Ajker Patrika

আ.লীগ নেতার গাড়িতে ঘুরছেন রাজশাহীর বিএনপি নেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ১৬: ২০
১১ জুন গোদাগাড়ীর খেতুরী ধামের সামনে একটি কালো গাড়ি থেকে বিশ্বনাথ সরকারসহ আরও দুজনকে নামতে দেখা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনাটি ধরা পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
১১ জুন গোদাগাড়ীর খেতুরী ধামের সামনে একটি কালো গাড়ি থেকে বিশ্বনাথ সরকারসহ আরও দুজনকে নামতে দেখা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনাটি ধরা পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার আওয়ামী লীগের এক নেতার গাড়িতে ঘুরছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ১১ জুন দুপুরে তাঁকে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক সুনন্দন দাস রতনের প্রাইভেট কার থেকে নামতে দেখা গেছে।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গোদাগাড়ীর খেতুরী ধামের সামনে কালো রঙের ওই গাড়ি থেকে প্রথমে নামেন সেন্টু সরকার নামের এক ব্যক্তি। এরপর গাড়ি থেকে নামেন বিশ্বনাথ সরকার। শেষে গাড়িটি থেকে নামেন বিশ্বনাথ সরকারের ভাতিজা অলোক সরকার আলো।

সুনন্দন দাস রতন কাস্টমসের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। চাকরিজীবনে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পর তিনি এলাকার সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নজরে আসেন। দলে পদ পান। ফারুক চৌধুরী তাঁকে শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ দেব ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ট্রাস্টিও করেন। গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন রতন।

নানা অপকর্মের কারণে খেতুরী ধামের ওই ট্রাস্টি বোর্ড থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রতনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তাঁর গাড়িতে চড়েই এই ধামে যান বিএনপির নেতারা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন গাড়িচালক ইসরাইল হোসেন। তিনি জানান, গাড়িটির মালিক সুনন্দন দাস রতন। এই গাড়িতে তিনি রাজশাহী শহর থেকে তিনজনকে নিয়ে সেদিন ধামে যান। যদিও কয়েক দফা ফোন করা হলেও ধরেননি রতন। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অভিযোগ, অব্যাহতি দেওয়ার কারণে রতন এখন পুরো ট্রাস্টি বোর্ডই ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গত মার্চে তিনি একবার ধামে তালাও দিয়েছিলেন তাঁর লোকজন পাঠিয়ে। তাতে সফল না হয়ে এখন বিএনপি নেতাদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছেন। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার ট্রাস্টি বোর্ডকে জানিয়েছিলেন, ১৩ জুন এখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আসবেন। কিন্তু আসলে তাঁর আসার কথা কেউ জানে না। তাঁর নাম ভাঙিয়ে সমবেত হয়ে তাঁরা ট্রাস্টি বোর্ডই পুনর্গঠনের চেষ্টা করতেন। এর পেছনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রতন। তাই তাঁরা রতনের গাড়িতে চড়েই ধামে এসেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কথিত মিলনমেলা হয়নি।

উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে ওই মিলনমেলা করার কথা বলা হয়েছিল। সেটি না হওয়ায় গতকাল শনিবার রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। সেখানে দাবি করা হয়, আগের দিন বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এহসানুল কবির টুকু অনুষ্ঠান আয়োজনে বাগড়া দেন। তিনি সহদেব কুমার পান্না নামের এক ভক্তকে মারধর করে ধাম থেকে বের করে দেন। পরে ওই মিলনমেলা স্থগিত করা হয়।

জানতে চাইলে টুকু দাবি করেন, কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন—এ কথা শোনার পর তিনি প্রস্তুতি দেখতে ধামে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সহদেব কুমার পান্নাকে দেখতে পান। তিনি তাঁকে বিএনপির অনুষ্ঠানে থাকতে না করেছিলেন। পান্নাকে কোনো রকম মারধরের ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।

এদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছে দাবি করে আজ রোববার দুপুরে ধামেই সংবাদ সম্মেলন করে ট্রাস্টি বোর্ড। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বোর্ডের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার। এ ছাড়া সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সদস্য ট্রাস্টি শ্যামাপদ স্যানাল, গণেশ চন্দ্র ঘোষ, রামকুমার সাহা, বাবু মণ্ডল বাবু ও রাজানাথ পাল।

সহদেব কুমার পান্নাকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি দাবি করে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা দাবি করেন, ১১ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ধামে অন্তত অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর ভেতর কাউকে মারধর করা সম্ভব নয়। ধামজুড়ে থাকা সিসি ক্যামেরাতেও এমন কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য এমন কথা প্রচার করা হয়েছে। আর আগের দিন বিকেলে অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তাই অনুমতি দেওয়া যায়নি। তা ছাড়া এই অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়েরও আসার কথা ছিল না। তাঁর নাম ভাঙানো হয়েছে।

তাঁরা জানান, ট্রাস্টি বোর্ড চলে ১১৩ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে রেজিস্টার্ড এক নীতিমালা মেনে। চাইলেই বোর্ড ভেঙে দেওয়া যায় না। সুনন্দন দাস রতন তাঁর জমিতে যাওয়ার জন্য ধামের ভেতর দিয়ে রাস্তা করছিলেন। ব্যক্তিস্বার্থে এমন কাজ করার জন্য তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারপর এখন তিনি বিএনপির জেলার সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশিষ রায় মধুকে দিয়ে বোর্ড ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কারণেই বিশ্বনাথ সরকার ১১ জুন রতনের গাড়িতে চড়েই ধামে আসেন। এই গাড়ি ও গাড়ির চালক ইসরাইল হোসেনকে তাঁরা সবাই চেনেন। সেদিন দেখেছেনও।

রতনের গাড়িতে চড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘রতনকে আমি চিনিই না। তার গাড়িতে চড়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি দাবি করেন, তাঁরা ধামে শুধু একটি মিলনমেলা ও আলোচনা সভা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি।

তবে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের জন্যই ওই মিলনমেলা বলে স্বীকার করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশিষ রায় মধু। তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ড বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর গঠন করে দেওয়া। কমিটিতে যারা আছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ করে। আমরা এটা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ, হিন্দু কমিউনিটির সবাই এটা চায়। সে জন্যই মিলনমেলা ও আলোচনা সভার আয়োজন ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

  • ৫০ ফুট চওড়া করা মুগদা-মান্ডা সড়ক দখলের ফলে আবার সরু।
  • রাস্তাটির উভয় পাশ দখল করে অর্ধডজন দোকান বসেছে।
  • সংস্কারকাজে ধীরগতির কারণে সড়ক দখল হয়েছে: এলাকাবাসী।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
উচ্ছেদের পর মুগদা-মান্ডা সড়কটি ফের দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। এতে সড়কটি আগের মতোই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুগদা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উচ্ছেদের পর মুগদা-মান্ডা সড়কটি ফের দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। এতে সড়কটি আগের মতোই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুগদা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চওড়া সড়কের মাঝ পর্যন্ত একটি রেস্তোরাঁ। মোতালেব রেস্টুরেন্ট নামের ওই রেস্তোরাঁর পাশেই বাকরখানির দোকানটি যেন সড়কের গলা চেপে ধরেছে। উচ্ছেদ অভিযানের পর ৫০ ফুট চওড়া হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুগদা-মান্ডা সড়কটি দখলের ফলে আবার সরু হয়ে গেছে। এই সড়কের উভয় পাশে অর্ধডজন দোকান বসেছে। এগুলো যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনে কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় সড়কটি নতুন করে দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সড়কটির সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা।

ডিএসসিসির ৬, ৭১ ও ৭২ ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে গেছে মুগদা-মান্ডা সড়ক। সরু এই সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট হতো। জনভোগান্তি কমাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় এই সড়ককে ৫০ ফুটে প্রশস্ত করা হয়। এরপর সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা হায়দার আলী উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি-রাজউক। এরপর সড়কের সংস্কারকাজ করার কথা ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সংস্কারকাজ থামকে যায়। এই সুযোগে সড়কটির অর্ধেকের বেশি আবার দখল হয়ে গেছে। ৫০ ফুট চওড়া সড়কটি এখন অর্ধেকে ঠেকেছে।

মুগদা এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক নুরুল হক বলেন, ‘দেট্টা (দেড়) বছর ধইরা রাস্তাডা জ্বালাইতাছে। যখন মনে চায় কাম (কাজ) করে, যখন মনে চায় কাম বন্ধ রাখে। সবই এরার মনমর্জি। মর্জি হইলে করে, না হইলে করে না। কোনো নিয়মকানুন নাই।’

মুগদা বিশ্বরোড ধরে মান্ডার দিকে এগোলে দেখা যায়, মুগদা বড় মসজিদের কাছে দুই পাশ থেকেই সড়কটি দখল হয়ে গেছে। উত্তরপাশে হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মুদি ও তেলের দোকান সড়কের ওপর ছাউনি দিয়ে বারান্দা তৈরি করেছে। মসজিদ লাগোয়া দোকানগুলো এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই জায়গায় সড়কের অর্ধেক অংশ দখল হয়ে গেছে।

সড়কের ওপর ছাউনি দিয়ে

দখল করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী এন্টারপ্রাইজের মো. নাজমুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা তো বাড়ির মালিকের জায়গা, সিটি করপোরেশন থেকে তিনি কোনো টাকা পান নাই। তাই তিনি তাঁর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।’

মুগদা ওয়াপদা গলির বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মুগদা ও মান্ডা। কয়েক লাখ লোক এখানে বসবাস করে। গত সরকার এই সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি ৫০ ফুট করে দেয়। কিন্তু এখন কেউ দেখে না। সড়কটি ঠিক করতে করতেই অর্ধেক রাস্তা আবার দখল হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা হাছিবা খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কটি দখলের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি কোথাও সরকারি সড়ক বা সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আসে, আমরা তা উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই করব।’

সড়কটির সংস্কারকাজের ধীরগতির জন্য দেশের অস্থিতিশীল অবস্থাকে দায়ী করেছেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে যাঁরা কাজ করেছিলেন (সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস) তাঁদের পক্ষে যা করা সম্ভব, বর্তমান প্রশাসনের পক্ষে সেটি করা একটু কঠিন। বর্তমান প্রশাসনের সেই সক্ষমতা নেই। সরকার পতনের পর আগের ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা নানাভাবে কাজটা করার চেষ্টা করছি।’

সড়কের কোনো অংশ দখল হলে তা উদ্ধার করা হবে জানিয়ে নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমি খোঁজ নিয়ে যা যা করা যায়, তা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুনামগঞ্জে দুস্থদের কর্মসূচি: টাকায় ভিডব্লিউবির নাম বিক্রি

  • উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
  • বিভিন্ন ইউনিয়নে উপকারভোগীর জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
  • একটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কার্ড বিতরণে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জে দুস্থ নারীদের জন্য পরিচালিত ভিডব্লিউবি কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম এবং জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, চলতি মেয়াদে উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া গত মেয়াদে বিভিন্ন ইউনিয়নে উপকারভোগীর জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

মহিলা অধিদপ্তর পরিচালিত ভিডব্লিউবির উদ্দেশ্য হলো, গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এই জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দরিদ্রের বদলে সচ্ছলদের নাম যুক্ত করা হয়েছে তালিকায়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার যোগসাজশে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু লোক জড়িত—বলছেন খোদ কর্মকর্তা, ইউপি সদস্যসহ অনেকেই। তথ্যানুসন্ধানেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণে অনৈতিক অর্থ লেনেদেন-সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে বলতে শোনা যায়, ‘হ্যালো, আফাই ভাই। হেরা চারজনে দেড় হাজার কইরা দিছে না?’ অপর প্রান্ত থেকে আফাই মিয়া—‘হ্যাঁ, হ্যাঁ।’ ‘আমার টেকাডা (দেড় হাজার টাকা) দেওয়ন (দেওয়া) লাগে। নাইলে আমার নামডা বাদ যাইব। আমি গরীব মানুষ।’ পাল্টা ধমকের সুরে আফাই মিয়া বলেন, ‘আপনারা তো পণ্ডিত মানুষ। পণ্ডিতি কইরা মেম্বারের কাছে গেছিলেন... তর্ক ধইরেন না। এত দিন ফোন দিলেন না। আজকে ফোন দিছেন কিসের জন্য।’

‘ফোন দিছি টেকা দেওয়ার লাগি। আপনার বিকাশ নাম্বারটা দেইন (দেন)?’ আফাই মিয়া—‘তুলেন... পার্সোনাল।’

টাকা পাঠানোর পর—‘হ্যালো, টেকা পাঠাইছি। লাস্টে তেত্রিশ। দেখইন গেছেনি।’ আফাই মিয়া—‘আচ্ছা, ওকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানিয়েছেন, তাঁর ইউনিয়নে অধিকাংশ নামই টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে নামগুলো বিক্রি করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গণশুনানির দিন কেউ আসেনি, তাই আমার ওয়ার্ডের সব নাম বাদ পড়েছে। যোগাযোগ করলে বলা হয়, সব নাম চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আবার যে পাঁচজন টাকা দিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে গণশুনানির দিন তাদের আনা হয়েছে। তাদের কাছে আফাই মিয়ার তরফ থেকে প্রথমে ৩ হাজার দাবি করা হলেও পরে দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’

আফাই মিয়াকে টাকা প্রদানকারী আশরাফুল (ছদ্মনাম) বলেন, ‘টাকা দিলেও আমার বউয়ের (স্ত্রী) নাম বাতিল কইরা দিছে। ইউনিয়ন অফিসে গেলে তারা কইছে পরবর্তীতে নাম দিয়া দিব। আমরার গ্রামের জাকির হোসেন, আবুল হোসেন, বুলবুল, আমিরুল, আল-আমিন এই পাঁচজনে টেকা (টাকা) দিছে। হেরার নাম হইছে; কিন্তু আমার নাম নাই।’

তবে বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুজন দাস ও উদ্যোক্তা আফাই মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গণশুনানির মাধ্যমে সবকিছু যাচাই-বাছাই হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।’

সুনামগঞ্জ মহিলা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ মেয়াদে জেলার ২৩ হাজার ৬১৫ জন উপকারভোগী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৩৩, বিশ্বম্ভরপুরে ২ হাজার ২৬৩, ছাতকে ২ হাজার ১৪৫, দিরাইয়ে ২ হাজার ৭৮, ধর্মপাশায় ২ হাজার ১৬৮, দোয়ারাবাজারে ২ হাজার ২০৭, জগন্নাথপুরে ২ হাজার ৭৩, জামালগঞ্জে ২ হাজার ২১৩, শাল্লায় ২ হাজার ১৬২, শান্তিগঞ্জে ১ হাজার ৯৮৩ ও তাহিরপুরে ২ হাজার ১৯০ জন।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি ভিডব্লিউবির উপকারভোগী নির্বাচনে মতামত নেওয়া হয়নি। গণশুনানির নিয়ম রক্ষার কার্যক্রম দেখা ছাড়া কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না আমাদের। বঞ্চিত ব্যক্তিরা এ সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চায়। কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর দিতে পারি না। এর মাধ্যমে আমাদেরকে ছোট করা হয়েছে।’

গত মেয়াদে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে জানিয়ে শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সহদেব চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের ভিডব্লিউবির তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এক ইউপি সদস্য আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তিনি এখন পরিষদে নেই।’

এদিকে তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, গত মেয়াদে ৪০০ উপকারভোগী প্রতি মাসে সঞ্চয় বাবদ প্রায় ১৯ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন, সেটা ফেরত দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান সাহেব গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় সময় চেয়েছেন। তবে নতুন মেয়াদে কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেওয়া হয়নি।

সুনামগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ জে এম রেজাউল আলম অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর—এই চার উপজেলার খবর আমি জানি না। এই উপজেলাগুলোতে অনেক টাকা আত্মসাতের মৌখিক অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেও কোনো ফল পাওয়া যায় না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঞ্চয়ের টাকা উপকারভোগীর

নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে রাখার কথা। কিন্তু এগুলো কিছু কিছু ইউনিয়নে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এতে চেয়ারম্যানরা জড়িত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহী-৪ আসন: জিয়াবিরোধীরা কোণঠাসা

  • বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর উত্তপ্ত বাগমারা।
  • প্রতিপক্ষের জমি দখল, ককটেল হামলা, ঘেরে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে।
  • তদন্ত করতে বলছেন অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা। ৩ নভেম্বর দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে এ উপজেলায় রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাতেও ককটেল হামলা এবং তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জিয়ার কর্মীরা এসব ঘটাচ্ছেন। বেশি প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন এ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক কামাল হোসেনের অনুসারীরা। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর ওই রাতেই বাইগাছা গ্রামের এমরান আলী নামের এক ব্যক্তির সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে গাছ কেটে ফেলা হয়। এমরানের অভিযোগ, বিএনপির প্রার্থী ডি এম জিয়ার লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে সেদিনই থানায় তিনি একটি মামলা করেছেন।

শনিবার দিবাগত রাতে দুবিলা মধ্য দৌলতপুর বিলে অধ্যাপক কামাল হোসেনের চাচা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আব্দুস সোবহানের ইজারা নেওয়া তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এতে ৬০ বিঘার পুকুর তিনটিতে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ মারা গেছে।

গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া দিঘিতে সম্প্রতি বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয় মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া দিঘিতে সম্প্রতি বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয় মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুলও। শনিবার রাতে টুটুল ও তাঁর শ্বশুর আবদুস সামাদের বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়। টুটুলের বাড়িতে ফেলে রাখা ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। তবে তাঁর শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুস সামাদের বাড়িতে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। পুলিশ আলামত উদ্ধার করেছে। টুটুলের বাড়ি বাগমারার বুজরুককৌড় গ্রামে। আর তাঁর শ্বশুরবাড়ি শান্তিপাড়া গ্রামে।

ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এই পুকুরগুলো আগে চাষ করতেন ডি এম জিয়াউর রহমান। তিনি জমির মালিকদের ঠিকমতো টাকা দিতেন না। পরে জমির মালিক আমাকে পুকুরগুলো দেন। আমি নিয়মিত টাকা দিয়ে মাছ চাষ করছি। এখানে শতাধিক পুকুর। বেছে বেছে আমার পুকুরগুলোতে বিষ দেওয়া হয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’

যুবদল নেতা টুটুল বলেন, ‘মনোনয়ন ঘোষণার পর আমরা সবাই নিজেদের মতো কাজ করেছি। দ্বন্দ্ব-বিভেদ হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর এখন এসব ঘটনা ঘটছে। আমার শ্বশুর কোনো রাজনীতি করেন না। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়েছে। আমার বাড়িতেও ককটেল ছোড়া হয়েছে। সেটা বিস্ফোরিত হয়নি। সেগুলো আমরা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে উদ্ধার করিয়েছি।’

সরেজমিনে বাগমারা: বাইগাছা গ্রামের এমরান আলী রাজনীতি করেন না। তাঁর জমির প্রাচীর ভেঙে গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে বাইগাছা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশেই ওই জমিটি। ইটের প্রাচীর ভাঙা। আম, মেহগনি, নারিকেল ও কলাগাছগুলো কাটা।

এমরানের স্ত্রী কাজলী আক্তার বলেন, ‘বাইর হোলিই মাইরবে বলে হুমকি দিছে। আমরা তাদের শক্তির সাথে পারিচ্চি না। কেস করার কারণে হাত-পা কাইটি দিবে বলে হুমকি দিছে।’

৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে বোয়ালিয়া বিলে গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া ৫৫ বিঘা দিঘিতে বিষপ্রয়োগ করা হয়। আর বিলশনি গ্রামে পল্লি চিকিৎসক বীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দুজনেই স্থানীয় বিএনপির নেতা এবং কামাল হোসেনের পক্ষের লোক। শুক্রবার সকালে দিঘির পাড়ে পাওয়া যায় চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে। দিঘির পাড়ে দেখা যায়, বড় বড় অনেক মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানিতেও কিছু মাছ ভাসছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কামালের মঞ্চে ছিলাম, কিন্তু সব সময় বলেছি যে যিনি ধানের শীষ পাবেন, তাঁর পক্ষেই আমরা কাজ করব। কিন্তু ৩ তারিখে জিয়া মনোনয়ন পাওয়ার পর তাঁর কর্মীরা আমাকে হুমকি দেয়। রাতেই দিঘিতে বিষ দিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ মেরে ফেলে।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের এমরান আলীর সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে কেটে ফেলা হয় গাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের এমরান আলীর সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে কেটে ফেলা হয় গাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমরানের প্রাচীর ভাঙা ও গাছ কাটার ঘটনাটা প্রকাশ্যে ঘটেছিল। তাই মামলা নেওয়া হয়েছে। রোববার সকালে আব্দুস সামাদের বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। টুটুলের বাড়ির সামনেও অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার তদন্ত চলছে।’

ওসি আরও বলেন, হাবিবুর রহমান ও আব্দুস সোবহানের পুকুরগুলোতেও বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে রাতে। প্রত্যক্ষদর্শী নেই। তাই সরাসরি মামলা নেওয়া যায়নি। পুলিশ গিয়ে সরেজমিনে দেখে এসেছে। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

জানতে চাইলে ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘বাগমারায় ধানের শীষের জোয়ার চলছে। কে বলছে আমার লোক এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে? বাগমারার প্রতিটি লোকই তো আমার লোক। আসলে কারা ঘটাচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরের ৫টি আসন: জমে উঠেছে ভোটের প্রচার

  • প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটারদের কাছে ছুটছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
  • আগে থেকে তৎপর জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন।
  • বিএনপির প্রাথমিক তালিকা ঘোষণার পর প্রচারে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ০১
আ ন ম এহছানুল হক মিলন, ড. জালালউদ্দিন, শেখ ফরিদ আহমেদ, মো. হারুনুর রশিদ, মমিনুল হক, আবু নছর আসরাফী, আব্দুল মুবিন, মো. শাহজাহান মিয়া, বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ও আবুল হোসাইন।
আ ন ম এহছানুল হক মিলন, ড. জালালউদ্দিন, শেখ ফরিদ আহমেদ, মো. হারুনুর রশিদ, মমিনুল হক, আবু নছর আসরাফী, আব্দুল মুবিন, মো. শাহজাহান মিয়া, বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ও আবুল হোসাইন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁদপুরে জমে উঠেছে ভোটের প্রচার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলার পাঁচটি আসনে আগে থেকে মাঠে তৎপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। ৩ নভেম্বর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকে জোরেশোরে প্রচারে নেমেছেন দলটির প্রার্থীরা। তবে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের তেমন তোড়জোড় দেখা যায়নি।

চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ সেলিম বলেন, ‘জেলার পাঁচটি আসনে যাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরাই চূড়ান্ত প্রার্থী। নেতা-কর্মীরাও তাঁদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। বিজয় নিশ্চিত করতে আমরা শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাব।’

জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান খান বলেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা না হলে উনারাই চূড়ান্ত।

কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।

চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও তিনি এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ইসলামিক স্কলার মুহাদ্দিস আবু নছর আসরাফী। ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন মুফতি ওমর ফারুক কাসেমী। তিনি ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৩ জন।

চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালালউদ্দিন। তিনি ২০১৮ সালেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জামায়াতের মনোনয়ন পেতে পারেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুবিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মুফতি মানসুর আহমেদ সাকি। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৫১ হাজার ৯০৬ জন।

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। ২০১৮ সালেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন পেতে পারেন কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. জয়নাল আবেদীন। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আলোচনায় রয়েছেন সাংবাদিক মো. জাকির হোসেন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ৮১১ জন।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হারুনুর রশিদ। তিনি ২০০৮ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির মো. বিল্লাল হোসেন মিয়াজী। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন দলের সংখ্যালঘুবিষয়ক সম্পাদক মকবুল হোসাইন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪ জন।

চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাবেক জেলা সভাপতি প্রকৌশলী মমিনুল হক। ২০০৮ সালে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১ লাখেরও বেশি ভোট পান তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যাপক মো. আবুল হোসাইন। তিনি শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন পেতে পারেন দলের হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত