Ajker Patrika

মেয়াদ শেষ, অনিশ্চিত ৬ প্রকল্প

  • এক অর্থবছরেই এলজিইডির ৬ প্রকল্প বাগিয়ে নেন ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা।
  • ৬ প্রকল্পের ৫টিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
  • ৫টির মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি, অন্যটি অসমাপ্ত।
মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
চৌদ্দগ্রামের নানকরা-দুর্গাপুর সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
চৌদ্দগ্রামের নানকরা-দুর্গাপুর সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারের ছয়টি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগের নেতা অলি আহাম্মেদ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এসব প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটিতে বরাদ্দ দেয় ১০ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু প্রকল্পগুলোর পাঁচটির মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি। অন্যটির কাজ শুরু হলেও তা এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, অলি আহাম্মেদের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি ফাতেমা ট্রেডার্স, অন্যটি রাজিয়া এন্টারপ্রাইজ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অলি আহাম্মেদকে এক অর্থবছরে ছয়টি প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যদিও কাজ না করায় কোনো প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অলি আহাম্মেদ চৌদ্দগ্রামের প্রভাবশালী ঠিকাদারদের একজন। তিনি উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামের শামছুল হকের ছেলে। অলি আহাম্মেদ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। একই সঙ্গে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মুজিবুল হকের সঙ্গে সখ্য এবং আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে ১৫ বছরে এলজিইডির ৯৪টি সড়কের কাজ পান। এ ছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২৩টি স্কুল ও ১৫টি মাদ্রাসার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছেন অলি।

এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অলির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অলি আহাম্মেদ একসময় স্থানীয় খিরনশাল বাজারে টং দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর মুন্সিরহাট বাজারে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুল হক নির্বাচিত হলে অলি আহাম্মেদ তাঁর আস্থা অর্জন করেন। যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এরপর দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করেন অলি।

যদিও অলি আহাম্মেদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রভাব বিস্তার করে প্রকল্প বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে আমি কাজ বাগিয়ে নিইনি। দরপত্রের প্রক্রিয়া মেনেই আমি বিগত দিনে কাজ করেছি।’

চৌদ্দগ্রাম এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা বরাদ্দে উপজেলার নানকরা-দুর্গাপুর সড়কটির ৫ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ পায় ফাতেমা ট্রেডার্স। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর কাজ শুরু করে ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে শেষ করার কথা থাকলেও কাজ শুরু হয়নি। একই অর্থবছরে মিয়া বাজার বালিমুহুরীর ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পান অলি আহাম্মেদ। এর ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি। একই অর্থবছরে বাহেরগড়া-শুভপুরের সড়কটি সংস্কারে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো কাজ করা হয়নি।

এ ছাড়া ওই অর্থবছরে ঘোলপাশা ইউনিয়নের ৮ দশমিক ১১ মিটার বাবুর্চি বাজার সড়কটি সংস্কারে ৭৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় অলি আহাম্মেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ থাকলেও খোঁড়াখুঁড়ি করে রেখে দেওয়া হয়েছে। উজিরপুর ইউনিয়নের আশ্রাফপুর-কোমারডোগা সড়কটির ১ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ পান অলি। সড়কটির কাজ এখনো শুরু হয়নি। মিশ্বারনী বাজার-সোনাপুর সড়কের ৬৬০ মিটার সংস্কারে ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পর মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি।

ঠিকাদার অলি আহাম্মেদ বলেন, ‘আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিতের জন্য টেন্ডার বাতিলের তথ্য সঠিক নয়। বর্ষার কারণে সড়কগুলোর কাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি বন্ধ হলেই পুনরায় কাজ শুরু করব।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু এবং শেষ করার জন্য অলি আহাম্মেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, অলির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অলির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু কীভাবে যেন প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে চিঠি আসে। আমি নতুন করে এই কাজগুলোর অনুমোদন দিইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মহিলা মাদ্রাসার ৭ শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাওয়া কাপড় আনতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে একটি মহিলা মাদ্রাসার সাত শিক্ষার্থী ও একজন আয়া। জানালা দিয়ে বিদ্যুতের লাইনে স্পর্শ লেগে তারা আহত হয়। আহত আটজনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ভাদুঘর এলাকায় দারুন নাজাত মহিলা মাদ্রাসায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার চারতলার ছাদ থেকে একটি কাপড় বাইরে থাকা বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে গিয়েছিল। কাপড়টি আনার জন্য মাদ্রাসার আয়ার দায়িত্বে থাকা আলেয়া (৩০) জানালা দিয়ে একটি স্টিলের লম্বা পাইপ ব্যবহার করেন। পাইপটি বিদ্যুতের তারে লাগার সঙ্গে সঙ্গেই শক লেগে আলেয়ার শরীরে বিদ্যুতায়িত হয়। বিদ্যুতের তার থেকে সৃষ্ট আগুন বাষ্পীয় হয়ে দ্রুত রুমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাছাকাছি থাকা ছাত্রীদের শরীরে লাগে।

আহত শিক্ষার্থীরা হলো নবীনগর উপজেলার তালগাটি গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে নুসরাত (১০), সিরাজগঞ্জ জেলার আবু সাইদের মেয়ে সাদিয়া খাতুন (৬), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের মজনু মিয়ার মেয়ে রওজা আক্তার (১২), ভাদুঘর গ্রামের কবির হোসেনের মেয়ে নুসরাত (১০), একই এলাকার কাবির মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (৮), কসবা উপজেলার শিমরাইল গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে উম্মে তাইসান (০৫) এবং মাদ্রাসার আয়ার দায়িত্বে থাকা ভাদুঘর এলাকার তুফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী আলেয়া (৩০)।

দারুন নাজাত মহিলা মাদ্রাসার কারি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আহত শিক্ষার্থীদের সদর হাসপাতালের নিয়ে এসেছি। ছয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠাচ্ছি। বাকি দুজনকেও ঢাকা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স হাসিম খান বলেন, ‘মাদ্রাসার আট ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। তারা সবাই বার্নের পেশেন্ট। এর মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর দুজন সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।

এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘খবর নিচ্ছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ বিএনপি নেতার ভাই-ভাতিজা আটক

গাজীপুর প্রতিনিধি
বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ আটক বাবা-ছেলে। ছবি: সংগৃহীত
বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ আটক বাবা-ছেলে। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন নাওজোর এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ বাবা-ছেলেকে আটক করা হয়েছে। আটক মো. তসলিম সিরাজ (৫৪) নাওজোর এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। অপরজন তাঁর ছেলে মো. মুশফিক তসলিম (২৭)। তাঁরা দুজনই গাজীপুর মহানগর বিএনপির বাসন থানার সভাপতি তানভীর সিরাজের ভাই ও ভাতিজা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর সেনাক্যাম্প (১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি) থেকে পাঠানো এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

সূত্র জানায়, বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টা পর্যন্ত গাজীপুর সেনাক্যাম্পের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী বাসন থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নাওজোর এলাকায় মো. তসলিম সিরাজের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ মো. তসলিম সিরাজ (৫৪) ও তাঁর ছেলে মো. মুশফিক তসলিমকে (২৭) আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৮টি বড় ছোরা, ১৯টি ছোট ছোরা, ৫টি বড় চাপাতি, ৫টি ছোট চাপাতি, ২টি হাঁসুয়া, ৫টি রামদা, ১টি সোজা রামদা এবং ২৭টি নকল ডায়মন্ড (অস্ত্র ধার করার উপকরণ)। এ ছাড়াও প্রায় ৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।

অভিযান শেষে যৌথ বাহিনী আটক দুজনকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় হস্তান্তর করে।

জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, গাঁজাসহ বাবা-ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ওসির হুঁশিয়ারি: মাদক ছাড়বে, না হয় এলাকা ছাড়বে

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
মাদকবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন ওসি আবুল কালাম ভূঞা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদকবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন ওসি আবুল কালাম ভূঞা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম ভূঞা মাদক কারবারিদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মাদক কারবারিরা মাদক ছাড়বে, তা না হলে এলাকা ছাড়বে। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার প্রতিমা বংকী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠে এলাকাবাসী আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। মাদক, ইভ টিজিং, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ, চুরি ও সন্ত্রাসবিরোধী এই সমাবেশে তিন শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন।

সুধী সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ করে ওসি আবুল কালাম ভূঞা বলেন, ‘আমরা কি মাদকের বিরুদ্ধে সবাই আছি?’ এ সময় সমবেত জনতা হাত তুলে সম্মতি দেয়। ওসি বলেন, ‘যেহেতু আপনারা ওয়াদা দিয়েছেন, তাই আজকের পর থেকে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি। ওরা মাদক ছাড়বে, না হয় এলাকা ছাড়বে। মাদক না ছাড়লে এলাকাছাড়া করব আমরা সবাই মিলে।

সখীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাদকবিরোধী সমাবেশে অংশ নেন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সখীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাদকবিরোধী সমাবেশে অংশ নেন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কোনো অবস্থায়ই সে এলাকায় থাকবে না, কোনো মাদকসেবী এই এলাকায় থাকবে না। মাদক বিক্রির সময় পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে রাখবেন, খবর দেবেন, আমি এসে ধরে নিয়ে যাব।’

ওসি আরও বলেন, ‘মাদক ও চুরি ঠেকাতে সামাজিক আন্দোলন খুবই প্রয়োজন। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে দেখবেন এক সপ্তাহের মধ্যে সমাজের আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকেই পুলিশের সীমাবদ্ধতা জানে না। যার যেটা প্রয়োজন সবকিছু পুলিশের কাছে আশা করে। কিন্তু পুলিশের যে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে, এটা জানে না। এরপরও বলে যাচ্ছি, যেকোনো সমস্যায় যাবেন, আমার যতটুকু সক্ষমতা আছে, সর্বোচ্চটা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব।’

সুধী সমাবেশে সখীপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম এ গফুরের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উদয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া, স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি সোহরাব আলী, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, লাল মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য জিন্নাত আলী, আলতাব হোসেন, বিএনপি নেতা সামছুল আলম, সালমান কবির, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সানি, যুব আন্দোলন নেতা আবু রায়হান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারিবারিক কলহ: শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া সেই যুবকের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া যুবক রায়হান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া যুবক রায়হান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কলহ ও পরকীয়ায় আসক্তির জেরে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া যুবক মো. রায়হান মিয়া (২৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভোরের দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকলেছুর রহমান মণ্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত মো. রায়হান মিয়া উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মো. চান মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রী আদুরী বেগম ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার করতেন।

রায়হান মিয়া দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া ও অন্য নারীর প্রতি আসক্ত ছিলেন। দুই মাস আগে স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন। শাশুড়ির চাপে স্ত্রী আদুরী নিজের গয়না বিক্রি করে সে সময় স্বামীকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপর রায়হান আরেক নারীকে বিয়ে করার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন। স্ত্রী রাজি না হলে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় এবং রায়হান তাঁর স্ত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান।

অত্যাচার সইতে না পেরে আদুরী বেগম সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালের দিকে রায়হান মিয়ার বাবা চান মিয়া বড় শ্যালককে নিয়ে পুত্রবধূ আদুরীকে আনতে শ্বশুরবাড়ি যান। প্রথমে আদুরী আসতে না চাইলেও শ্বশুরের জোরালো চাপে তিনি শর্ত সাপেক্ষে রাজি হন যে রায়হান তাঁকে মারধর করতে পারবেন না এবং জুয়া খেলা বন্ধ করতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে মো. রায়হান মিয়া মোবাইল ফোনে বাবাকে হুমকি দেন এবং স্ত্রীকে আনতে নিষেধ করেন। এরপরই ক্ষোভে বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন জ্বলতে থাকলে তিনি দ্রুত পুকুরের পানিতে লাফ দেন।

গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় রায়হানকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মারা যান।

মো. রায়হান মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা হয় তাঁর দুলাভাই মো. সবুজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি কথা বলতে রাজি হননি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। পরে দেখা হয় রায়হান মিয়ার কলেজপড়ুয়া বোনের সঙ্গে। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে চটে যান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত