Ajker Patrika

হাওরে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ১০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট

হোসাইন ময়নুল, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) 
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৭: ৫০
হাওরে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ১০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হাওরে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ১০০ বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। এতে পাকা ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাঙালা ইউনিয়নের বিনায়েকপুর হাওরে (লটাগাড়ি বিল) বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিলে পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে অধিকাংশ জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ধান কাটতে অধিক টাকার মজুরি দিয়েও কোনো শ্রমিককে পাওয়া যাচ্ছে না। 

বিনায়েকপুর হাওরে অন্তত ১০০ বিঘা পাকা ধান জমিতে নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। ধান চাষের উৎপাদন খরচ বেশি সে তুলনায় বাজারমূল্য অনেক কম হওয়াতে ধান কাটবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই এলাকার কৃষকেরা। এ ছাড়া বিনায়েকপুর মধ্যপাড়া থেকে হাওরে যাওয়ার এক কিলোমিটার রাস্তা বেহালের কারণে এই এলাকার কৃষকেরা পাকা ধান ঘরে নেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। এতে আবাদি কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

বিনায়েকপুর হাওরে ইউনুস আলীর ৩ বিঘা, মোতালেব মোল্লার সাড়ে ৪ বিঘা, আফসার মোল্লার ২ বিঘা, আশরাফ মোল্লার আড়াই বিঘা, আমজাদ হোসেনের ৮ বিঘা, ইউসুফ ২ বিঘা, ইয়াকুব এর ২ বিঘা, আল্লেকের ১ বিঘা, মোকসেদের ২ বিঘা পাকা ধান খেতে নষ্ট হচ্ছে। 

সরেজমিনে বিনায়েকপুর গিয়ে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এই হাওরে সব মিলিয়ে অন্তত ১০০ বিঘা জমি রয়েছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এসব ধানের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও কেউ ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না। ফলে খেতে নষ্ট হচ্ছে তাঁদের ধান। এ ছাড়া শ্রমিক মজুরি এবং উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াতে তুলনামূলকভাবে বাজারমূল্য অনেক কম থাকায় অনেকেই জমিতে ধান কাটবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

বিনায়েকপুর গ্রামের কৃষক মোতালেব মোল্লা জানান, চলতি মৌসুমে এই হাওরে তাঁর সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু হাওরে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে তাঁর ৪ বিঘা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এই ধান কাটতে অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। এ ছাড়া শ্রমিকের মজুরি এবং উৎপাদন খরচ বেশি, তুলনামূলকভাবে ধানের বাজারমূল্য অনেক কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। 

একই গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস আলী জানান, এক বিঘা খেতের ধান কাটতে ৭ হাজার টাকা মজুরি, উৎপাদন খরচ ১০ হাজার টাকা অথচ এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করা যায় ১৬ হাজার টাকায়। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ এবং শ্রমিক মজুরির চেয়ে ধানের বাজারমূল্য অনেক কম। সরকার যদি সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে তাহলে কৃষক অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। 

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন বলেন, ‘এ বছর ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ২০০ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন। ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। হাওরে বৃষ্টির কারণে কিছু জমি ডুবে গেলেও এখন আবহাওয়া ভালো। আশা করি ডুবে যাওয়া ধানগুলো কাটার উপযোগী হবে এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ ছাড়াও কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচ অনেক সাশ্রয়ী হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত