Ajker Patrika

মানববর্জ্যে বাম্পার ফলন, রাসায়নিক ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে সফল চাষিরা

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলা ও ঝিলিম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ২০২টি ইকোসান টয়লেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলা ও ঝিলিম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ২০২টি ইকোসান টয়লেট ব্যবহার করা হচ্ছে।

মানুষের মল-মূত্র দিয়েও ফসল হয়?’—এ প্রশ্ন শুনে এখন আর অবাক হন না চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ও গোবরাতলা ইউনিয়নের কৃষকেরা। কারণ, গত এক দশক ধরে এখানকার ২০২টি পরিবার ইকোসান টয়লেটের মাধ্যমে মানববর্জ্য থেকে তৈরি জৈব সার ব্যবহার করে বেগুন, ধান, ফুলকপি, টমেটো, গম, কুমড়া, আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষে সাফল্য পেয়েছেন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে এই পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে খরচ।

২০১১ সাল থেকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোসাইটি ফর পিপলস অ্যাকশন ইন চেঞ্জ অ্যান্ড ইকুইটির (স্পেস) সহায়তায় এসব ইকো টয়লেট স্থাপন করা হয়। প্রতিটি টয়লেটের দুটি চেম্বার থেকে বছরে দেড় শ কেজি জৈব সার উৎপন্ন হয়। পাশাপাশি প্রস্রাব সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া সারের বিকল্প হিসেবে। এতে বিঘাপ্রতি ২-৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয় কৃষকের।

দক্ষিণ শহর এলাকার কৃষানি চান মুনি কিসকু বলেন, ‘বেগুন-ধানের জমিতে মানুষের মল ও প্রস্রাব ব্যবহার করি। পাঁচ লিটার পানির সঙ্গে দুই লিটার প্রস্রাব মিশিয়ে দিই। আর এক বিঘা জমিতে দেড় শ কেজি মল ব্যবহার করি। এতে ফলন ভালো হয়, খরচও কমে।’

একই এলাকার কৃষক মোহন হেমব্রম বলেন, ‘আগে রাসায়নিক সার দিয়েও এমন ভালো ফলন হতো না। এখন মানববর্জ্য থেকে তৈরি জৈব সারেই উৎপাদন বেড়েছে।’

পলশা গ্রামের নজরুল ইসলাম প্রথম এ পদ্ধতি শুরু করেন। প্রথমে মানুষের কটূক্তি সহ্য করতে হলেও পরে তাঁর ফসল দেখে আশপাশের লোকজনও এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এখন এলাকার অনেকেই আগাম বুকিং দিয়ে এই সার সংগ্রহ করছেন।

কৃষক সরল সরেন বলেন, ‘রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফলন ভালো হতো না। এখন জৈব সার দিয়ে ভালো ও বেশি ফলন পাচ্ছি।’

একেকটি ইকোসান টয়লেটের দুটি চেম্বার থেকে বছরে দেড় শ কেজি জৈব সার উৎপাদন হয়।
একেকটি ইকোসান টয়লেটের দুটি চেম্বার থেকে বছরে দেড় শ কেজি জৈব সার উৎপাদন হয়।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহজাহান আলী বলেন, ‘যেসব জমি উর্বরতা হারিয়েছিল, সেগুলো আবার ফলন দিতে শুরু করেছে। জমির পানির ধারণক্ষমতাও বেড়েছে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেই কৃষকদের সাড়া বেড়েছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশের সুপার মার্কেটগুলোতে অর্গানিক ফসলের দাম বেশি। বাংলাদেশেও এর চাষ বাড়ানো গেলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।’

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ফসল ফলানো হচ্ছে মানববর্জ্য থেকে উৎপাদিত সার ব্যবহার করে। ছবি : আজকের পত্রিকা
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ফসল ফলানো হচ্ছে মানববর্জ্য থেকে উৎপাদিত সার ব্যবহার করে। ছবি : আজকের পত্রিকা

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এফ এম আলী হায়দার বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর রাসায়নিক সার আমদানিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে। ইকো টয়লেট ব্যবহারে সেই ব্যয় কমবে, বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবু সায়েদ বলেন, ‘মানববর্জ্য থেকে উৎপাদিত সার সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এতে পানি, বায়ু ও মাটিদূষণ রোধ হয়। আর্থিকভাবেও কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

কারাগারে ১০৫ মন্ত্রী-এমপি

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ও পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত