Ajker Patrika

চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ‘খুদে ডাক্তার’

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২২, ১৬: ২১
চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ‘খুদে ডাক্তার’

পরনে চিকিৎসকের পোশাক, পাশেই রাখা হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা-ওজন-উচ্চতা মাপার যন্ত্র। চোখ পরীক্ষার জন্য হাতে আই চার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন খুদে শিক্ষার্থী। কারও বয়স ৮ আবার কারও বয়স ১২ বছর। প্রথম দেখাতে যে কেউ তাদের কার্যক্রম দেখে অবাক হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এসব শিক্ষার্থীকে বলা হয় খুদে ডাক্তার। শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সহপাঠীদের দিচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

বগুড়ার শিবগঞ্জের গণেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য এটি। ওই বিদ্যালয়ের মেধাবী ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত হয়েছে খুদে ডাক্তার টিম। প্রতি বছর দুবার সহপাঠীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল, কৃমির ওষুধ খাওয়ানো, স্বাস্থ্য দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেয় খুদে চিকিৎসকের এই টিম।

খুদে ডাক্তাররা অন্য শিক্ষার্থীদের নাম লিখে তার ওজন, শরীরের তাপমাত্রা ও উচ্চতা মাপছেজানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ২০১১ সাল থেকে দেশব্যাপী শুরু করে ‘খুদে ডাক্তার’ কর্মসূচি। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতি ক্লাস থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বাছাই করে একটি দল গঠন করা হয়। তারাই ‘খুদে ডাক্তার’ নামে পরিচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই উদ্যোগের কারণে খুদে শিক্ষার্থীদের মনে ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বোনা হচ্ছে।

সরেজমিন গণেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। আর খুদে ডাক্তারের টিমের সদস্যরা একজন করে ডাকছে। এরপর শিক্ষার্থীর নাম লিখে তার ওজন, শরীরের তাপমাত্রা ও উচ্চতা মাপছে। পাশে দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক।

এ সময় কথা হয় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া খুদে ডাক্তার সোহাদা আক্তারের সঙ্গে। সে বলে, ‘ডাক্তারের পোশাক পরে যখন এসব কাজ করি, তখন নিজেকে সত্যিকারের ডাক্তার মনে হয়। আমি বড় হয়ে একজন আদর্শ ডাক্তার হতে চাই।’

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া খুদে ডাক্তার কেয়া আক্তার বলে, ‘এই টিমে যোগ দেওয়ার পর আমি আগের থেকে আরও বেশি স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছি। শিক্ষকগণও আমাদের অনেক উৎসাহ দিচ্ছেন।’

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে আমাদের স্কুলে খুদে ডাক্তার কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। চলবে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সব কর্মসূচিতে আমাদের খুদে ডাক্তাররা অংশ নেয়। আমরাও নিবিড়ভাবে তাদের কার্যক্রম তদারক করি। এই কার্যক্রম নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।’

২০১১ সাল থেকে দেশব্যাপী শুরু করে ‘খুদে ডাক্তার’ কর্মসূচিউপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, খুদে ডাক্তারের টিম সব শিক্ষার্থীর ওজন ও উচ্চতা মেপে প্রতিবেদন খাতায় লিপিবদ্ধ করে। মাঝে মাঝে তারা দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তিও পরীক্ষা করছে। এরপর ওই তালিকা একজন শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করেন। যেসব শিক্ষার্থীর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হয়। পরে তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম সারওয়ার জাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে উপজেলায় ১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যেখানে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়েই খুদে ডাক্তার কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচি সরকারের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন স্বাস্থ্যসচেতন হচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনের মনমানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। অন্যদিকে, খুদে ডাক্তার টিমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা তৈরি হচ্ছে। এতে তারা পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত