Ajker Patrika

মেয়াদ শেষ, অনিশ্চিত ৬ প্রকল্প

  • এক অর্থবছরেই এলজিইডির ৬ প্রকল্প বাগিয়ে নেন ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা।
  • ৬ প্রকল্পের ৫টিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
  • ৫টির মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি, অন্যটি অসমাপ্ত।
মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
চৌদ্দগ্রামের নানকরা-দুর্গাপুর সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
চৌদ্দগ্রামের নানকরা-দুর্গাপুর সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারের ছয়টি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগের নেতা অলি আহাম্মেদ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এসব প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটিতে বরাদ্দ দেয় ১০ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু প্রকল্পগুলোর পাঁচটির মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি। অন্যটির কাজ শুরু হলেও তা এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, অলি আহাম্মেদের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি ফাতেমা ট্রেডার্স, অন্যটি রাজিয়া এন্টারপ্রাইজ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অলি আহাম্মেদকে এক অর্থবছরে ছয়টি প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যদিও কাজ না করায় কোনো প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অলি আহাম্মেদ চৌদ্দগ্রামের প্রভাবশালী ঠিকাদারদের একজন। তিনি উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামের শামছুল হকের ছেলে। অলি আহাম্মেদ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। একই সঙ্গে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মুজিবুল হকের সঙ্গে সখ্য এবং আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে ১৫ বছরে এলজিইডির ৯৪টি সড়কের কাজ পান। এ ছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২৩টি স্কুল ও ১৫টি মাদ্রাসার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছেন অলি।

এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অলির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অলি আহাম্মেদ একসময় স্থানীয় খিরনশাল বাজারে টং দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর মুন্সিরহাট বাজারে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুল হক নির্বাচিত হলে অলি আহাম্মেদ তাঁর আস্থা অর্জন করেন। যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এরপর দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করেন অলি।

যদিও অলি আহাম্মেদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রভাব বিস্তার করে প্রকল্প বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে আমি কাজ বাগিয়ে নিইনি। দরপত্রের প্রক্রিয়া মেনেই আমি বিগত দিনে কাজ করেছি।’

চৌদ্দগ্রাম এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা বরাদ্দে উপজেলার নানকরা-দুর্গাপুর সড়কটির ৫ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ পায় ফাতেমা ট্রেডার্স। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর কাজ শুরু করে ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে শেষ করার কথা থাকলেও কাজ শুরু হয়নি। একই অর্থবছরে মিয়া বাজার বালিমুহুরীর ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পান অলি আহাম্মেদ। এর ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি। একই অর্থবছরে বাহেরগড়া-শুভপুরের সড়কটি সংস্কারে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো কাজ করা হয়নি।

এ ছাড়া ওই অর্থবছরে ঘোলপাশা ইউনিয়নের ৮ দশমিক ১১ মিটার বাবুর্চি বাজার সড়কটি সংস্কারে ৭৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় অলি আহাম্মেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ থাকলেও খোঁড়াখুঁড়ি করে রেখে দেওয়া হয়েছে। উজিরপুর ইউনিয়নের আশ্রাফপুর-কোমারডোগা সড়কটির ১ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ পান অলি। সড়কটির কাজ এখনো শুরু হয়নি। মিশ্বারনী বাজার-সোনাপুর সড়কের ৬৬০ মিটার সংস্কারে ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পর মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি।

ঠিকাদার অলি আহাম্মেদ বলেন, ‘আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিতের জন্য টেন্ডার বাতিলের তথ্য সঠিক নয়। বর্ষার কারণে সড়কগুলোর কাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি বন্ধ হলেই পুনরায় কাজ শুরু করব।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু এবং শেষ করার জন্য অলি আহাম্মেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, অলির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অলির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু কীভাবে যেন প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে চিঠি আসে। আমি নতুন করে এই কাজগুলোর অনুমোদন দিইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত