Ajker Patrika

পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ

রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে পরীক্ষার হল থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

আজ রোববার বিকেলে পরীক্ষা দিতে এলে তাঁকে মারধর করেন ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় স্লোগান দিতে থাকেন জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। 
 
জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। তিনি রাজশাহী কলেজের ছাত্রী। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। 

রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা দিতে এসেছিল। পরীক্ষা চলাকালেই একদল শিক্ষার্থী তাঁর কাছে যান এবং বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামি পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। ওই শিক্ষার্থীরা তাঁকে একটি মামলার এজাহার দেখান, যেখানে আসামি হিসেবে পিয়ার নাম রয়েছে। এটি দেখার পর অধ্যক্ষ পুলিশে ফোন করতে চান। তবে ওই শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা নিজেরাই পুলিশ ডেকেছেন। 

অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা চলা পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষা করে। পরীক্ষা শেষ হলে তারা ভেতরে ঢোকে। এরপর সেনাবাহিনীর সহায়তায় নারী পুলিশ সদস্যরা পিয়াকে ধরে নিয়ে যান।’ 

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেত্রী পিয়াকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য পরীক্ষার্থীরা বসে আছেন। সেখানেই পিয়াকে চড় মারছেন এক নারী। পিয়া জানতে চাইছেন, ‘আমার অপরাধ কী?’ 

একপর্যায়ে পরীক্ষার হলেই অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে যান পিয়া। কিছুক্ষণ পর পুলিশ যখন পিয়াকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের করে গাড়িতে তুলছিল, তখন তিনি নানা স্লোগান দেন। তখন মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক নাজরিন আক্তার বীথি তাঁর মুখ চেপে ধরেন। চুল ধরে টানাটানি করেন। নাজরিন আক্তার বীথির সঙ্গে শিউলী নামের আরেক মহিলা দল নেত্রীকে ভিডিওতে দেখা গেছে। 

মারধরের পর জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়াএ ছাড়া ভিডিওতে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর আহমেদ সুইটকে দেখা গেছে। পিয়াকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের গাড়িটি কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় অনেকেই ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। 

পিয়াকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক নাজরিন আক্তার বীথি বলেন, ‘এই পিয়া শিশু পাচারকারী, মাদক ব্যবসায়ী। এর সিন্ডিকেটের শেষ নেই। যত খারাপ মেয়ে, সব তার বান্ধবী। কিশোর গ্যাংয়ের লিডার সে। সে মেয়ে মানুষ হয়ে নিজে গুলি করেছে।’ 

শিউলী বলেন, ‘আমরা ৪ তারিখের মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। সে গুলি করেছে। এই পিয়া মাদক ব্যবসায়ী। তার মদদে মহিলা দল থেকে ছাত্রদল থেকে—সবাইকে সে নির্যাতন করেছে। আমাদের পরীক্ষা দিতে দেয়নি। রাতে ঘুমাতে দেয়নি। আমরা তার কঠিনতম শাস্তি চাই।’ 

জানতে চাইলে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। কলেজ থেকে আনার পরই তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত