকে কলেজ ও হাসপাতাল কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা।
  • ইনডোর-আউটডোরে প্রায় পাঁচ হাজার রোগীর দুর্ভোগ।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
রংপুর মেডিকেল কলেজের সদ্য পদায়ন পাওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগ দাবিতে আজ মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকেরা। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে উপচে পড়া ভিড় হয়। দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুর মেডিকেল কলেজের সদ্য পদায়ন পাওয়া অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগ দাবিতে আজ মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকেরা। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে উপচে পড়া ভিড় হয়। দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিকিৎসক দেখাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে পৌঁছান কৃষক আয়নাল হোসেন (৪৫)। বহির্বিভাগে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখাবেন। কিন্তু ভোর থেকে সকাল হয়। টিকিট নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের চেম্বারে সামনে দাঁড়ান আয়নাল। বেলা বাড়ে, রোগীর ভিড় বাড়ে। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা মেলে না। একপর্যায়ে দুপুর ১২টায় হাসপাতালের বারান্দায় বসে পড়েন।

কথা হলে আক্ষেপ করে আয়নাল হোসেন বলেন, ‘জীবন বাঁচার জন্য দেরিতে আসলে সিরিয়াল পাওয়া যায় না, ফেরত যেতে হয়। এ জন্য মেয়েটাক নিয়ে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে হাসপাতালে আসছি। সকাল ৯টায় ডাক্টার বসার কথা থাকলেও ১২টা বাজে এখনও ডাক্টার নাই। শুনছি ডাক্তারদের নাকি ধর্মঘট চলছে। চিকিৎসা বন্ধ থুইয়া ধর্মঘট করলে রোগী বাঁচপে কেমন করি।’

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর মাথায় ঘা, তাই রমেক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন তারাগঞ্জের গণি মিয়া। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে অপেক্ষা করার পরও চিকিৎসক দেখাতে পারেনি। ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ভিড়ে অসুস্থ স্ত্রী আরও অবনতি হয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

গণি মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ রাত থেকে একটু ঘুমাতে পারিনি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাব জন্য রাত থেকে অপেক্ষা করছি। এখানে এসে এখন যেটা মনে হচ্ছে, রাতে যে কষ্টটা হইছে দিনে তাঁর থেকে দ্বিগুণ কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসা বাদ দিয়া আন্দোলন করছে। ডাক্তারা যদি আন্দোলনের জন্য চিকিৎসা বন্ধ রাখে তাহলে আমাদের মতো মানুষ যাবে কোথায়? আন্দোলন, ধর্মঘটের তো আরও অনেক পথ আছে।’

তেঁতুলিয়ার আয়নাল হোসেন ও তারাগঞ্জের গণি মিয়াই নয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের আজ মঙ্গলবার দুর্ভোগে পড়তে হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী পূর্ব ঘোষিত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করলে এমন দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা।

সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতির ফলে এ সময় চিকিৎসকদের হাসপাতালের চেম্বারে বসতে দেখা যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়ে বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। বাড়তে থাকে রোগীর ভিড়।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের চেম্বার ও টিকিট কাউন্টারে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের পদত্যাগ দাবিতে সপ্তম দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বুধবারে দেওয়া কমপ্লিট শাটডাউন প্রত্যাহার করেন। অধ্যক্ষকে অপসারণ করা না হলে আগামী রোববার থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন চিকিৎসকেরা। তবে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

রমেকের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী, ছাত্র-জনতার মুখপাত্র শরিফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের অপসারণের দাবিতে আমরা যারা আন্দোলনের আছি, সবাই চিকিৎসা বান্ধব, রোগী বান্ধব। রোগীদের স্বার্থ বিবেচনা করে আমাদের শাটডাউন কর্মসূচিকে আমরা পিছিয়ে নিচ্ছি। আমরা আশা করব প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসর মাহফুজারকে অধ্যক্ষ পদ থেকে থেকে প্রত্যাহার করে এই ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে সাহায্য করবেন। তা না হলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি চলবে, রোববার কমপ্লিট শাটডাউন হবে।’

হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা ক্যাটাগরি: সারা দেশ, রংপুর
হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা ক্যাটাগরি: সারা দেশ, রংপুর

রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক হাজার শয্যার হাসপাতালটির ৪২টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এ ছাড়া বহির্বিভাগে দুই হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। কর্মবিরতি চলায় এসব রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে বারান্দায় কথা হয় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে লাল চান মিয়ার সঙ্গে। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন তিনি। আক্ষেপ করে লাল চান বলেন, ‘সকাল থেকে কোনো ডাক্তার দেখে নাই। বাবার অবস্থা খুবই খারাপ, এই বুঝি জীবন যায়। ওই জন্য ক্লিনিক নিয়া যাওছি। সরকারি হাসপাতালে থাকলে বাবার জীবন বাঁচির নেয়।’

তবে সকাল ১০টার পর থেকেই চিকিৎসকেরা রোগী দেখছেন দাবি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আ ম আখতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেন। তাদের কর্মসূচি চলায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। এ সংকট খুব দ্রুত কেটে যাবে। সকাল ১০টার পর থেকেই চিকিৎসকেরা রোগী দেখছেন।

২৯ অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমান। এরপর দিন থেকেই তাঁকে অব্যাহতির দাবিতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতা। অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অপসারণের ব্যানার টাঙিয়ে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে অসময়ের বৃষ্টি: ১০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
বৃষ্টিতে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। গতকাল সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃষ্টিতে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। গতকাল সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল—এই যে জমি, এখন শুধু পানি আর পানি।’ গতকাল শুক্রবার সকালে জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মন্ডল। রাব্বানীর চোখের কোণে পানি, পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি। একসময় যে জমি ভরে উঠেছিল মুলার গাছে, এখন সে জমি ডুবে রয়েছে বৃষ্টির পানিতে।

নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এখনো এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাক থেকে শুরু করে ঢ্যাঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ; এমনকি আমন ধান—সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৪ হাজার ২০০ জন। দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর এই সময়ে এমন বৃষ্টি আর কখনো দেখেননি তাঁরা। গতকাল সকালে পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মন্ডলের সঙ্গে। মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি এবার হইছে। এখনো পানি নামেনি। ৫ বিঘা জমি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামারও পথ নাই।’

রাব্বানী আরও বলেন, ‘সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে কঠিন হবে।’

পবা উপজেলার শিয়ালবেড়, পাইকপাড়া, দাদপুর ও মুরারীপুর গ্রামের মাঠজুড়ে একই চিত্র। যেদিকে চোখ যায়, এখনো চোখে পড়ে কেবল পানি। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে রয়েছে পানির নিচে। পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ কাঠা জমিতে শাকসবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না।’

একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ১ বিঘা জমিতে বি৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে, বাতাসে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। মাঠে দেখা গেল, কৃষকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন। সেখানে তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পর বৃষ্টি হইলে এই সর্বনাশ হতো না।’

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নান বলেন, নভেম্বরের শুরুতেই যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত নিম্নচাপের কারণে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন জমি শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল লাগাতে পারেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রণোদনা এলে তা বিতরণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম: গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটা ফের চালু

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে আবার অবৈধভাবে চালু করা মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে আবার অবৈধভাবে চালু করা মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কৃষকের ফসলের ক্ষতি, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণের কারণে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগরের বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেটি আবার চালু করেছেন মালিক। এ জন্য তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্রও নেননি। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ ইটভাটামালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আবার কার্যক্রম শুরু করা ইটভাটামালিক মো. খোরশেদ আলম। তিনি কাশিনগর ইউনিয়নের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, তিন ফসলি জমি নষ্ট এবং পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেন। সে সময় এর মালিক মো. খোরশেদ আলমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর অবৈধ ইটভাটাটি সরকারের কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে আবার চালু ও নতুন বয়লার নির্মাণ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ইটভাটাটি আবার বন্ধের দাবিতে ওই এলাকার কৃষক ও শিক্ষার্থীরা পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম। তিনি ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন পরিবেশ দূষণ করে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আবাসিক এলাকা, ফসলি জমি, ফলদ ও বনজবাগান থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এই ইটভাটার কাছেই মনিকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার, সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক, ভাটা-লাগোয়া আবাসিক ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

বসন্তপুর গ্রামের কৃষক এনামুল, ফজলু মিয়া ও হুমায়ুন কবির নামের কয়েকজনের সঙ্গে আজকের পত্রিকার এই প্রতিনিধির কথা হয়। তাঁরা বলেন, ‘ইটভাটামালিক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এই এলাকার কৃষকদের তিন ফসলি জমি দখল করে ভাটার কার্যক্রম শুরু করেন। এটি চালু করার পর বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের কৃষিজমির ফলন ভালো হচ্ছে না। পরে সরকার পরিবর্তন হলে এলাকার কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলে প্রশাসন তদন্ত করে সত্যতা পায়। পরে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে সেখানে ফসলের ফলন ভালো হচ্ছিল। কিন্তু সেটি অবৈধভাবে আবারও চালু করায় আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’

বসন্তপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হানু মিয়া বলেন, ‘তিন ফসলি জমির মধ্যে এবং স্কুল, বাজার ও মাদ্রাসার পাশে অবৈধ ইটভাটাটি প্রশাসন ভেঙে দেওয়ার পরও কীভাবে চালু করেছে, আমরা জানি না। ক্ষতিকর ইটভাটাটি যেন প্রশাসন বন্ধ করে দেয়, সে জন্য অনুরোধ জানাই।’

মিজানুর রহমান নামের ওই এলাকার এক শিক্ষক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন সরেজমিনে এসে তদন্ত করেছিল। মা ব্রিকস ইটভাটাটি আবারও চালু করায় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ এই ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে ইটভাটার মালিক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ইটভাটাটি চালু করেছি।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নে গুঁড়িয়ে দেওয়া মা ইটভাটাটি আবার চালু করার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেটি অবৈধভাবে চালু করলে আবারও আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চৌদ্দগ্রামের ইউএনও মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দ্রুত অবৈধ ইটভাটাটি পরিদর্শন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: ৩ চাকার যানে বাড়ছে দুর্ঘটনা

  • জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কুমিল্লা অংশে ৪৬৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৪, আহত ৫০৯ জন
  • একই সময়ে কুমিল্লা অঞ্চলে ৮৪২টি দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৫, আহত ১,২১০ জন
  • কুমিল্লা অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার প্রায় দ্বিগুণ
দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এই সড়কে বাধাহীনভাবে চলাচল করছে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন। সম্প্রতি কুমিল্লা মহানগরের পদুয়ার বাজার-কোটবাড়ী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এই সড়কে বাধাহীনভাবে চলাচল করছে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন। সম্প্রতি কুমিল্লা মহানগরের পদুয়ার বাজার-কোটবাড়ী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের যোগাযোগব্যবস্থার প্রধান লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে তিন চাকার যানবাহনের দাপট দিন দিন বাড়ছে। মহাসড়কে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি এবং আইনের প্রয়োগ না থাকায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি।

হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে দুর্ঘটনা হয়েছে ৪৬৫টি। এতে ২৮৪ জন নিহত এবং আহত হয়েছে অন্তত ৫০৯ জন। একই সময়ে কুমিল্লা অঞ্চলে ৮৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৫ এবং আহত ১ হাজার ২১০ জন।

কুমিল্লা অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর ১২ মাসে দুর্ঘটনা ছিল ৬৩০টি; নিহত ৫২২ এবং আহত ৭৮৪ জন।

মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া, চান্দিনা, সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রাম, বারইয়ারহাটসহ অন্তত ১৪টি বড় হাটবাজার রয়েছে। এসব হাটবাজারে প্রতিদিন পণ্য আনা-নেওয়ার সময় থ্রি-হুইলার এবং ছোট যানবাহন মহাসড়কে উঠে পড়ে, তাতে জট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে।

এ ছাড়া কুমিল্লা অঞ্চলের মধ্যে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রায় ৬২ কিলোমিটারজুড়ে খানাখন্দে ভরা সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়েছে। সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আদনান ইবনে আলম বলেন, বন্যা ও বর্ষণে দেড় শতাধিক কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে রয়েছে ৮৪টি বিপজ্জনক ইউটার্ন, যেখানে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। গত ২২ আগস্ট পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় একটি লরি উল্টে চাপা পড়ে নিহত হন একই পরিবারের চারজন।

কুমিল্লা মহানগরের পদুয়ার বাজার-কোটবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লা মহানগরের পদুয়ার বাজার-কোটবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী এশিয়া ট্রান্সপোর্ট বাসের চালক হাসান মিয়া বলেন, ‘মহাসড়কে অবাধে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার চলছে। এগুলোর জন্য আমরা গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। দুর্ঘটনা ঘটলে দায় চাপানো হয় আমাদের ওপর, অথচ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’

গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘রাতে এসব যানবাহনের লাইট থাকে না, উল্টো পথে চলে, শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। একটি দুর্ঘটনায় তিন-চারজন করে প্রাণ হারায়।’

এদিকে দুর্ঘটনা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কের প্রায় দেড় হাজার সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও অধিকাংশ অচল। গত বছরের জুলাই বিপ্লবে অনেক ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ক্যামেরাগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর না হওয়ায় পূর্ণ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। তবে আইন মানা এবং জনসচেতনতা ছাড়া কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, ‘সড়কে বৈধ যানবাহনের প্রায় ২০ গুণ অবৈধ যান চলছে। এ কারণে ঘটছে প্রায় ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা। কেননা অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, থ্রি-হুইলারের অনুপ্রবেশের পাশাপাশি রয়েছে অবৈধ স্থাপনা, সচেতনতার অভাবও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।’

কবির আহমেদ জানান, দেশে নিবন্ধিত যান্ত্রিক যানবাহন ৬২ লাখ হলেও লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক মাত্র ২৯ লাখ; অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক যানবাহন চালাচ্ছেন লাইসেন্সবিহীন চালকেরা।

হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর আলম খান বলেন, ‘সীমিত জনবল ও সরঞ্জাম নিয়ে আমরা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি।’

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি শাহ আলমগীর খান বলেন, প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি, রাজনৈতিক প্রভাব, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির কারণে পরিবহন খাত দীর্ঘদিন ধরে বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত। লাইসেন্স, ফিটনেস, পারমিট-সংক্রান্ত আইন প্রয়োগে যাঁদের দায়িত্ব, অনেক সময় তাঁরাই সুবিধাভোগী হয়ে যান। ফলে বিশৃঙ্খলা থেকে যায়, আর দুর্ঘটনা বাড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংসদ নির্বাচন: নোয়াখালীতে বিএনপির ৪ প্রবীণের সঙ্গে ২ নবীন

  • নোয়াখালী ১-৪ পর্যন্ত আগের প্রার্থীদের বহাল রেখেছে বিএনপি
  • সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নেমেছে জামায়াত
নোয়াখালী প্রতিনিধি
(ওপরে বাঁ থেকে) বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নুল আবদিন ফারুক, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (নিচে বাঁ থেকে) ইসহাক খন্দকার, বোরহান উদ্দিন ও আবদুল হান্নান মাসউদ।
(ওপরে বাঁ থেকে) বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নুল আবদিন ফারুক, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (নিচে বাঁ থেকে) ইসহাক খন্দকার, বোরহান উদ্দিন ও আবদুল হান্নান মাসউদ।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালীর ছয়টি আসনের সব কটিতেই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত। আলোচনায় আছেন এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব হারুন অর রশিদ আজাদ জানান, ৬টি আসনের মধ্যে ১-৪ পর্যন্ত আগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নোয়াখালী-৫ ও নোয়াখালী-৬ আসনে নতুন মুখ এসেছে। জেলা জামায়াতের প্রচার বিভাগের সদস্য মো. আবু তাহের জানান, ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন নেতা-কর্মীরা।

নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন মাহবুব উদ্দিন খোকন। জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা শুরা ও কর্মপরিষদের সদস্য ছাইফ উল্যাহ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী প্রবাসীকল্যাণ উপকমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম। ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭২২।

নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। এটিও ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। এখানে পাঁচবার বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন জয়নুল আবদিন ফারুক। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা শাখার নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ আহমেদ। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন দলটির শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান। এনসিপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৬।

নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এটি বিএনপির দখলে ছিল। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বুলু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা বোরহান উদ্দিন। ইসলামী আন্দোলন থেকে আলোচনায় আছেন জেলা উত্তরের সদস্য নূর উদ্দিন আমানতপুরি। আসনটিতে মোট ভোটার ৫ লাখ ৫ হাজার ২৫৩ জন।

নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর সম্ভাব্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন জেলা জামায়াতের আমির ইসহাক খন্দকার। ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা দক্ষিণের সহসভাপতি মাওলানা ফিরোজ আহমেদ। গণঅধিকার পরিষদ থেকে নির্বাচন করতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদের সদস্য আব্দুস জাহের। আসনটিতে মোট ভোটার ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭১৬ জন।

নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট-সদর আংশিক) আসনটি একসময় হেভিওয়েট নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দখলে ছিল। এবার সেখানে নতুন মুখ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে আলোচনায় আছেন কবিরহাট উপজেলার সভাপতি মাওলানা আবু তাহের। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৫৯ জন।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে বিএনপির নতুন মুখ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে) মাহবুবের রহমান শামিম। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী শাহবাগ থানা পশ্চিমের আমির শাহ মাহফুজুল হক। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৩।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত