Ajker Patrika

ভুট্টা চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ১৯
ভুট্টা চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

উত্তর জনপদের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। এতে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বল্প খরচে অধিক ফলন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, ভুট্টা চাষে দরিদ্র কৃষকেরা আর্থিকভাবে সফল হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আত্রাই উপজেলার রসুলপুর, চৌড়বাড়ী, ভবানীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠ ভুট্টাখেত। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। খেতগুলোতে পানি ও কীটনাশক দেওয়া এবং পরিচর্যায় কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কাজ করতে দেখা যায়।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লাভজনক হওয়ায় এবং স্থানীয় মাটিতে ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। অর্থাৎ রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। চলতি বছর আরও বাড়বে। মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভুট্টা চাষ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

রসুলপুর এলাকায় ভুট্টা চাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এলাকার যেসব জমিতে পূর্বে অন্যান্য ফসল চাষ করা হতো, সেই সব জমিতে এবার ভুট্টা চাষ হচ্ছে। ভুট্টার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক কম । এ ছাড়া সব সময় বাজারে ভুট্টার দামও বেশি থাকে। এ জন্য কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।’

ভুট্টাচাষি চৌড়বাড়ী গ্রামের আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এই এলাকার সিংহভাগ জমিতে আলু উৎপন্ন হয়। কিন্তু মৌসুমজুড়েই আলুর বাজারদর ওঠানামা করায় চাষিরা এবার খুব একটা লাভ করতে পারেননি। তাই এবার অনেকেই ভুট্টার চাষ করছেন। আশা করি ফলনও বাম্পার হবে। ন্যায্য দাম পেলে কষ্ট সার্থক হবে।’

একই এলাকার আরেক কৃষক জসিম মণ্ডল জানান, ভুট্টা চাষ থেকে বিক্রির আদ্যোপান্ত। ভুট্টা চার মাসের ফসল। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করতে প্রায় ২ হাজার টাকার বীজ লাগে। জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক বাবদ খরচ হয় আরও ৬ হাজার টাকা। খেতের আগাছা পরিষ্কার, জমি চষা, সার-ওষুধ দেওয়া, ভুট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রির উপযোগী করার শ্রমিক বাবদ খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষে খরচ প্রায় ১১ হাজার টাকা। আর বাজারে ভালো দাম থাকলে বিক্রি হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ অল্প সময়ে অধিক লাভ। এ জন্য ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।

আত্রাই উপজেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, এবার গত বছরের তুলনায় ভুট্টার আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। আশা করছি ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। এলাকার কৃষকেরা যাতে ভুট্টা যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারেন এবং স্বল্প খরচে উচ্চফলনশীল ভুট্টা উৎপাদন করতে পারেন এ জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘মাত্র পাঁচ বছর আগেও আত্রাইয়ে এত ভুট্টা চাষ হতো না। এখন লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত